শাবির অচলাবস্থা কাটেনি এখনো

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গভীর রাতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে অনশন ভাঙার আহ্বান জানালেও উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, রবিবার (গতকাল) দুপুরে এ বিষয়ে ফের আলোচনায় বসার কথা রয়েছে তাদের।
সিলেটের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল গত শনিবার রাতেই ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে রাত ১টা থেকে রাত ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের একটি কক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ কয়েকজন নেতা। বৈঠক শেষে রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নাদেল। তিনি বলেন, ‘ভিডিও কনফারেন্সে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি সবকিছু শুনেছেন। তিনি তাদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন’।
নাদেল বলেন, এখন পর্যন্ত অনশনরত ২৩ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা আরও বেশি অবস্থান করলে অসুস্থতার সংখ্যাটা বাড়বে। তারা যেন অনশন ভেঙে আন্দোলন থেকে সরে যান, সেই অনুরোধ তিনি (শিক্ষামন্ত্রী) করেছেন। শিক্ষার্থীদের আইনগত ও অ্যাকাডেমিক সমস্যা যাতে না হয় সে আশ্বাসও তিনি দিয়েছেন। মন্ত্রী আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছেন।
আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে তারা যেন তাদের প্রস্তাবগুলো লিখিতভাবে পাঠায়। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা বলেছে, সবার সঙ্গে কথা বলে কাল আমাদের জানাবেন।
উপাচার্যকে অপসারণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বৈঠকে হয়েছে কি না জানতে চাইলে নাদেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনা হলেও, কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি’।
ভার্চুয়াল বৈঠকের সময় নাদেল ছাড়াও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন মীর রানা, সাব্বির, নাফিসা আঞ্জুম ইমু, শাহরিয়ার আবেদিন, অপূর্ব, রোমিও, উমর ফারুক, ইয়াসির সরকার, সাদিয়া আফরিন ও মোহাইমিনুল বাশার রাজ। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার ও অপূর্ব অনশনে অংশ নিচ্ছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সাথে ভার্চুয়াল আলোচনা শেষে শনিবার রাত ৩ টার দিকে ভিসি ভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা বলছেন, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের অপসারণের দাবিতে তারা অনড় রয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি বলেন, ‘মন্ত্রী আমাদের নানা আশ্বাস দিলেও, অন্যতম প্রধান দাবি ভিসির পদত্যাগ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি’।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা আলোচনা করতে আগ্রহী, তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না।
শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের তিনটি দাবির মধ্যে ছিল- প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, হলের অব্যবস্থাপনা দূর করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দ্রæত ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া। পরে গত রবিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এরপর ওইদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে আর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন শুরু করেন, যা গতকাল রবিবার পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, অনশনে বসা ২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গণঅনশনের ঘোষণার পর নতুন তিনজনসহ এখন ১০ জন ভিসির বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।