শিক্ষার সাথে পর্যবেক্ষণ কেন নয়!

140

শিক্ষা একটা জাতির মৌলিক অধিকার। নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার। শিক্ষা পাওয়া নাগরিকের জন্য অন্যসব বিষয়ের চেয়ে অগ্রাধিকার। শিক্ষা কোন পণ্য নয়। একটি জাতিকে আদর্শে মননে চিন্তা চেতনায় গঠন করতে হলে সর্বাগ্রে আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি শিক্ষাদীক্ষায় উন্নতি অর্জন করতে পেরেছে সে জাতি তত বেশি মাথা উঁচু করে দাড়াতে পেরেছে। সারা দুনিয়ায় শিক্ষার উন্নয়নে বিপ্লব ঘটছে। শিক্ষার উন্নয়নের সাথে নৈতিক শিক্ষায় ডেভলাপ করতে হবে। আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষায় চরিত্র সমাজ ঘটন ছাড়া কোন জাতি বেশিদিন জাতীয় সত্তা ধরে রাখতে পারেনা। শিক্ষার সাথে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগানোর শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ছাত্র সকলের মধ্যে সমন্বিত নৈতিকতা থাকতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশেই শিক্ষা কার্যক্রমকে অপরাপর ব্যবসার সাথে দেখা হয়না। শিক্ষাকে শুধুমাত্র সমাজ ও জাতির উন্নয়নে দেখা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে তার ব্যাতিক্রম দেখা যায়। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত একটা হযবরল নীতি দেখা যায়। প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক ধরনের শিক্ষা সমাজে বিদ্যমান। কিছু বাংলা আর কিছু ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অহরহ গড়ে উঠছে। অর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যাক্তি এসব ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ছাত্রছাত্রীদের মেধার কথা চিন্তা না করে কয়েক ডজন বই খাতা আর ব্যাগও বাহারী পোশাকে এসব প্রতিষ্ঠান চলতে দেখা যায়। এর বাইরে ধর্মীয় শিক্ষার আবরণে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরবী বাংলা ইংরেজী সমন্বয়ে অলিতে গলিতে দেশ ব্যাপী ছেয়ে গেছে। নানামুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাল্লা দিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো কোন অনুমোদন ছাড়াই ইচ্ছামতো বিল্ডিং ও বিল্ডিংয়ের ছাদে গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কমিটি শিক্ষক বাস্তবে কতটুকু শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে যথাযথভাবে উপযুক্ত সেটাও বিজ্ঞবিশ্লেষকদের অভিযোগ। এসব স্কুলে ভর্তি ফি খাতা কলম, বই কাগজ ইত্যাদি চড়া মূল্যে প্রতিষ্ঠান থেকেই ক্রয় করতে হয়। বড় অঙ্কের মাসিক বেতনে সেখানে পড়ানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকেরই শিক্ষা সম্পর্কিত কোন প্রশিক্ষণ হয়না।
সাধারণত স্টুডেন্টরাই বেশিরভাগ এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দিয়ে থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করলেও শিক্ষকদের নামমাত্র বেতনভাতা দেয়া হয়। বাস্তবে এসব বিদ্যালয়ে বইয়ের সাথে ক্লাসে পর্যাপ্ত অনুশীলন দেয়ার কথা থাকলেও ওই ছাত্রদের কোচিংয়ে গিয়ে বই বোঝার শিক্ষা অনুশীলন করতে হয়। যে কথা এখানে পরিস্কার করতে চাই তা হলো আমাদের জাতীয় শিক্ষার আসলে প্রকৃত চিত্রটা কি?। ও লেভেল থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত আজকের যে শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে এ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বাস্তবে ব্যক্তি পরিবার ও জাতি গঠনে কোন সুফল আসছেনা। শিক্ষার দৃশ্যমান যতই উন্নতি দেখছি বাস্তবে পরিবার ও সমাজ সেভাবে শিক্ষা থেকে আশানুরুপ ফল পাচ্ছেনা। শিক্ষার হার বাড়ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অহরহ তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সে পরিমাণ শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার উন্নয়ন হচ্ছে না। সরকারী বেসরকারী শিক্ষা কার্যক্রমে দেশের বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন স্কেল ভাতা যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমান ভাল অবস্থানে আছে। শিক্ষক সমাজের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সব সময় সরকার প্রস্তুত থাকে। তাদের জীবন মানের উন্নয়ন অভাব অভিযোগ দেখার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এত সব কিছু সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখার পরও শিক্ষার নীতি নৈতিকতা অর্জন ভুলণ্ঠিত হচ্ছে। সঠিক জ্ঞান অর্জন সমাজ উন্নয়ন হচ্ছেনা। এর জন্য মূলত কারা দায়ী সেটা আমার বলার উদ্দেশ্য নয়।
বলতে চাচ্ছি শিক্ষার অনিয়ম দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য। শিক্ষাকে যে কোন মূল্যে শৃংখলায় আনতে হবে। কারণ এটা রাষ্ট্রের জন্য একটা অপরিহার্য বিষয়। বেসরকারী ও প্রাইভেট স্কুল গুলোতে কী ধরনের শিক্ষা সিলেবাস কার্যক্রম চলবে সেটা সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে শক্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ইচ্ছামতো যেখানে সেখানে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অনুমোদনবিহীন সিলেবাস শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষার নামে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতির বাইরে কাউকে চলতে দেয়া যায়না। জাতীয় দিবস রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ছুটি বন্ধ সবকিছু এসব প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন দেখাতে হবে। স্বাধীন মানচিত্রে বসবাস করবে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে অথচ রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি মানার কোন তোয়াক্কা তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত নয়, এসব বিষয় অবশ্যই শক্তভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নজরে রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নামে রাষ্ট্র ও স্বাধীনতা বিরোধী কার্যক্রম কঠোরভাবে নজরদারী করতে হবে। হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান নামে বেনামে অথবা কোন নাম ছাড়া আবাসিক অনাবাসিক এলাকাতে গড়ে উঠছে। যান ও জনচলাচলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে অনেকগুলো বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তৈরী হয়েছে। যেখানে ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় খেলাধুলা ও বিনোদন ও আলো বাতাসের পর্যাপ্ত কোন ব্যবস্থা নেই। অনেকগুলো রাস্তা এসব স্কুলের কারণে প্রতিদিন জনচলাচলে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিল্ডিংয়ের ছাদ বা কয়েকটি রুম নিয়ে ভাড়া করা অসংখ্য প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন নিয়ম ছাড়াই বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে। মনে হয় যেন তাদের কিছু বলার এবং দেখার কেউ নেয়।
আসলে তারা কী শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত, না কী অন্যকোন মতলবের কাজ করছে। এসব বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও খতিয়ে দেখার জন্য রাষ্ট্রের একটা জেলা থানা ওয়ারী পর্যবেক্ষণ কাউন্সিল থাকা দরকার। এসব করতে হবে জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। দেশে সরকারী সবগুলো সেক্টরকে দেখার জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি দেখার জন্য বাস্তবে রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষাবোর্ড, জেলা প্রশাসনের কিছু দায়িত্ব থাকলেও সেটা সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের আওতায় কঠোরভাবে আনতে যা যা প্রয়োজন তা কিন্তু জনগণ তথা অভিভাবকগণ দেখছেনা। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম আরও চরমে। এসব বিষয় এখানে ছোট লেখায় বলা শেষ করা যাবেনা।
ইচ্ছামতো রুটিন, কøাস এবং সেমিস্টার ফি নিয়ে গলাকাটা বিশাল শিল্পবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবে সেমিস্টার ফি কী ধরনের হবে কত টাকা নিতে পারবে নেয়া দরকার তার কোন ইয়াত্তা নেই। খুশিমতো একেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং ফি নিচ্ছে। একেকজন প্রফেসর খন্ডকালীন ক্লাস নিয়ে কোচিংয়ের মতো সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছে। সরকারী বেসরকারী দুই প্রতিষ্ঠানে অনেকেই ক্লাস নিচ্ছে এমন তথ্যও জানা যায়। বলতে গেলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা এখন বিশাল বাণিজ্যে রুপ নিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে সন্তানদের পড়ালেখা করানো একটা কঠিন সময় চলছে। নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের সন্তানদের ব্যায়বহুল এসব শিক্ষার নামে নৈরাজ্য মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূল কথা হচ্ছে শিক্ষা অর্জন যেহেতু জনগণের নাগরিক মানবিক সাংবিধানিক অধিকার সেহেতু এ সেক্টরকে কোন অবস্থায় নিয়মের বাইরে ছেড়ে দেওয়া যায়না। দেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো শিক্ষার অনৈতিকতার লাগাম অবশ্যই টেনে ধরতে হবে।