‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’

10

সুলতানা কাজী

‘শিক্ষা ও মনুষ্যত’ প্রবন্ধ নবম-দশম শ্রেণির সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত। না, আমি পড়াতে বসিনি কোনো শিক্ষার্থীকে। তবে, আমি পড়াই এবং পড়িও। মোতাহের হোসেন চৌধুরী এ প্রবন্ধে মানুষের জীবনকে দু’তলা বাড়ির সাথে তুলনা করেছেন। নিচের তলাকে তিনি বলেছেন, জীবসত্তা আর ওপরের তলাকে বলেছেন, মানবসত্তা। আজ আমি শ্রদ্ধেয় মোতাহের হোসেন চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে বলবো, এখনকার মানুষের জীবন গঠনে নিচের তলা হলো পরিবার আর ওপরের তলা হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো। শিশু জন্মের পর সামগ্রিক কর্মকাÐ পরিবার থেকেই শেখে। সে শেখে… সামাজিক আচরণের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক শিক্ষা, সুঅভ্যাস গঠনের শিক্ষা, জ্ঞান অর্জনের শিক্ষা, ঐতিহ্য সংরক্ষণের শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের শিক্ষা। পরিবারই হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্লেটোর মতে শিক্ষা হলো, সঠিক মুহূর্তে আনন্দ ও বেদনা অনুভব করতে পারার ক্ষমতা বা শক্তি। অ্যারিস্টটলের মতে, সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরিই হলো শিক্ষা। আবার, অ্যান্ডারসন ও পার্কার শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন এভাবে, শিক্ষা হচ্ছে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সমাজ জীবনে উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে। আমি একজন সাধারণ শিক্ষক। জীবনের গল্প লিখি। আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে লেখক বানানোর সমস্ত কৃতিত্ব আপনাদের। করোনা পরবর্তী জীবন গৃষ্টিকর্তার পরম আশীর্বাদের। দীর্ঘ বন্দী জীবন ছিলো আমাদের অস্বস্তির। আবারো পৃথিবী রাঙা হলো, তা যেনো স্বপ্নই!! সব, সবই আগের মতোই চলছে। তবে, ভীষণভাবে পরিবর্তন এসেছে আমাদের কতিপয় শিক্ষার্থীর মধ্যে। পুরো দেশের চিত্র হয়তো একই। আগেও তারা ক্লাসে উপস্থিত থাকতো, টিচারদের অনুশাসন মেনে চলতো, পড়ালেখায় মনোযোগ দিতো! কিন্তু এখন পুরো চিত্র যেনো উল্টে গেলো! শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে এখন। যায় দিন ভালো, আসে দিন মন্দ… চরম সত্যি কথা!! ক্লাসে বসে অনর্গল কথা বলা, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা, সিগারেট খাওয়া( ছেলে/ মেয়ে উভয়ই), স্কুল ইউনিফর্ম পরে বাইরে ঘুরেবেড়ানো, মা-বাবার সাথে মিথ্যা বলা ইত্যাদি ইত্যাদি!!! আধুনিকতার সর্বনাশা ¯্রােতে গা ভাসানোই ফ্যাশন এখন। জীবন গঠনের প্রারম্ভিকে আমি তাই পরিবারের মুখ্য অবদানকে ভিত্তি বলছি, সংগত কারণে। পরিবার হলো মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের এক বিশ্বজনীন রূপ। শিশুকাল থেকে মানুষ যা শেখে তাই-ই লালন করে। পরিবারই তার সূতিকাগার। কিছু ছেলেমেয়েদের উচ্ছৃঙ্খলতা চরম আকারে রূপ নিয়েছে এখন। সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মেশে, কি করছে তার প্রতি চোখ কান খোলা রাখা পরিবারের দায়িত্ব। একমাত্র অভিভাবকদের সজাগ দৃষ্টিই পারে সন্তানকে কুপথ থেকে ফিরিয়ে আনতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থী একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শেখে সামগ্রিক শিক্ষা। কে কতটুকু ধারণ করে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। সিলেবাস শেষ করার পাশাপাশি শিক্ষকরা শুধু ইতিবাচক গুণাবলির প্রখর শান দেওয়ার চেষ্টা করেন। পৃথিবীর কোনো প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক শিক্ষা শেখানো হয় কিনা জানিনা! নিজেদের সন্তানদের মানসিক উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন অভিভাবকদের মানসিকতা উন্নত হবে! সন্তানদের বেশি বেশি সময় দেওয়া আমাদের দায়িত্বের মাঝে পড়ে। তারা পড়ে শেখার চেয়ে দেখে শেখে বেশি, তাই তাদের বাইরের বিনোদনও দেওয়া দরকার। সন্তানের সামনে কোনো নেতিবাচক আচরণ করা উচিত নয়, তাহলে সে নেতিবাচকতা নিয়েই বড় হবে! জীবনের নিচের তলাকে সম্পূর্ণ করে ওপরের তলায় পা রাখা জরুরি। সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়! পারিবারিক শিক্ষা হোক সহজ, সাবলীল ও ভালোবাসায় ভরপুর। অতি স্বাধীনতা বা অতি কঠোরতা কোনোটাই যেনো সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়! একটাই জীবন। জীবন হোক বর্ণিল, স্বপ্নময়।
আমাদের সন্তান যেনো পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মায়াবী ছোঁয়ায় সুসন্তান হয়ে ওঠে, সে কামনায়ই প্রতিক্ষণ!!