শত বছরে টেলিভিশন এখন প্রতিটি পরিবারে

74

দূর থেকে ছবি ও শব্দ শোনার যন্ত্র হিসেবে উৎপত্তি টেলিভিশনের। সাদা-কালো দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে রঙিন এবং এইচডি ভিডিও উপযোগিতা পেয়েছে টেলিভিশন। এক শতকের যাত্রায় বিভিন্ন রূপ, ধরন ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নানা পরিবর্তন সাধিত হলেও টেলিভিশনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ একই আছে। প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই জায়গা করে নিয়েছে এই টেলিভিশন।
কম্পিউটারের মতো বড় বক্স আকার দিয়ে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে যন্ত্র চলে এসেছে একেবারে হাতের মুঠোয়। যন্ত্রটি বিশেষ পদ্ধতিতে পর্দায় ছবি ফেলতে পিকচার টিউব ব্যবহার করতো। এই পিকচার টিউবের কারণে বড় বক্সের প্রয়োজন পড়তো। ধীরে ধীরে প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে পিকচার টিউব একেবারে ছোট হয়ে এসেছে। বড় বক্স টিভির জায়গায় এখন থিন এলইডি টিভি চলে এসেছে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে পিকচার টিউব এলসিডিতে রূপান্তরিত হয়েছে। একেবারেই পাতলা টিভি চলে এসেছে ঘরে ঘরে। শুধু পিকচার টিউবের আকার বা রূপ পরিবর্তন নয়, পরিবর্তন এসেছে পিকচার কোয়ালিটিতেও। চালু হয়েছে ডিজিটাল টেলিভিশন। প্রযুক্তির এই উন্নয়নের ফলে টিভি স্ক্রিন ও কম্পিউটারের স্ক্রিনের মধ্যে আর পার্থক্য থাকছে না। কম্পিউটারের স্ক্রিনও এলইডি-এলসিডি, টেলিভিশনের স্ক্রিনও এলইডি-এলসিডি হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে টেলিভিশনের ছবির মান আগের চেয়ে অনেকগুণ ভালো হয়েছে। এমনকি চোখের জন্য এটা আগের চেয়ে আরামদায়ক হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেট বেইজ টেলিভিশন চালু হয়েছে। যেটাকে আইপিটিভি বলা হচ্ছে। এর সিগন্যাল ইন্টারনেটের মধ্য দিয়েই যায়। আর আইপিটিভির যেকোনো জায়গা থেকে মানুষ আইপিটিভি অ্যাক্সেস করতে পারছে। ফলে এটা এখন অনেকেই ব্যবহার করতে পারছে।
ছবি ও শব্দের সম্প্রচার একসাথে হওয়াতে টেলিভিশনের আবিষ্কারকের কৃতিত্ব এককভাবে কাউকে দেয়া যায় না। একই সময়ে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান টেলিভিশন উন্নয়নে গবেষণা করে যাচ্ছিল। তবে সবার আগে যিনি প্যাটেন্ট করতে পেরেছেন তিনিই এর আবিষ্কারক। এ বিবেচনায় ইলেকট্রনিক টেলিভিশনের জনক বলা হয় ফিলো ফ্রান্সঅর্থ। তিনিই প্রথম ইলেকট্রনিক সার্কিট দিয়ে অডিও ভিডিও ট্রান্সমিট করতে পেরেছিলেন। এই আবিষ্কারের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯ শতকের শেষ দিকে। তখন থেকেই নানা জন, নানা প্রতিষ্ঠান অডিও ও ভিডিও একসঙ্গে ট্রান্সমিট করার চেষ্টা করে যেতে থাকে। সফলতা আসা শুরু হয় ১৯২৬ সালে, যখন লোগি বেয়ার্ড প্রথম অডিও ভিডিও সম্প্রচারে সফল হোন। এরপর রুশ বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবারগের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে প্রথম টিভি স¤প্রচার শুরু করে বিবিসি। ১৯৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বাণিজ্যিকভাবে স¤প্রচার শুরু হয় টেলিভিশনের।
বাংলাদেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। একটা ছয় কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার স্থাপনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান টেলিভিশনের বাংলাদেশ শাখা বা ঢাকা স্টেশন হিসেবে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
টেলিভিশন আবিষ্কারক বিজ্ঞানী জন লোগি বেয়ার্ডের প্রতি সম্মান রেখে ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ আয়োজিত এক ফোরামে ২১ নভেম্বরকে বিশ্ব টেলিভিশন দিবস হিসেবে পালনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে থেকে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর বিশ্ব টেলিভিশন দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বে টেলিভিশন রয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যা ২০১৭ সালে ছিলো ১.৬৩ মিলিয়ন যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১.৭৪ বিলিয়নে। এদেশে এই মুহূর্তে প্রায় ২৯৮ মিলিয়ন পরিবার টেলিভিশন মাধ্যমের দর্শক। তার মধ্যে ১৯৭ মিলিয়ন পরিবারের নিজস্ব টিভি সেট রয়েছে।