শহরে বস্তিবাসীর আয় কমে গেছে ১৪ শতাংশ

7

মহামারি সংক্রমণের একবছর পার হয়েছে। কিন্তু ঋণের জালে জড়িয়ে এবং সঞ্চয় হারিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনও তাদের দৈনন্দিন জীবন চালাতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। বিশেষ করে শহুরে বস্তিবাসীর অবস্থা বেশ ভয়াবহ বলে জানিয়েছে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)। সংগঠন দুটির যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপের ফলাফলে দেখা গেছে, শহুরে বস্তিতে কোভিড-পূর্ব অবস্থার আয়ের চেয়ে এখনকার আয় ১৪ শতাংশ কম।
গতকাল মঙ্গলবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
পিপিআরসি জানায়, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি)-র করা যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে এমন বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। টেলিফোনের মাধ্যমে দেশব্যাপী তিন ধাপে এই জরিপের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ইমরান মতিন জানান, মহামারির কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানান শ্রেণিপেশার মানুষ। এদের মাঝে আছে হত-দরিদ্র এবং মাঝারি দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। এদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এছাড়া রয়েছে দরিদ্র নয়, কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা এক শ্রেণির মানুষ, যাদের বলা হচ্ছে ভালনারেবল নন পুওর বা ভিএনপি। দেখা গেছে, দারিদ্র্যসীমার ওপরে কিন্তু মধ্যম, জাতীয় আয়সীমার নিচে থাকা এই শ্রেণির মানুষের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে সবচেয়ে ধীরগতিতে। গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষদের ৭২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘নতুন দরিদ্র’ হিসেবে। সেই ‘নতুন দরিদ্রদের’ ৫০ শতাংশ এখনও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। এই হার শহরে ৫৯ শতাংশ এবং গ্রামে ৪৪ শতাংশ। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ১৪.৮ শতাংশ ‘নতুন দরিদ্রদের’ এই হার বিগত বছরের জুনে ছিল ২১.২ শতাংশে।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিগত জুন মাস থেকে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারপরও কোভিডের পূর্বে কাজ ছিল, কিন্তু এখন বেকার এমন মানুষ রয়েছে ৮ শতাংশ। কর্মহীনতার এই ধারা নারীদের জন্য বেশ আশঙ্কাজনক। কোভিডের আগে কর্মজীবী ছিলেন এমন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ গত বছর জুন মাস থেকে এখনও বেকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার নেমে এসেছে ১৬ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ।
ড. ইমরান মতিন তার বক্তব্যে নারীদের কর্মহীনতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কম। আর কোভিড-সৃষ্ট এই অবস্থা নারীদের শ্রমবাজার থেকে আরও ছিটকে ফেলতে পারে। তিনি আরও বলেন, পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণ করায় দরিদ্রদের দুরাবস্থা আরও বাড়ছে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদিও কোভিড-কালে সামাজিক সুরক্ষা নামমাত্র ভূমিকা পালন করছে, কিন্তু এটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। শহরের দরিদ্র শ্রেণি এবং ‘নতুন দরিদ্রদের’ জন্য বর্তমানে থাকা সুরক্ষা কর্মসূচির পাশাপাশি কার্যকরী ও প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন ও তাৎপর্যপূর্ণ আরও কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, নতুন আয়ের ধাক্কা সামলাতে ‘স্মার্ট লকডাউন’ দরকার। এটি স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারও বটে।