শতফুট ব্যবধানে জটিলতা বহুগুণ!

57

ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা হয়ে ভারতবর্ষের সব রাজ্যে যাতায়াত খরচ কম। ট্রেন ও বিমান ভাড়াও নাগালের মধ্যে। যাত্রীসংখ্যা একের অধিক হলেই ভারত ঘুরতে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তকেই বেছে নেন সবাই। ঢাকা থেকে সরাসরি আগরতলা পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু আছে। চট্টগ্রাম থেকেও ট্রেনে আখাউড়া নেমে আগরতলা সীমান্তে যেতে সময় লাগে কম। যে কারণে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের কদর দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন এ বর্ডার দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করছেন তিন থেকে পাঁচ শতাধিক যাত্রী। পাশাপাশি আগরতলার বাজার দখল করেছে বাংলাদেশি সিমেন্ট, কয়লা, প্লাস্টিক সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।
প্রতিনিয়ত এ স্থলবন্দরের গুরুত্ব বাড়লেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া অংশের কাস্টমস-ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। অবকাঠামোভাবেও আখাউড়ার চেয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে আগরতলার ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস। আখাউড়ায় সরু ও জরাজীর্ণ ভবনেই যাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। যে কারণে অধিক সময় ইমিগ্রেশনেই ব্যয় করতে হয় যাত্রীদের। অথচ মাত্র শতফুট ব্যবধানের আগরতলা অংশের ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে বিশাল এলাকাজুড়ে অবকাঠামো নির্মাণ করে আগরতলা স্থলবন্দর প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আগরতলা সফরে যাওয়া চট্টগ্রাম জার্নালিস্ট স্পোর্টস ক্লাবের সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার খিরিটি চাকমার সাথেও কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘এদিক থেকে বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ সহজ। আমরা প্রতিদিন আগরতলায় দুই থেকে তিন শতাধিক লোককে ভিসা দিচ্ছি। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর মানুষ আগরতলা হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়া-আসা করছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই চিকিৎসার জন্য ভারতে আসছেন।’ বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন সিস্টেমের সাথে আগরতলার পার্থক্যের কথা তুলে ধরতেই তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ অনেকদিন যাবত শুনছি। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’
আগরতলা হাইকমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি মো. জাকির হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আগরতলায় বাংলাদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। ত্রিপুরার সাথে আমাদের দেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হচ্ছে। ট্রেড কিংবা কালচারাল যোগাযোগটা বেশি। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে আমাদের ইন্টারেস্টটা একটু বেশি। বিনিয়োগের টাকা ফেরত আসবে সে নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে বিনিয়োগ বাড়াবেন ব্যবসায়ীরা। এতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কটাও আরো বাড়বে। বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় বেশি পণ্য আসে। সে তুলনায় ভারত থেকে বাংলাদেশে যায় কম। ত্রিপুরার মানুষ বাংলাদেশকে খুব বেশি সাপোর্ট করে।’
সূত্র জানায়, আগরতলার বাজারে বাংলাদেশের সিমেন্ট, কয়লা ও প্লাস্টিক সামগ্রীর কদর বেশি। এছাড়াও শিশুখাদ্য চকলেট, চিপস জাতীয় খাবারের বাজার দখল করে আছে বাংলাদেশি পণ্য। দেশের নামিদামি সব কোম্পানির পণ্য আগরতলায় পাওয়া যায়। ত্রিপুরার নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যই যায় বাংলাদেশ থেকে। চলমান আখাউড়া-আগরতলা রেললাইনের কাজ শেষ হলে পণ্য পরিবহন আরো বাড়বে। পণ্যের দাম আসবে নাগালে।
রেললাইনে আশার আলো : বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ চলছে। আগরতলা অংশে পাঁচ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১০ কিলোমিটারজুড়ে এ রেললাইন হবে। রেলপথটি আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর সীমান্ত দিয়ে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে যুক্ত হবে। এ রেলপথটি নির্মিত হলে ত্রিপুরার সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব কমবে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার। এখন অধিকাংশ ভ্রমণকারী বিমানের বাড়তি ভাড়া কমাতে আগরতলা রুটকেই ব্যবহার করেন। আগরতলা-আখাউড়া রেললাইনের কাজ শেষ হলে ভ্রমণকারীরা ভারত ঘুরতে এ রুটকেই বেছে নিবেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ অংশের ১০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি এ রেলপথ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ৪৭৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পের অর্থ যোগান দিচ্ছে ভারত।