শাহরিয়ার খালেদের গানের সংকলন

18

শেলী শাহেদ

মানুষের অনুভূতি আবেগ প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো সংগীত। সুখে দুঃখে ব্যথা বেদনায় চাওয়া পাওয়ায়
সংগীতের কথা এবং সুর বিরাট ভূমিকা রাখে।মানব হৃদয়
গানের সুরে উদ্বেলিত হয় ন্ডূ হয় বিচলিত ,
কখনো হয় শান্ত কখনোবা অশান্ত।
নিউরোলজিস্টদের মতে , মস্তিষ্ক কাজ করে ছন্দের মাধ্যমে।
সংগীত শুনলে মস্তিষ্কে আলফা ও থিটা তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।
আলফা ও থিটা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। আজকাল
আলঝেইমার্সে আক্রান্ত রোগীদের মিউজিক
থেরাপি দেয়া হয়।
সংগীত নিয়ে বহু মনীষীর বহু হৃদয়স্পর্শী উক্তি আছে।
এই মুহূর্তে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অপূর্ব
উক্তি শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলামনাÑ
“God Respects Me , When I work
He loves me When I sing .
— Rabindranath Tagore .”

( অর্থাৎ যখন আমি কাজ করি
ঈশ্বর আমাকে সম্মান করেন
যখন আমি গান করি তখন
তিনি আমাকে ভালোবাসেন )
কী চমৎকার অনুভূতি ! আসলেই সংগীতের এক নিখুঁত
যাদুকরি ভূমিকা আছে।
Harvard Medical School ( Department of Medicine ) says —
Music as Medicine .

এবার বলি ,নির্ভীক নির্লোভ সংগীতশিল্পী শাহরিয়ার খালেদ প্রসঙ্গে।যিনি শুধু সংগীতের জগতেই সীমাবদ্ধ
নয়।তাঁর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে আছে গোপনে সমাজের অন্যান্য
জনকল্যাণমূলক কাজে। সমাজের অবহেলিত
নিপীড়িত মানুষের পাশে থাকতেই তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন বেশি। অথচ বর্তমান যুগে খুব কম মানুষই
মানুষের পাশে দাঁড়ায়। শিল্পী শাহরিয়ার খালেদ এক
পরিশুদ্ধ পরিচ্ছন্ন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব। যিনি স্বগুণে গুণান্বিত গুণী একজন মানুষ। তাঁর অনিন্দনীয় নিষ্কলুষ নিষ্পাপ মূল্যবান অমূল্য একটি হৃদয় আছে। যা অপূর্ব অনুপম নিরুপম অতুলনীয় অদ্বিতীয়।
তাছাড়া শিল্পীর আরেকটি পরিচয় যা যথার্থই গৌরবের।
তা হলো , তিনি ভারতীয় আইন পরিষদের সাবেক সদস্য
এবং কাজেম আলী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শেখন্ডই চট্টগ্রাম
শ্রদ্ধেয় কাজেম আলী মাস্টারের প্রপৌত্র। শাহরিয়ার খালেদ বরাবরই আমাদের প্রিয় বাংলার সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং পরিমন্ডলের পক্ষপাতিত্ত্ব গু যিনি আজও চট্টগ্রামে পরিশীলিত সংস্কৃতির রুচিসম্মত একজন ধারক এবং বাহক।সে প্রমাণ আমরা পেয়েছি তাঁর সম্পাদিত গানের বই “দেশের গান জাগরণের গান “গুয়ের মাধ্যমে।
“দেশের গান ,জাগরণের গান “গ্রন্থটি বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও আমাদের প্রিয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি অসাধারণ সৃষ্টি। বাংলা সংগীতে অজগ্র হৃদয়গ্রাহী গান রয়েছে। সেইসব গান হতে বাছাইকরা ১৫৪ টি হৃদয়স্পর্শী দেশের গান এবং জাগরণের গান আছে এই সংকলনে।
প্রতিটি সম্পূর্ণ গানের কালেকশন, গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক/ গায়িকার নামসহ গ্রন্থটি একটি অপূর্ব সম্পাদনা। দেশের গান ,জাগরণের গানগুলো প্রচন্ডভাবে প্রেরণাদায়ক শক্তি। এসব গান শুনলে সাথে সাথে নিজের অজান্তেই অপলকে দু’চোখ ভিজে আসে গু ভিজে ওঠে অন্তর ও আত্মা।
সেই ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা উর্দু নয়, বাংলা চাই এই দাবিতে আপামর ছাত্রজনতা রাজপথে গনআন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার অকুতোভয়
সন্তানেরা গেয়ে উঠেছে “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়।” ধমনীতে ঝড় তোলা এই অসাধারণ গানের
সুরকার আব্দুল লতিফ।
শামসুদ্দিন আহমেদের লেখা এবং আলতাফ মাহমুদের সুর করা ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলিরে বাঙালি তোরা ঢাকার শহরে রক্তে ভাসাইলি।’
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনে জাতির আপামর
জনসাধারণের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করার জন্যে নীচের
গানের ভূমিকা অতুলনীয়। এইসব গানের কথা ও সুর ও ব্যঞ্জনা আমাদের বাঙালি জাতির ধমনীতে রক্তের সাথে মিশে আছে।
টযেমন ও ‘রক্তেই যদি ফোটে জীবনের ফুল’
গীতিকার: সৈয়দ শামসুল হুদা
সুরকার : আজাদ রহমান।
‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম।’
গীতিকার :আবুল কাসেম সন্দীপ
সুরকার :সুজেয় শ্যাম
‘এই দেশ এই দেশ আমার এই দেশ’
গীতিকার ও সুরকার : সলিল চৌধুরী
শিল্পী : মান্না দে ও সহশিল্পীরা , ছায়াছবি- রক্তাক্ত বাংলা
কালজয়ী আরো বহু গান শাহরিয়ার খালেদ
সম্পাদিত “দেশের গান জাগরণের গান “বইটিতে আছে
যেমন-
‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’
‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে ,রক্তলাল, রক্তলাল, রক্তলাল’
‘তোমার বুকের খুনের চিহ্ন খুঁজি’
‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে
এই সমস্ত গানগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিকামী
বাঙালির অণুপ্রেরণা , সাহস , মানসিক মনোবল
যুগিয়েছে।
আমাদের জাতির পিতা প্রিয় নেতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে
স্বাধীনতার উদ্দেশে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণ
দিয়েছিলেন। সে সময় বাংলার সাহসী সন্তানেরা প্রিয়
মাতৃভূমির মাটি হতে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনীকে
বিতাড়িত করতে মরিয়া হয়ে উঠে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে কণ্ঠযোদ্ধারা দেশের গান ,জাগরণের গান গেয়েছেন।
ঐসব গান Ð যেমন ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’
এইসব দেশের গান, জাগরণী গান ,মুক্তিবাহিনী
এবং আপামর জনসাধারণের মধ্যে দাবানলের মতো ছড়িয়ে গিয়েছিলো। মানুষ দেশাত্মবোধক এবং জাগরণের গানে উদ্বুদ্ধ হয়ে খুঁজে ফিরতেন পাকবাহিনীর আস্তানা ও খুঁজে ফিরতেন মুক্তির পথ।
কিছু কিছু গান অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে যেসব কণ্ঠশিল্পী গান করতেন তাঁরাও ছিলেন সৈনিক অর্থাৎ কণ্ঠসৈনিক।
তাঁদের কণ্ঠ হতে গানের প্রতিটি শব্দ বেরিয়ে এসেছে একেকটি বুলেট হয়ে ও বাঙালির স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার হয়ে।
“দেশের গান জাগরণের গান” বইটিতে অন্যান্য
জনপ্রিয় দেশের গানও স্থান পেয়েছে। আছে
গণসংগীতের গ্রষ্টা সকলের প্রিয় ভূপেন হাজারিকার গান।
আছে আমাদের অত্যন্ত প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ,
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান।
আছে ইমতিয়াজ বুলবুল , গাজী মাজহারুল আনোয়ার ,
গৌরীপ্রসন্ন , লোককবি শামসুদ্দিন আহমেদ আরো বহু স্বনামধন্য গীতিকার / সুরকারের গান। যাঁরা আমাদের প্রিয় বাংলার গানের জগৎ সৌন্দর্যে পূর্ণ করে রেখেছেন।
পরিশেষে বলবো ও সংগীতশিল্পী শাহরিয়ার খালেদ
সম্পাদিত গানের বই “দেশের গান , জাগরণের গান”
একটি হৃদয়গ্রাহী অনন্য সংকলন যা সংগীতপ্রেমীদের
জন্যে সুখবর। যেটি সংগ্রহ করে রাখার মতো একটি বই।

অপূর্ব উদ্যোগ নিয়েছেন সংগীতশিল্পী
প্রিয় শাহরিয়ার খালেদ। আমি শিল্পীর সর্বাঙ্গীন
মঙ্গল কামনা করি এবং আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
“দেশের গান , জাগরণের গান “ এই অসামান্য বইটি
প্রকাশনায় দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান
জিপিএইচ ইস্পাত সহযোগিতা করেছে।এমন
চমৎকার উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে আমার আন্তরিক
ধন্যবাদ জানাই। নিঃসন্দেহে এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি প্রশংসার দাবিদার।