শতভাগ গ্যাস আমদানির দিকে ঝুঁকছে দেশ

4

শতভাগ গ্যাস আমদানির দিকে ঝুঁকছে দেশ। নতুন করে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বড় সাফল্য না পাওয়া আর দ্রুত মজুত ফুরিয়ে আসার কারণে ক্রমে আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। আগামি ১০ বছরের মধ্যে চাহিদার পুরো গ্যাস আমদানি করেই চালাতে হবে।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট গ্যাস মজুতের পরিমাণ ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এরমধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুতের পরিমাণ ৩০ টিসিএফ। এখন পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫৩ টিসিএফ। অবশিষ্ট আছে ১১ দশমিক ৫২ টিসিএফ।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এখন প্রতি বছর গড়ে এক টিসিএফ করে গ্যাস উত্তোলন হয়ে থাকে। অর্থাৎ অবশিষ্ট মজুদে আর ১০ বছর মতো চলবে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে প্রতি বছরই গ্যাস উত্তোলন ক্ষমতা কমে আসবে। এতে করে শেষের বছরগুলাতে সংকট আরও প্রকট হবে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে আসলে আনুপাতিক হারে আমদানি বাড়াতে হবে।

কোন খনির কি অবস্থা ?

বাপেক্স-এর ৮টি গ্যাস ক্ষেত্রের মোট মজুত ১ দশমিক ৪৬ টিসিএফ থেকে ৪৭৩ বিসিএফ তোলা হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে ৯৮৭ বিসিএফ। খনিগুলোর মধ্যে বেগমগঞ্জে মজুত ৩৩ বিসিএফ এর মধ্যে তোলা হয়েছে ৬ বিসিএফ। অবশিষ্ট রয়েছে ২৬ বিসিএফ। শাহবাজপুরে ২৬১ বিসিএফ এর মধ্যে ৬৮ বিসিএফ তোলা হয়েছে। অবশিষ্ট মজুতের পরিমাণ ১৯২ বিসিএফ।
সেমুতাং-এ মজুত ৩১৮ টিসিএফ-এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৭ তোলা হয়েছে, মজুত রয়েছে ৩০৪ বিসিএফ। ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২৯ বিসিএফ মজুতের ১৬২ তোলা হয়েছে মজুত রয়েছে ১৬৬ বিসিএফ। সালদা নদীতে ২৭৫ টিসিএফ-এর মধ্যে ৯৫ দশমিক ১ তোলা হয়েছে বাকি রয়েছে ১৮০ বিসিএফ। শ্রিকাইলে ১৬১ বিসিএফ এরমধ্যে ১০৮ তোলা হয়েছে অবশিষ্ট মজুত ৫৩ টিসিএফ। সুন্দলপুরে ৫০ দশমিক ৫ বিএসএফ এরমধ্যে ১৮ তোলা হয়েছে অবশিষ্ট রয়েছে ৩২ বিসিএফ। রূপগঞ্জে ৩৩ দশমকি ৬ বিসিএফ মজুত থাকলেও এখনও তোলার কাজ শুরু হয়নি।
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির মোট মজুত ১২ দশমিক ২৫২ টিসিএফ, এরমধ্যে তোলা হয়েছে ৮ দশমিক ৭৬৮ টিসিএফ। বাকি রয়েছে ৩ দশমিক ৪৮৪ টিসিএফ।
খনিগুলোর মধ্যে মেঘনায় ১০১ বিসিএফ এর মধ্যে ৭৬ বিসিএফ তোলা হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে ২৫ বিসিএফ। নরসিংদীতে ৩৪৫ এর মধ্যে ২২২ তোলার পর ১২৩ বিসিএফ অবশিষ্ট রয়েছে। কামতায় ৫০ বিসিএফ এরমধ্যে ২১ তোলা পর ২৯ বিসিএফ গ্যাস রয়েছে। হবিগঞ্জে দুই দশমিক ৭৮৭ টিসিএফ মধ্যে ২ দশমিক ৫৮৮ টিসিএফ তোলা হয়েছে। বাকি রয়েছে ১৯২ বিসিএফ। বাখরাবাদে ১ দশমিক ৩৮৭ টিসিএফ এরমধ্যে ৮৮৫ বিসিএফ তোলার পর ৫৪২ বিসিএফ বাকি রয়েছে। দেশের সব চাইতে বড় ক্ষেত্র তিতাসের ৭ দশমিক ৫৭২ টিসিএফ এর মধ্যে ৫ দশমিক ০১৫ টিসিএফ। অবশিষ্ট রয়েছে ২ দশমিক ৫৬৭ টিসিএফ।
শেভরণ বাংলাদেশের তিন ক্ষেত্রের মোট মজুত ৯ দশমিক ৭৪২ টিসিএফ। উত্তোলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ৪৫৩ টিসিএফ। বাকি রয়েছে ৩ দশমিক ২৮৯ টিসিএফ। শেভরণের বিবিয়ানাতে এখনও ২ টিসিএফ এর একটু বেশি, মৌলভীবাজারে ১৫৮ বিসিএফ এবং জালালাবাদে এক দশমিক ২৬ টিসিএফ মজুত অবশিষ্ট রয়েছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মোট মজুতের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩৩ টিসিএফ এরমধ্যে এক ১ দশমিক ৭৮৪ টিসিএফ তোলা হয়েছে। এখানের ৫টি খনিতে এখনও মজুত রয়েছে ৫ দশমিক ২৪৯ টিসিএফ। এখানের পাঁচটি খুন হচ্ছে কৈলাসটিলা, সিলেট, রশিদপুর, ছাতক এবং বিয়ানীবাজার। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এছাড়া বাংগুরাতে ১১৮ বিসিএফ, ফেনিতে ৬৭ বিসিএফ মজুত রয়েছে।

ক্রমান্বয়ে কমছে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন

পেট্রোবাংলা বলছে- প্রতি মাসেই দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। খনিগুলো থেকে প্রতিমাসে দুই থেকে ৮ ভাগ হারে গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। এখন দৈনিক ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) দেশীয় গ্যাস তোলা হচ্ছে। গত পাঁচ বছর আগেও দেশে প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হতো। কিন্তু এখন তা কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গত দশ বছরে দেশে বড় কোনও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাত্রার (টু ডি, থ্রি ডি) জরিপের ফলাফলে সাড়া জাগানো কোনও খবর আসেনি।

সংকট সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা

আগামি কয়েক বছর দেশে যে গ্যাসের ঘাটতি হবে তার পুরোটা আমদানি করেই চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকার মহেশখালীতে প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের জন্য ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করেছে। পায়রাতেও এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির জন্য টার্মিনাল করা হচ্ছে। কিন্তু এখন দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে সর্বোচ্চ প্রতিদিন তিন হাজার ৭০০ এমএমসিএফডি। ফলে পায়রা এবং মহেশখালীর টার্মিনালে সার্বক্ষণিক পুরোদমে আমদানি করা হলেও ঘাটতি থাকবে।
জ্বালানি সচিব মো. আনিছুর রহমান সাম্প্রতিক একটি সেমিনারে বলেন, আমরা গ্যাস অনুসন্ধানে নজর দিচ্ছি। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন হাইপ্রেসার জোনে কাজ করতে। কিন্তু সেখানে কাজ করা যায় কি না দেখা হচ্ছে। এজন্য নতুন প্রযুক্তি খোঁজা হচ্ছে। প্রয়োজনে বাপেক্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করা যায় কি না তা দেখা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, সরকারের উচিত হবে খুব দ্রুত সংকট সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া। নাহলে হুট করেই এমন সংকট সৃষ্টি হবে যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, দেশে বেশি বেশি অনুসন্ধান কাজ চালানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানির একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।