শিক্ষক হত্যা ও হেনস্তার পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে কিনা দেখা উচিত

8

চবি প্রতিনিধি

শিক্ষকদের সাথে ঘটে যাওয়া এমন হিংস্র ঘটনার প্রেক্ষাপট একদিনে তৈরি হয় নি। ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছাত্রদেরকে হিংস্র করে তুলছে। আজকে ছাত্রনেতাদের ভাবা উচিত তারা তাদের কর্মীদের কী শিক্ষা দিচ্ছে। প্রশাসনেরও উচিত এইসব সমস্যার মূলে হাত দেওয়া। পাশাপাশি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শিক্ষক হত্যা ও হেনস্তার পেছনে কোনো প্রকার রাজনৈতিক ইন্ধন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।
সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যা এবং নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে। তিনি বলেন, একজন শিক্ষক জাতি গঠনের কারিগর। এ কারিগরকে লাঞ্ছিত করা মানে পুরো জাতিকেই লাঞ্ছিত করা। এই যে শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, এগুলো কি শুধুই ঘটনা নাকি কোনো ষড়যন্ত্র তা খতিয়ে দেখতে হবে।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, পৃথিবীর একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যে দেশ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ছাত্রদের ভূমিকাই সবচেয়ে মূখ্য। তাহলে সেই দেশে বর্তমানে ছাত্র সমাজের কেন এত অধঃপতন? প্রশ্ন রইল।
তিনি বলেন, একজন শিক্ষককে মেরে ফেলা হয়েছে, আরেকজন শিক্ষক জীবিত থেকেই বর্তমানে মৃত। এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আজকের এই মানববন্ধন থেকে দাবি জানাচ্ছি।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার সাইদ বলেন, আমি একজন শিক্ষক। আমার বিশ্বাস শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। সুতরাং যখন একজন শিক্ষক হেনস্তার শিকার হন বা খুন হন তাহলে একটি জাতিই লজ্জার মুখে পড়ে। আমরা একটি সিনেমা দেখেছিলাম হীরক রাজার দেশে। সেখানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজা তখন বলেন শিক্ষক বেমানান -নাই অর্থ, নাই মান। এখন দেখা যাচ্ছে অর্থ আর মানের সাথে সাথে প্রাণও নাই।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান নাসির উদ্দিন বলেন, এই যে সা¤প্রতিক সময়ে শিক্ষক হেনস্তা হত্যাসহ নানা ঘটনা ঘটে গেল, এগুলোকে সাধারণ ঘটনা হিসেবে ধরে নিয়ে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করলেই যথেষ্ট হবে না। বরঞ্চ এগুলোকে সভ্যতার পতন ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখতে হবে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার বলেন, একজন অধ্যক্ষকে এভাবে লাঞ্চিত করা হলো অথচ পুলিশ প্রশাসন দাঁড়িয়ে থাকলো। বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত লজ্জার ছবি। আমি ধিক্কার জানাই সেই পুলিশদের যারা একজন শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করতে পারলো না। পাশাপাশি আমরা দেখেছি কিভাবে উৎফলকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ছাত্রের হাতে খুন হতে হলো। এরা কখনো ছাত্র হতে পারে না। এই খুনীরা ছাত্র-শিক্ষিকের মধুর সম্পর্ককে কলুষিত করেছে। আমি স্পষ্টভাবে প্রশাসনের কাছে বলতে চাই অতিদ্রæত এসব নির্মমতার কঠোর বিচার করুন। অন্যথায় সারা বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ প্রতিবাদে রাজপথে চলে আসবে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. সজীব কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আল আমিন, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এনায়েতুল্লাহ পাটোয়ারী, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায়, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হানিফ সিদ্দিকী, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ।