শারদীয়া ভাসতে পারে বৃষ্টিতে

48

শরতের ভরা যৌবনেও সাদা মেঘের ভেলাকে হটিয়ে নীল আকাশের দখল নিচ্ছে কৃষ্ণমেঘ। বিদায়বেলায় শেষ দফায় গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠা মৌসুমি বায়ুর সাথে সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তেই শরতের আকাশে ফের শুরু হয়েছে মেঘেদের দাপাদাপি। এতে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও বাড়তে শুরু করেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী ৭ অক্টোবরেই আয়ু শেষ হচ্ছে মৌসুমি বায়ুর। অন্তত সেপর্যন্ত বৃষ্টির চোখরাঙানি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে না। তার মানে, বৃষ্টিতে ভাসতে পারে এবারের শারদীয়া। প্রস্তুতিতেই আলামতের ছাপ রাখা এবারের বৃষ্টিপাত দুর্গাপূজার প্রথম চারদিন নিজের দখলেই রাখছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্যানুযায়ী, অক্টোবরে আবহাওয়া পরিস্থিতিতে নানামুখী ঘনঘটা রয়েছে। বিদায় নেবে মৌসুমি বায়ু। তারপর বঙ্গোপসাগরে অন্তত দুটি নিম্নচাপের আশঙ্কা রয়েছে, যার অন্তত একটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। শেষপর্যন্ত নিম্নচাপ শক্তিশালী রূপ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল তার নামকরণ হতে পারে ‘কিয়ার’। আর ওই ঘূর্ণিঝড়ের কাঁধে সওয়ার হয়েই শীত মৌসুমের আগমন ঘটতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক কারণেই মৌসুমি বাতাস তার সময়সীমা ও শক্তির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। সেই ধারাবাহিকতা মেনেই এবার মৌসুমি বায়ু বিদায়বেলায় সময়সূচি ও শক্তি দুটোই বাড়িয়েছে। পাঁচদিন আগে বিদায়ের দিনক্ষণ ঠিক করলেও সময় পাল্টে আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ওপর সক্রিয় থাকতে পারে। আর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা শুরুর প্রথম চারদিন অর্থাৎ মহানবমী পর্যন্ত দেশের অনেক এলাকায় আবহাওয়া বৃষ্টিভেজা থাকতে পারে। এতে দেশের উপকূল থেকে মধ্যাঞ্চল অর্থাৎ রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় বেশ কয়েক দফা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তবে একই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকার আলামত বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে একটি শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় আবহাওয়া পরিস্থিতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, অক্টোবরে দুটি নিম্নচাপের একটি শক্তিশালী রূপ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত এর নাম হতে পারে ‘কিয়ার’। এর আগে ২০১৯ সালে ফণী ও বায়ু আঘাত হেনেছিল। যদিও এ দুটি ঘূর্ণিঝড় দেশের ওপর বড় ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারেনি। তার আগে ২০১৮ সালে ভারতের উড়িষ্যায় তিতলি, ২০১৬ সালে কায়ান্ত, ২০১৪ সালে হুদহুদ, আর ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় পাইলিন আঘাত হানে।
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মো. আরিফ হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের দেশে আবহাওয়া ও জলবায়ুগত যে বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, তার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অক্টোবর-নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় হয়। তার মানে আবার এটা নয় যে, ঘূর্ণিঝড় হবেই। তবে তথ্য-উপাত্তগুলো হওয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার প্রচারিত আবহাওয়ার দৃশ্যপটে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আর একই সময়ের জন্য প্রচারিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী দু’দিন বা ৪৮ ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের ভোলায় দেশের সর্বোচ্চ ৬০ মিলিমটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে। দেশের সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল সিলেটে।