শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরে বর্ষা বরণ ভারতীয় শিল্পীদের

102

ভারতীয় লোকগাথায় কথিত আছে, মালহার রাগ যখন গাওয়া হত, তখন আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টির ধারা নেমে আসত। সে রূপকথার সত্যতা ছাড়িয়ে এই সঙ্গীত রূপ নিয়েছে উৎসবে। ভারতীয় হাই কমিশন, চট্টগ্রামের উদ্যোগে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে ঢাকা, খুলনার পর নগরীতে বসেছে মালহার উৎসব। গতকাল সোমবার সন্ধায় ভারত ও বাংলাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের স্বনামধন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ উৎসব আয়োজিত হয়। উৎসবে শাস্ত্রীয় সংগীতের সুরে বর্ষাবন্দনা করলেন শিল্পীরা।
গতকাল ভারতের শিল্পীরা গানে ও বাদনে করলেন বর্ষা আবাহন। মালহার বা মল্লার হচ্ছে বর্ষার রাগ। এই রাগ দিয়ে বৃষ্টিকে পৃথিবীর বুকে বরণ করে নেন শিল্পীরা। মালহারের যত প্রকার আছে তার মধ্যে মিয়া-কি-মালহার উল্লেখযোগ্য। মিয়া মালহার রাগ অবলম্বনে গান বেঁধেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গজল ও ভজনেও ব্যবহৃত হয়েছে এই রাগ।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক এবং উদ্বোধক ছিলেন ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। এছাড়াও ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী।
আগত শিল্পী ও অতিথিদের স্বাগত জানান চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার আনিন্দ্য ব্যানার্জী। তিনি স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ভারতীয় রাগ সঙ্গীতে অনেক ধরণের মধ্যে ‘মালহার’ অন্যতম। কথিত আছে যে মালহার রাগ এতটা শক্তিশালী ছিল যে যখন এটি গাওয়া হত, তখন আকাশ ঝরে বৃষ্টি নামত। ভারতের লোকগল্পে এসব কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। তার সত্যতা নিয়ে কথা বলছি না। প্রকৃত আর্থ বৈষ্ণিক উষ্ণায়ণ, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি ও পরিবেশ দূষণে আক্রান্ত এই ধরণীকে রক্ষায় অন্যতম উপায় হল সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তার জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার হল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। আমি আশা করি, এই সাংস্কৃতিক বালিধারায় সবধরণের দারিদ্র-জরাজীর্ণতা ধুয়ে আমরা নতুনভাবে জাগ্রত হতে পারবো। তারই একটি ছোট্ট প্রয়াস হিসেবে আজকের মালহার উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
দুই দেশের সংস্কৃতির মেলবন্ধনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই দেশের মানুষের রক্তদানের উপর প্রতিষ্টিত। কোনো অপশক্তি এই সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারবে না। আপনারা জানেন যে, ক্ষুদ্রপরিসরে হলেও শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষা ও সংস্কৃতি আমাদের যুব সমাজকে মাদকসহ সকল ধরণের অপশক্তি থেকে রক্ষা করবে।
শাস্ত্রীয় সংগীতের এ আসরে গতকাল ভারতের স্বনামধন্য ওস্তাদ ও শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। শুরুতেই কণ্ঠসংগীত নিয়ে আসেন পন্ডিত স্বর্ণময় চক্রবর্তী। তিনি পরিবেশন করেন মগামল্লার রাগ। তার সাথে তবলায় ছিলেন সবুজ আহমেদ। এরপর মূল পরিবেশনায় ছিলেন পন্ডিত দেবজ্যোতি বোস। তার সাতে তবলায় ছিলেন পন্ডিত শুভংকর ব্যানার্জী।