শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার আওতায় আনতে হবে

19

 

ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার্থীদের গণপরিবহনে বাসভাড়া হাফ নেয়ার সিদ্ধান্ত করেছে বাস মালিক সমিতি। তাদের বক্তব্য ঢাকার বাইরে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে না। ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবের বক্তব্যে দেশের অন্যান্য স্থানের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীর অবস্থা এক ও অভিন্ন। স্বাভাবিকভাবে ঢাকায় দেশের অপেক্ষাকৃত বিত্তশালীদের সন্তানেরা লেখাপড়া করে থাকে। বিত্তশালী না হলে ঢাকায় থেকে শিক্ষা জীবন অতিবাহিত করা সম্ভব নয়। ঢাকার অবস্থানের যাপনব্যয় দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরের চেয়ে অনেক বেশি। শুধুমাত্র ঢাকা শিক্ষার্থীদের বাস ভাড়া অর্ধেক নেয়ার সিদ্ধান্ত তেলা মাথায় তেল দেয়ার মতো। গণপরিবহন মালিক সমিতি ঢাকা ছাড়াও সকল বিভাগ এবং জেলায় রয়েছে। ঢাকার গণপরিবহন মালিক সমিতি শিক্ষার্থীদের নিকট হতে হাফ বাসভাড়া নেয়ার সিদ্ধান্ত করতে পারলে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বাস মালিক সমিতি তা পারবে না কেন -এ প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। গণপরিবহনে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট হতে বাস ভাড়া অর্ধেক নেয়ার রেওয়াজ নতুন কোন বিষয় নয়।
ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত দেশে শিক্ষার্থীদের নিকট হতে গাড়ি ভাড়া অর্ধেক নেয়া হতো। তবে শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হতো। আমরা যারা নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রামের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, তখন গণপরিবহন আমাদের নিকট হতে হাফ ভাড়া নিয়ে থাকতো। কোন শিক্ষার্থী সম্পর্কে বাস শ্রমিকদের সন্দেহ জাগলে তারা পরিচয়পত্র চাইতো। আমরা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দিনে এবং রাতে বাস ভাড়া হাফ দিতাম। এ নিয়ম ধীরে ধীরে বাস মালিক-শ্রমিকদের কারসাজিতে বন্ধ হয়ে যায়। দেশের সকল শিক্ষার্থীর অভিভাবক আর্থিকভাবে একই মানের নয়। অনেক দিনমজুর এবং স্বল্প আয়ের মানুষের সন্তানেরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানার্জন করে। দেশে এমন অভিভাবকও আছে যারা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত গাড়ি ভাড়া দিতে পারে না। বর্তমানে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়ার কারণে ইচ্ছা করলেই শিক্ষার্থীরা বাড়ির পাশের কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। কেন্দ্রিয়ভাবে ভর্তির ফলাফল অনুসারে বিভিন্ন কলেজ ভর্তি হতে হয়। ভর্তি প্রক্রিয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাস ভাড়া নিয়মিত যোগাড় করতে না পেরে বাড়ি হতে দূরে ভর্তি হওয়া কলেজে নিয়মিত যেতে পারে না। দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সব ধরনের মানুষের সন্তানেরা রয়েছে। বাস ভাড়া যোগাড় করতে না পারার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ফেল করছে। আবার অনেকে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে অকালে শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিদিনি সন্তানের গাড়ি ভাড়া দিতে পারে এমন অভিভাবকের সংখ্যা দেশে খুব একটা বেশি নেই। যৌক্তিক কারণে শিক্ষার্থীরা বাস ভাড়া হাফ নেয়ার দাবি তুলতে বাধ্য হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে ঢাকা বাস মালিক সমিতি, বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ এবং বিআরটিএ এর মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর ছাত্রছাত্রীদের নিকট হতে পরিবহন ভাড়া হাফ নেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। এ সিদ্ধান্ত শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক হতে পারে না।
ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ফেডারেশনের মতো চট্টগ্রামসহ দেশের সকল মালিক শ্রমিক সংগঠন শিক্ষার্থীদের নিকট হতে হাফ ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে ঢাকার মতো সমতা বিধান করবে এমন দাবি সমগ্র দেশের শিক্ষার্থীদের। শুধু ঢাকার শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার সুবিধা ভোগ করবে তা হতে পারে না। ঢাকার মতো দেশের অন্যান্য এলাকায় গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের নিকট হতে হাফ ভাড়া নেয়া না হলে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবে। সুতরাং কাল বিলম্ব না করে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। চট্টগ্রাম বিআরটিএ, বিআরটিসি এবং মালিক-শ্রমিক সংগঠনসমূহ যত দ্রুত চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকর করবে ততই মঙ্গল।
দেশের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সরকারের নিকট হতে নানা ধরনের সুবিধা ভোগ করে থাকে। অথচ তারা সরকারি বাস ভাড়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত যথাযথ মেনে চলে না। তার উপর শিক্ষার্থীদের নিকট হতে পূর্ণ বাস ভাড়া আদায় করে থাকে। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ দিন বাস শ্রমিকদের নিকট নির্যাতিত হয়েই হাফ ভাড়ার আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছে। দেশের পরিবহন সেক্টরে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য হাফ ভাড়া পরিবহন শ্রমিকরা বন্ধ করে দিয়েছিল। ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতির বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় এটা নয়। বিষয়টা সমগ্র দেশের শিক্ষার্থীদের। সুতরাং সারাদেশের শিক্ষার্থীদের বাস ভাড়া হাফ করে দিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘাতে জড়ানো থেকে বিরত থাকবে এমন আশা সমগ্র দেশবাসীর।