শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডিতে অন্তর্ভুক্তি আরো সহজিকরণ করা দরকার

33

 

বাংলাদেশের প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে বিশ্বমানের স্বতন্ত্র পরিচয়পত্র, বিষয়টি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বেশ জরুরি এবং এটি করতে পারলে শিক্ষার্থীদের সব তথ্য পেতে খুব সহজ হবে। দেশের প্রতিটি মানুষ এই বিষয়টি কোনো অবস্থাতেই দ্বিমত পোষন করার কথা নয়, কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই আইডি’র প্রক্রিয়াটা নিয়ে। বর্তমান সরকার সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি স্বতন্ত্র পরিচয়পত্র বিতরণের জন্য প্রায় বছরখানেক আগে ইউনিক আইডি’র তথ্য সংগ্রহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্ব দিয়েছিল পরবর্তিতে করোনাকাল এবং অনলাইন জন্মসনদ পেতে বিভিন্ন অভিযোগের কারণে তা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছিল। বর্তমানে ইউনিক আইডি’র কাজ পুরোদেশে আবার শুরু হয়েছে। ইউনিক আইডি’র জন্য যেসমস্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে তাহলো- পিতা-মাতার আইডি কার্ড, পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন সনদ, শিক্ষার্থীর অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, পাবলিক পরীক্ষার একাডেমিক সার্টিফিকেট যেখান থেকে শিক্ষার্থীর রোল এবং রেজিট্রেশন নং বসানো যাবে, রক্তের গ্রুপিয়ের প্রমাণপত্র, ছবি। মূলতঃ সরকার আগামি বছর থেকে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি সরবরাহ করবে বললেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে এর কাজ এখনও সিকিভাগও শেষ হয়েছে বলে আমার মনে হয়না। একজন শিক্ষার্থীকে ইউনিক আইডিতে অন্তর্ভুক্তি হতে হলে প্রথমে যে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টটা দরকার তাহলো তার জন্মনিবন্ধন সনদ অনলাইন থাকা বাধ্যতামূলক বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে ২০১২ সালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, সিটিকর্পোরেশনের কাউন্সিলার অফিস এবং পৌরসভা থেকে প্রদত্ত জন্মনিবন্ধন সনদগুলো অনলাইন করা হয় নাই ফলে দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। তাদের নতুন করে জন্মনিবন্ধন সনদ অনলাইন করতে গিয়ে তাদের পিতা মতার জন্মনিবন্ধনও অনলাইন করতে হচ্ছে যার কোনো প্রয়োজনই ছিলনা। যেহেতু পিতা মাতার আইডি কার্ড রয়েছে সেখানে তার সন্তানের জন্মনিবন্ধন অনলাইন করতে শুধুমাত্র তাদের আইডি কার্ডই যথেষ্ট ছিল কিন্তু সার্ভারে পিতা মাতার জন্মনিবন্ধনের অপশন থাকায় শিক্ষার্থীরা বেশ বেকায়দায় পরেছে।
ফলে ইউনিক আইডি’র এসব ডকুমেন্টসগুলো শতভাগ ঠিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরবরাহ করতে খুব কম শিক্ষার্থীই সক্ষম হচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকার যদি দ্রæত সময়ের মধ্যে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দিতে চায় তাহলে ডকুমেন্টস-এর কিছু সহজিকরণ করা উচিত। যেমন যে সমস্ত শিক্ষার্থীদের জন্মসনদ আছে তাদের জন্মসনদ ইউনিয়ন অফিস অথবা কাউন্সিলর অফিসে যাওয়া মাত্রই রেকর্ড দেখে অন্য কোনো ডকুমেন্টস ছাড়াই অনলাইনে করে দেয়ার ব্যবস্থা করা, যাদের জন্মনিবন্ধন নাই তাদের পিতা, মাতার আইডি কার্ড দেখে দ্রুত তাদের জন্মনিবন্ধন সনদ অনলাইনে করার ব্যবস্থা করা। ১৮ এবং তার ঊর্ধে শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র আইডি কার্ড দিয়ে ইউনিক আইডিতে অন্তর্ভুক্তি ব্যবস্থা করা। প্রকৃতপক্ষে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয়পত্র প্রদানের বিষয়টি নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী কিন্তু এই আইডিতে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি মনে হচ্ছে কিছুটা জটিল হয়েছে এই প্রক্রিয়াটি আরেকটু সহজিকরণ করা হলে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে অনেকটাই সুবিধা হবে বলে অনেকেই মনে করছে। এমতাবস্থায় সরকারের নীতিনির্ধারকদের ইউনিক আইডি বিষয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে এবং একাজটি সারাদেশে দ্রæত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে জন্মনিবন্ধন সনদের বিষয়টি অনলাইনে কীভাবে সহজিকরন করা যায় তা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। প্রকৃতপক্ষে জন্মনিবন্ধনের প্রক্রিয়াটিই শুরুই হয়েছে আমাদের দেশে অনেক বিলম্বে ফলে এখন অসংখ্য মানুষের জন্মনিবন্ধন করাই হয় নাই। বর্তমানে শিক্ষার্থী এবং কিছু অফিশিয়াল কাজের জন্য ছাড়া অনেকেই জন্মনিবন্ধন করেনা এর বাইরে যাদের বয়স বেশি এবং আইডি কার্ড আছে তারা জন্মনিবন্ধন করার প্রয়োজনিয়তা অনুভব করেনা ফলে বলতে গেলে দেশের এখনও সিংহভাগ মানুষ জন্মনিবন্ধনের বাইরে ফলে এসব মানুষদের অনলাই জন্মনিবন্ধনের আওতায় আনার বিষয়টি সরকারকে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনবোধে জন্মনিবন্ধন সার্ভারটি আপগ্রেড করে কিছু সহজ শর্ত আপলোড করে দিতে যাতে করে শিক্ষার্থী এবং দেশের মানুষ ভোগান্তির শিকার না হয়। তবে জন্মনিবন্ধন অনলাইন সনদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যেনো এ সনদ কোনোভাবে না পায় সে বিষয়েও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। রোহিঙ্গারা জন্মনিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে দেশের চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদেরকে। দেশের স্থানীয় প্রতিনিধিরা যদি এসব রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের সনদপত্র না দেয় তাহলে এরা এদেশের বাসিন্দা হয়ে অন্যদেশে পাড়ি দিয়ে সেদেশে হত্যা, লুণ্ঠন করে বাংলাদেশের নাম ডোবাতে পারবেনা। আমরা প্রত্যাশা করবো সরকার এবং ইউনিক আইডি’র সাথে সংশ্লিষ্টরা এই বিষয়টি কীভাবে সহজে করা যায় তা ভেবে দেখবেন।
লেখক: কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক