শত একর কৃষিজমি পলিতে চাপা, রাস্তাঘাট পানির নিচে

4

আবেদ আমিরী, কর্ণফুলী

কর্ণফুলী উপজেলার দক্ষিণ শিকলবাহাস্থ ভেল্লাপাড়া ব্রিজের পশ্চিম পাশে গড়ে উঠা কয়েকটি বালুর বিক্রয় কেন্দ্রের পতিত পলিতে চাপা পড়েছে প্রায় শত একর ঊর্বর কৃষিজমি। এ কারণে কৃষি জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। একটি গ্রামের রাস্তাঘাট চলে গেছে পানির নিচে। ফলে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। দেখলে মনে হবে এ গ্রামে সারা বছর বর্ষাকাল বিরাজমান।
পানি নিষ্কাশনের পথ আর জেলা পরিষদের কয়েক কোটি টাকার জমিও চলে গেছে বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। এ অবস্থায় স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) দপ্তরে বালু ব্যবসায়ীদের হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নির্দেশনা অনুসারে ইউএনও’র সাথে দেখা করে সব কাগজপত্র দেখাতে ১ সপ্তাহের সময় নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বালু ব্যবসায়ীরা। এসব বালু মহালের কাগজপত্র পর্যালোচনার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও শাহিনা সুলতানা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিকলবাহা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডস্থ আদর্শপাড়া গ্রাম এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, বিগত দুই বছর ধরে কয়েকটি বালুর সেলস সেণ্টারের পানি নিষ্কাশন পথ দিয়েছে কৃষি জমির উপর। এসব পানির সাথে বালু থেকে পলি পানির সাথে আলাদা হয়ে গিয়ে পড়ছে কৃষি জমিতে। এর ফলে কৃষি জমিতে পলির আস্তরণ জমতে জমতে এখন কৃষি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গ্রামের পানি ও বালু মহাল থেকে ছেড়ে দেয়া পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় রাস্তাঘাট সারা বছর ডুবে থাকে পানিতে।
কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের পাশেই অবস্থিত এ গ্রামের বাসিন্দারা সারা বছর পানিতে তলিয়ে থাকা গ্রামের রাস্তাঘাট নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কৃষি জমিতে দিন দিন আস্তরণ আরো বাড়ছে। বেকার হয়ে পড়েছেন গ্রামের কৃষকেরা। শহরতলীর এ গ্রাম দেখলে মনে হয় কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের অজপাড়া গ্রাম। গ্রামের লোকজন মসজিদ আর শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পোষাকে স্কুল ও কলেজে যেতে পারছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আল আমিনের বালু মহালে গেলে সেখানের উপস্থিত তত্ত¡াবধায়ক মোহাম্মদ মামুন জানান, এসব বালু মহালের দায়িত্ব আমার বা আমাদের নয়। আমি এনডিই’র পক্ষে বালু নিয়ে যাচ্ছি। কৃষি জমিতে পলিপড়া, রাস্তাঘাটের দুর্ভোগের দায় আমাদের নয়। এসব দায় বালু মহালের মালিকদের।
কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এসব বালু মহালের কারণে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জোয়ার আর বালুর সেলস সেণ্টারের পানি আমার ঘরেও মাঝে মধ্যে উঠে যায়। পুরো একটি জমি বালুর সেলস সেণ্টারের কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার আমরা। পানি নিষ্কাশনের সব পথই বন্ধ করে দিয়েছে বালু ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আহব্বান জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী জানান, জনগণের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না। এ বিষয়ে লোকজন সুরাহা চেয়ে পরিষদে এসেছিল এবং এ বিষয়ে করণীয় কি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কর্ণফুলী উপজেল নির্বাহী অফিসার শাহিনা সুলতানা জানান, এলাকাবাসীর একটি অভিযোগ তদন্তের জন্য ভূমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদনও পাওয়া গেছে। রবিবার (গতকাল) বালু ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা এসেছিল। তবে সব কাগজপত্র দেখাতে তারা ১ সপ্তাহের সময় নিয়েছেন। কাগজপত্র পর্যালোচনার পর এ বিষয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।