শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে চট্টগ্রামের ৭৭ শিক্ষার্থী যাচ্ছেন ভারতে

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ৭৭ জন শিক্ষার্থী আইসিসিআর-সুবর্ণজয়ন্তী শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়াশোনার জন্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স (আইসিসিআর) শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আইসিসিআর নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তারা মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। বর্তমান সময়ে এশিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার আদর্শ গন্তব্য হয়ে উঠেছে ভারত। প্রতিবেশি নেপাল, ভূটান ও শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার অসংখ্য শিক্ষার্থী ভারতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে যান।
তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চশিক্ষাকে লাভজনক খাত হিসেবে দেখা হয়। এসব দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়। সে তুলনায় ভারতে ফি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ইউরোপ-আমেরিকায় পড়তে গিয়ে সাংস্কৃতিক গ্যাপের মধ্যে পড়তে হয়। ফলে তারা আর বাংলাদেশে ফিরে আসে না। কিন্তু ভারতের সাথে আমাদের ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিভিন্ন বিষয়ে মিল রয়েছে। যা এসব শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমকে আরও ত্বরান্বিত করবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন আইসিসিআর’র ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি তার পেশাগত জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। যাতে শিক্ষার্থীরা বিদেশে তাদের নতুন জীবনে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।
ডা. রাজীব রঞ্জন বলেন, ভারত পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার দেশগুলোর একটি। একইসাথে এটি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র। পৃথিবীর প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ভারতীয়রা অবদান রাখছেন। বর্তমানের ইউরোপ-আমেরিকায় প্রকৌশল ও চিকিৎসা খাতে ভারতীয়রা দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও আইসিটি খাতেও লক্ষ লক্ষ ভারতীয় কাজ করছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানে ভারতের সক্ষমতা রয়েছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চ মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে ভারত অন্যতম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্প্রীতির উপর টিকে আছে। আমি বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভারতে স্বাগত জানাচ্ছি। আমি আশা করছি তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। একইসাথে ভারতের সংস্কৃতির সাথে নিজেদের একটা সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি উদতঝাসহ অন্য কর্মকর্তারা।
আইসিসিআর ভারত সরকারের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি, যার আওতায় মেধাবী বাংলাদেশি নাগরিকরা ভারতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি স্তরে বিভিন্ন কোর্স করার সুযোগ পান। আইসিসিআর বৃত্তি বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন শিক্ষাক্রম থেকে আসা এসব শিক্ষার্থী ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অধ্যয়ন করবেন। এর ফলে তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সেই অঞ্চলের বৈচিত্রকে উপলব্ধি করবেন। এই তরুণ মেধাবীরা তাদের সফল শিক্ষাজীবনের পর বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে বিশেষ করে সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অগ্রগতিতে নেতৃত্ব দেবেন।