শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুয়ার খুলেছে, ফিরে এসেছে প্রাণ

18

 

বৈশ্বিক মহামারি করোনার তৃতীয় ঢেউ-এর কারণে টানা ৩১ দিন ছুটি শেষে ২২ ফেব্রæয়ারি থেকে খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনও খোলা হয় নি। ১ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলো খোলার কথা থাকলেও পবিত্র শবে মেরাজের বন্ধের কারণে এসব প্রতিষ্ঠান খুলবে ২ মার্চ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব শিক্ষার্থী করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে, শুধু তারাই সশরীরে শ্রেণিকক্ষে অংশ নিতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত ১২ বছরের কম বয়সী প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভ্রতকর হলেও সিদ্ধান্তটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব শিক্ষার্থী করোনার দুই ডোজ টিকা নেয়নি, তারা যাতে সশরীরে শ্রেণিকক্ষের ক্লাসে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে, এটি শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হবে । তবে তাদের জন্য বিকল্প শ্রেণি কার্যক্রমের পথ খোলা রাখতে হবে।
এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও গেটে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শ্রেণিকক্ষসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোথাও যাতে কোনো রকম জটলা সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করাই যথেষ্ট নয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বাসা যেখানেই অবস্থান করুক-যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনার দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাবে। জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালানার ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেগুলো বহাল থাকবে। ক্লাস রুটিনও আগের মতোই থাকবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে প্রতিদিনই ক্লাসে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তবে এসব শিক্ষার্থী সপ্তাহে ক’দিন ক্লাস করবে, সে বিষয়টি সংক্রমণের হ্রাস-বৃদ্ধি বিবেচনায় নির্ধারণ করা উচিত হবে বলে মনে করি আমরা। জানা গেছে, পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। শহরাঞ্চলের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হলেও এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসাবে প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনা এবং মাউশির নির্দেশনাগুলো প্রশংসার দাবি রাখে। গ্রামাঞ্চলের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে সমস্যাসহ আরও নানা সংকট রয়েছে। সেসব সমস্যার সমাধানে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে শিক্ষার্থীদের সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাবে। করোনার তাÐবে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, তা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। গত দুই বছরে দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকলেও পাহাড়ি এলাকা, বন্যাকবলিত এলাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু শিক্ষার্থী এ সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। তাদের সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বস্তুত, করোনার তান্ডবে শিক্ষাক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সম্মিলিতভাবে। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কোনো প্রকার শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই; শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যেহেতু ওমিক্রন অতিদ্রæত ছড়ায়, সেহেতু সবাইকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ২২ তারিখ থেকে দেশে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামের পাইলট প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এসব কর্মচাঞ্চল্য অব্যাহত রাখার স্বার্থে সর্বত্র যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা মনে করি, মহামারির সমযকাল আর বেশি থাকবেনা। আঁধার কেটে আলো একদিন ফুটবেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বদ্ধ দুয়ার খুলেছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। প্রাণের শিক্ষা নিকেতনে আর তালা ঝুলবেনা, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত থাকবে-এমনটি প্রত্যাশা সকলের।