শফী সুমনের কিশোর কবিতা সারল্যে এক অনন্য ভুবন

102

 

পাখির কাছে সুর শিখেছি
নদীর কাছে তাল শিখেছি
রোদের কাছে তাপ পেয়েছি
সূর্য দিলো পাঠ
বর্ষা দিলো জল-অনুরাগ
প্রকৃতিটাই মাঠ।
গাছের শাখা শিক্ষা দিলো
পথিক দিয়ে ছায়া
ফাগুন দিলো ফুল ফোটানোর
অতুল স্নেহ-মায়া
তাদের কাছে শিখতে গিয়ে
পেলাম প্রীতির ছায়া।
আকাশ দিলো বিশালতা
সাগর গহিন বোল
মনের দুয়ার খুলেই দিলো
উথাল কলরোল
টুনটুনি আর দোয়েল শ্যামার
নাচের পেলাম দোল।
মানুষ হবার কঠিন পণে
জীবনটাকে গড়া,
আমার ভুবন আলোয় ভরা
স্বপ্ন দেখায় সন্ধ্যা তারা
বদলে দিলো জীবনটাকে
দিন বদলের পড়া।
উদ্ধৃত কবিতাটির কবির নাম শফী সুমন। দুটো শব্দের ছোট্ট একটি নাম। মানুষটিও দৈহিক অবয়বে তেমনটা নজর কাড়ার মতো নয়। কিন্তু তাঁর সৃজন সম্ভারে চোখ রাখলে পাঠককে অভাবিত বিস্ময়ের মুখোমুখি হতে হয়। যেমনটা হলাম এখনই।
শফী সুমন এমন এক কিশোর কবিতার কারুকার যাঁর কবিতায় অনায়াসে খুঁজে পাওয়া যায় জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার রূপ লাবন্য, জসিম উদ্দীনের পল্লী-প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর আহসান হাবীবের কিশোর কবিতার সারল্য। বাংলাদেশের কিশোর কবিতা অঙ্গনে শফি সুমন নামটি তাই যথেষ্ট মনোযোগের দাবি রাখে। তাঁর কবিতা মানেই মানুষ আর প্রকৃতির অবাধ কোলাকুলি-
এঁকে বেঁকে চলে যায় শঙ্খ নদী
জলধারা ধীর গ্রোতে ছোটে নিরবধি
তীর ঘেঁষে বালুচর ছোট ছোট বাড়ি
আরো আছে নারকেল সুপারির সারি।
লালমাটি লালুটিয়া পাহাড় আর বন
দেখো যদি প্রিয় চোখে কেড়ে নেবে মন
বর্ষার কালে নামে পাহাড়িয়া ঢল
জলধারা বেগে ছোটে করে কলকল।
ভেঙে দেয় দু’ধারের শত ঘর বাড়ি
নদী ভাঙা মানুষের শুনি আহাজারি
ভেসে যায় নোনা জলে অনেকের চোখ
নদী ভাঙা মানুষের বুক ভরা শোক।
(শঙ্খ নদী/নির্বাচিত কিশোর কবিতা/পৃষ্ঠা-১২)
এরকম চিত্র নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাত্যহিক চিত্র, যা পাঠে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এ দেশের আবহমান কাল ধরে নদীর ভাঙা-গড়ার চিরায়ত উপখ্যান।
শফী সুমনের কিশোর কবিতার চিত্রকল্প মাটি ও মানুষের বন্দনায় মুখর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষের আত্মাহুতি, অগণন মা ও বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার চিত্র এঁকেছেন তিনি চিত্র,উপমা আর অনুপ্রাসের সমৃদ্ধ রূপময়তায়। বাংলার দামাল ছেলেরা কীভাবে জানবাজি রেখে প্রাণপণ যুদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে তাঁর স্বরূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি নিচের কবিতায় –
যুদ্ধ করে গাঁয়ের পথে পাহাড় কী জঙ্গলে
থ্রি নট থ্রি গর্জে ওঠে পাক হানাদার দলে
গর্জে ওঠে স্টেনগান নতুন এস.এল.আর
আমার দেশের দামাল ছেলে মারলো হানাদার।
মারলো হানা রাজাকার আর আল বদরের ছা
কাউকে দিলো শাস্তি ভীষণ উপর তুলে পা
দালালরা সব পালিয়ে গেলো গর্তে লুকোয় কেউ
রক্ত আগুন করা ছিলো স্বাধীনতার ঢেউ।
(অমর পতাকায়/প্রিয় বাংলাদেশ/পৃষ্ঠা -০৬)
কিংবা,
তাঁদেরই সেই রক্ত ধারায়
বীর বাঙালি পথ খুঁজে পায়
সে পথ বেয়েই একাত্তরে আসলো স্বাধীনতা
হাজারো বীর জীবন দিলো অমর করুণ গাথা।
সেই ইতিহাস জানতে হলে
শহিদ মিনার যাবেই চলে
মিনার ছুঁয়ে শপথ নিয়ে পড়বে ইতিহাস
বায়ান্ন ও একাত্তরের সাক্ষী রাঙা ঘাস।
(স্মৃতির শহিদ মিনার / আকাশের সীমানায় পাখিদের ঠিকানায় /পৃষ্ঠা -২০)
এভাবে শফী সুমন আমাদের বিজয়গাথার কথা তুলে ধরেছেন তাঁর কিশোর কবিতায়। মাত্রাবৃত্ত ছন্দের অপূর্ব দ্যোতনায় এই বিজয়গাথা, স্বাধীনতার মতো মহার্ঘ প্রাপ্তির কথা পড়তে গিয়ে ভাবুক পাঠকমাত্রই একাত্তরের সেই দুঃসহ দিনগুলোতে পৌঁছে যায়, সেই সঙ্গে নিশ্চিত পেয়ে যায় একাত্তরে হায়েনা তাড়ানোর সেই সুখানুভূতি।
২. শফী সুমনের লেখালেখির ক্ষেত্র বহুদূর বিস্তৃত। তিনি একাধারে কবি, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, গীতিকার ও সুরকার। তিনি বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এর ‘ক’ ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত গীতিকার। বেতার ও টেলিভিশনে তাঁর দুই শতাধিক গান বিশেষভাবে ধারণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁর কিছু অডিও অ্যালবাম বাজারে রয়েছে, যা শ্রোতামহলে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে তাঁর মাইজভান্ডারী গানগুলো এত আবেগময় যে শ্রোতার কর্ত দিয়ে পৌঁছে যায় হৃদয়ের গহিন ভিতর। মাইজভান্ডারি গান রচনায় তাঁর নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও ভক্তি সবিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে। আধুনিক গান রচনায় যেমন তাঁর হাত পোক্ত তেমনি ফোক ও আঞ্চলিক গান রচনায়ও তিনি সমান যতœবান ও ধীমান।
শফী সুমনের লেখালেখি জীবনের সূচনা মাত্র ১৫ বছর বয়সে। ১৯৭৮ সালে দৈনিক আজাদীর সাহিত্য পাতায় তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। এ সময় তিনি চট্টগ্রামের দৈনিক নয়াবাংলা, ঢাকার দৈনিক আজাদের মফস্বল প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি দৈনিক গিরিদর্পন ও সাপ্তাহিক বনভূমির সহ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
শফী সুমন ১৯৬৩ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার উত্তর হাশিমপুর গ্রামের এক মানুষ গড়ার কারিগর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম মাস্টার রশিদ আহমদ আর মায়ের নাম চেমন আরা বেগম। স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন যুঁথী ও দু ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর সুখের গৃহকোণ। পেশাগত জীবনে তিনি একজন চিকিৎসক। স্বাস্হ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাব এসিস্ট্যান্ট মেডিকেল অফিসার (চ্যাকমো) পদে কর্মরত থেকে তিনি বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন।
নিভৃতচারী, লাজুক ও প্রচারবিমুখ কবি ও শিশুসাহিত্যিক শফী সুমনের দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে লেখালেখির ফসল হিসেবে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা মোট ১১টি। তাঁর মধ্যে বড়দের জন্যে লেখা গ্রন্থ সংখ্যা ৪। বাকি ৭টি গ্রন্থ ছোটদের জন্য লেখা। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলো হলো: ১. বৃত্তাবদ্ধ (ছোটগল্প) ১৯৮৬
২. গ্রহণের কাল (ছোটগল্প) ১৯৯৬
৩. শেষ বিশ্রাম (বড়দের কবিতা) ২০১২
৪. স্বপ্ন দেখার দিন (কিশোর কবিতা) ১৯৯৮
৫. আকাশের সীমানায় পাখিদের ঠিকানায় (কিশোর কবিতা) ২০০৩
৬. চরণদ্বীপের রাজকন্য ( কিশোর কবিতা) ২০১৪
৭. নির্বাচিত কিশোর কবিতা ২০১৬
৮. প্রিয় বাংলাদেশ (কিশোর কবিতা) ২০১৭
৯. বর্ণমালার হাসি (ছড়াগ্রন্থ) ২০১৮
১০. সময়ের ছড়া ২০১৯ এবং
১১. উপহার (গানের সংকলন) ২০০৩।
লেখালেখির স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৯৭ সালে রংপুর অভিযাত্রিক পুরস্কার, ২০০৪ সালে ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন সম্মাননা, ২০১০ সালে কথন শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ২০১১ সালে নবীন সেন একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।
৩. শফী সুমনের কবিতার বিষয়বস্তু বিচিত্র ও বর্ণিল। তিনি বাঙালির দীর্ঘ তেইশ বছরের অবিরাম সংগ্রামের বন্ধুর-মসৃণ পথ পাড়ি দেওয়া মহত্তম অর্জনগুলো যেমন তাঁর কলমে গভীর মমতায় ওঠে এনেছেন তেমনি এঁকেছেন কৈশোরের দুরন্তপনা, ফটিক- মাখন, অপু-দুর্গা, রতন, মিনি, অমলের মতো কাল উর্ত্তীণ কিশোর চরিত্রগুলোর কৈশোরক ভাবনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছুটি’ গল্পে কিশোর বয়সের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরতে গিয়ে লিখেছেন, ‘তের-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই নেই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধো -আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগলভতা। হঠাৎ কাপড়চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করিয়া বেমানানরূপে বাড়িয়ে উঠে, লোকে সেটা তাহার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরূপ জ্ঞান করে। তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায়, লোকে সেজন্য তাহাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না।’
কিশোর বয়সের যে স্বরূপ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তুলে ধরেছেন তা একটি চিরায়ত কিশোরের স্বভাবজাত। স্হান কাল পাত্রভেদে আমরা কিশোর বয়সকে এই অবয়বেই দেখি। সে তার মতো চলতে চায়, করতে চায়। তার এই অবাধ স্বাধীন সত্তাকে যিনি যত বেশি হৃদয়জাত করে নিতে পারেন তাঁর হাতেই কিশোর কবিতা প্রাণ পায় বেশি। শফী সুমনের কিশোর কবিতায় আমরা সেই দুরন্ত, অতৃপ্ত কিশোরের দেখা পাই-
বাড়লে বয়স একটুখানি এই না কিশোরকালে
কোলে নিয়ে আদর করে দেয় না চুমু গালে
সবাই কেমন দূরে থাকে নিজের জগত নিয়ে
আমি আছি আমার মতো প্রীতির পরশ নিয়ে।
(কিশোরকাল/ প্রিয় বাংলাদেশ /পৃষ্ঠা -১৫)
কিশোর বয়সটা ঠিক এরকমই। সে তার ভুবনে নিজের মতো থাকতে, নিজের মতো ভাবতে, নিজের মতো স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। এই বিষয় নিয়ে কবি শফী সুমন অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেখেন, একা একা সময় কাটে ঘরের ভেতর বসে সময় কাটে পড়ার ঘরে অংক ছবি কষে সময় কাটাই ছবি এঁকে রবি নজরুল পড়ে খেলার সময় যায় চলে যায় মনটা থাকে ঘরে।
(এক কিশোর / প্রিয় বাংলাদেশ/ পৃষ্ঠা -১৪)
৪. শফী সুমনের কবিতার চিত্রকল্পে তেমন কোনো চমক নেই। সেই চির চেনা, আমাদের ধারে-কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিষয়গুলো নিয়েই গড়ে উঠেছে তাঁর কবিতার শরীর। তবে তাঁর কবিতার চিত্রকল্পে একেবারে নতুনত্ব বা উল্লেখ করার মতো যে কিছইু নেই তা কিন্তু নয়। তিনি কর্মসূত্রে বাংলাদেশের অন্যতম পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটিতে বেশ ক’বছর কাটিয়েছেন। সে সুবাদে হাতে প্রাণ পেয়েছে পাহাড়, পাহাড়ের বিচিত্র জনগোষ্ঠী ও তাঁদের জীবন-জীবিকা সম্পর্কে অনেক কিছু। যেমন, পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য তিনি তুলে ধরেছেন এভাবে-
পাহাড়ি হ্রদের বুকে মাছেরা খেলে
সোহাগী জলে খেলে কিশোরী বধূ
লঞ্চের চলাফেরা ঢেউ ঠেলে ঠেলে
প্রজাপতি ফুলে খোঁজে সোহাগী মধু।
সবুজ পাহাড় বনে প্রাণের ছোঁয়া
গাছের আড়ালে ডাকে রূপালি পাখি
ধান-শীষ বেড়ে উঠে পেয়ে পলি ধোয়া
গাঙচিল উড়ে যায় প্রিয় সুরে ডাকি।
পাহাড়-হ্রদের বুকে জীবনের খেলা
রূপ-রঙ হাসি গানে প্রাণের মেলা।
এখানে জীবন মানে সোহাগী চাদর
ভালোবাসা সুখ হাসি সোহাগ আদর।
পাহাড়ি জনপদের বিচিত্র-বর্ণিল চিত্রকল্পের অসাধারণ রূপায়নের পাশাপাশি তাঁর কিশোর কবিতার আরেকটি বিশেষত্ব গানের বিভিন্ন বিষয় কিশোর কবিতার অনুষঙ্গ করা। তিনি যে একজন উঁচুমানের গীতিকার তা তাঁর কবিতায়ও সুস্পষ্ট।
তারাদের নীল এনে/ কচি কচি খোকাদের/রাঙা মুখে সাজাবো
আকাশের সীমানায় / পাখিদের ঠিকানায় /সুরে গান শোনাবো।
সুরে সুরে কতো গান/ মন করে আনচান/ কী দারুন সুর
সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি/ কতো রাগ রাগিনী/ মায়াবী মধুর
গলাটাকে মিহি করে/ সপ্তমী সুর ধরে/ গেয়ে যাই গান
রবীন্দ্র নজরুল/ স্বরলিপি হলে ভুল/কেঁদে ওঠে প্রাণ
সুর থাকে মনে মনে / মৌমাছি বনে বনে/ যেনো ঘুরে ফিরে
আরোহন সাত সুরে/ অবরোহী আসে ঘুরে/ পাখিদের নীড়ে।
(সুরের খেলায়/প্রিয় বাংলাদেশ /পৃষ্ঠা -২১)
৫. এক সময় আমাদের কবিতায়, আমাদের শিল্পসাহিত্যে নীতিকথা, ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি প্রাধান্য পেতো। গল্পে গল্পে উঠে আসত চরিত্র গঠনমূলক নানা উপদেশ। স্ব স্ব ধর্মের প্রতি ছোটবেলা থেকেই শিশুকিশোরদের অনুরাগী করে গড়ে তোলার প্রয়াস ছিল খুব সুন্দর ও প্রচ্ছন্নভাবে। ঈশপের চিরায়ত গল্পগুলো আজও আমাদের শিশুকিশোরদের শুভ, ন্যায় ও ভালোকাজের অনুপ্রেরণা যোগায়। তাদের কচিমনে পরোপকার, হিতাহিতজ্ঞানের সৃজন করে। শফি সুমনের বেশ কিছু কবিতাতেও কিশোরদের ধর্মপ্রাণ করে গড়ে তোলার প্রয়াস লক্ষনীয়। তাঁর নির্বাচিত কিশোর কবিতাসহ কিশোর কবিতার অন্য ৪টি গ্রন্থে এরকম কোনো না কোনো কবিতা রয়েছে।
যেমন, ১. আদর করে ডাকতো আমায় বলতো উঠো, বাবা
ওজু করে নামাজ পড়ো সামনে রেখে কাবা।
(বাবা/ প্রিয় বাংলাদেশ/ পৃষ্ঠা-১৭)
২. নামাজের শেষে পড়ে কুরআন
কী মধুর সুর ছিল গলাতে
প্রার্থনা শেষ করে আমাদের
ডাক দিতো অপরূপ গলাতে।
(বাবা/ নির্বাচিত কিশোর কবিতা/ পৃষ্ঠা -১৭)
৩. বাবার স্নেহে মানুষ হতে ছুটছো ঘুরে ফিরে
হচ্ছ বড়ো এই সমাজে শান্ত সুখের নীড়ে।
(যখন হবে বড়ো/প্রিয় বাংলাদেশ/পৃষ্ঠা -১২)
৪. ধীরে ধীরে জেগে ওঠে পাখিরা নীড়ের
হলুদাভ চাঁদ ডোবে দেখায় আধেক
গাছের পাতারা নড়ে অপরূপ তালে
কিশোরের মন টানে সুবেহ সাদেক।
(সুবেহ সাদেক/নির্বাচিত কিশোর কবিতা/পৃষ্ঠা -০৩)
ফুল যেমন নিজের জন্য ফোটে না, অন্যের মানসজগতে সুবাস ছড়িয়ে বিমোহিত করতেই তার জন্ম -তার সফলতা। তেমনি শিল্প-সাহিত্যের যে কোনো উপাদান তা গল্প-উপন্যাস, ছড়া-কবিতা, গান যা-ই হোক সব কিছুর উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। আর তা হলো পাঠককে আনন্দদান।তবে সেই আনন্দদান হতে হয় সুস্হ, ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলির মতো। এই আনন্দদানের মাধ্যম যদি কবিতা হয়, বিশেষতঃ কিশোর কবিতা তার দায় থাকে বেশি। কারণ এই কবিতা রচিত ও পঠিত হয় উঠতি বয়সের শিশুকিশোরদের জন্য। তাই তাতে চরিত্র গঠনমূলক বার্তা যদি না থাকে সে কবিতার যতই সাহিত্যগুণ থাকুক তা কখনো মহৎ সৃষ্টি হতে পারে না। তাই সুস্হ, সুন্দর ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ বিনির্মাণে শফী সুমনের মতো কবিতা বেশি বেশি করে রচিত ও পঠিত হওয়া দরকার।