শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিমা তৈরির ধুম

69

বাতাসে শরতের শুভ্র কাশফুলের দোল খাওয়া সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয় দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। সামনেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে নগরীর প্রতিমালয়গুলোতে। বাঁশ, খড় ও মাটি দিয়ে দেবী দুর্গার রূপ দিতে সকাল থেকে গভীর রাত পযন্ত ব্যস্ত সময় কাজ করছেন কারিগররা। কোনো কোনো মন্ডপে এখনো কাঁচামাটির প্রতিমা বানানো হচ্ছে। কোনো মন্ডপে মাটির প্রতিমার উপর সাদা প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। তবে রঙের কাজ এখনও বাকি। কয়েকদিন পরেই শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে সাজানো হবে দেবী দুর্গাকে।
বংশ পরম্পরায় বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন সদরঘাট কালীবাড়ির শিল্পী সুজন পাল। দেবী দুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ দিতে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এই কাজে পারিশ্রমিকের চেয়ে নিজের ধর্মীয় আবেগটা বেশি কাজ করে। তাই এই কাজে কোনো একঘেঁয়েমি আসে না। সময়ের বিবর্তনে বাপ-দাদার ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব এসেছে আমার কাঁধে। তাই এই কাজে অত লাভ-লোকসান নিয়ে চিন্তা করি না।
তিনি আরও বলেন, গত বছর দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা দামের প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। পাশাপাশি প্রায় ৬০টি প্রতিমা তৈরির অগ্রিম অর্ডার পেয়েছিলাম। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে দামের পাশাপাশি কমেছে অর্ডারও। সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা দামের প্রতিমা তৈরির অর্ডার এসেছে। এ বছর অনেকটা ভয় নিয়ে কাজ শুরু করেছি।
প্রীতম দে নামে একজন বলেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি যে উৎসবের দুটি দিক; একটি ব্যক্তির, আর অন্যটি হল সমষ্টির। দুর্গাপূজোয় মূলত আমাদের সার্বিকভাবে চোখে পড়ে সমষ্টির সমাবেশ। কিন্তু ব্যক্তি সাড়া না দিলে সমষ্টির উৎসব ম্লান হয়ে যায়। তাই ব্যক্তির গুরুত্ব এখানে সর্বাধিক। ব্যক্তিগত জীবনে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ শিখ, কেউ বা ধর্মে বিশ্বাসী নয়। আবার কেউ ধনী, কেউ বা দরিদ্র এই সব ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে সবাই মিলেমিশে পরম আনন্দে আমরা এই উৎসবে মেতে উঠি।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই উৎসবের সঙ্গে ধর্মের যোগাযোগ বাহ্যিকভাবে দেখতে গেলে বড়ই ক্ষীণ। বরং এর সঙ্গে মিশে আছে নিখাদ আনন্দ এবং ভালোবাসা। তাই জাত-পাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এতে বাঁধা পড়ে প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে। আর এখানেই বাঙালির দুর্গাপূজার সার্থকতা। তবে এবার অন্যান্য বছরের ন্যায় ঘুরাঘুরি হবে না।
পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী ২১ অক্টোবর বোধন বা অদিবাস পূজার মাধ্যমে শুরু হবে এ বছরের শারদীয় দুর্গাপূজা। ২৬ অক্টোবর বিজয় দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই উৎসেবর।
মহনগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন তালুকদার বলেন, গত বছরের ন্যায় এ বছর আমরা ২৭০টি মন্ডপে পূজা উদযাপনের তালিকা জমা দিয়েছি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর পূজা উদযাপনে কিছুটা ভিন্নতা থাকবে। কোনো ধরণের সাউন্ড সিস্টেম ছাড়াই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনাড়ম্বরভাবে উদযাপিত হবে এ বছরের শারদীয় দুর্গাপূজা।