শঙ্কা ছাপিয়ে উপস্থিতি ৭০ শতাংশের বেশি

7

আসহাব আরমান

দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে ছিল এক ধরনের শঙ্কা। দীর্ঘ বন্ধে বিভিন্ন কাজে শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে পড়া, পরিবারের স্থানান্তর, কঠোর স্বাস্থবিধিসহ নানা কারণে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। তবে এসব ছাপিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। স্কুল খোলার প্রথম সপ্তাহে উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও সময় বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়ছে। চট্টগ্রামের উপজেলা ও নগরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশের বেশি। তবে প্রাথমিকের কিছু শিক্ষার্থী স্কুল পাল্টিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে দুই হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে দুই শিফটে পাঠদান চলমান রয়েছে। প্রথম শিফটে উপস্থিতি কিছুটা বেশি থাকে। এ শিফটে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৭৬ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং দ্বিতীয় শিফটে ৭২ দশমিক ২৮ শতাংশ। চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে বাঁশখালীতে ৭৩ শতাংশ, রাউজানে ৭৪ শতাংশ, স›দ্বীপে ৭৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, ফটিকছড়িতে ৭৫ শতাংশ, পটিয়ায় ৭৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, আনোয়ারায় ৮২ দশমিক ২৮ শতাংশ, বোয়ালখালীতে ৮০ শতাংশ, লোহাগাড়ায় ৭১ দশমিক ১৭ শতাংশ, চন্দনাইশে ৭৫ শতাংশ, হাটহাজারীতে ৮৩ শতাংশ, রাঙ্গুনিয়ায় ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, মিরসরাইয়ে ৮৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, সীতাকুন্ডে ৮১ শতাংশ, সাতকানিয়ায় ৮৫ শতাংশ এবং কর্ণফুলী উপজেলায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৮৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে নগরীর ডবলমুরিং থানায় উপস্থিতি ৬৫ শতাংশ, পাহাড়তলী থানায় ৭৬ শতাংশ, বন্দর থানায় ৮৫ শতাংশ, পাঁচলাইশ থানায় ৬৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, চান্দগাঁও থানায় ৬২ শতাংশ এবং কোতোয়ালি থানায় ৭৯ শতাংশ।
বাঁশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আকলিমা নাসরিন পূর্বদেশকে বলেন, প্রথমদিকে উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। ধীরে ধীরে উপস্থিতি বেড়েছে। আমরা প্রতিদিনের উপস্থিতির তথ্য গুগল ডকুমেন্টের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমার বিদ্যালয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হার ৭০ শতাংশের বেশি। শিক্ষার্থীর অসুস্থতার খবর খুব একটা নেই। দুয়েকজন শিক্ষার্থীর সামান্য জ্বর হলেও তারা সুস্থ হয়ে এখন নিয়মিত ক্লাস করছে।
এদিকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত কিছু শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিবার স্থানান্তরের কারণে কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয় পরিবর্তন করেছে। আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে গেছে।
স›দ্বীপের উড়িরচর ইউনিয়নের নবদিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জেসমিন বেগম পূর্বদেশকে বলেন, চর এলাকা হলেও আমার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক। কম বয়সী শিক্ষার্থী হওয়ায় অনেকের মাস্ক পড়তে অনীহা রয়েছে। আমরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত মাস্ক দিচ্ছি এবং মাস্ক পরতে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছি। তবে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী স্কুল বাদ দিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। কেউ কেউ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রাম জেলা ও নগরের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা উৎসাহের সাথে বিদ্যালয়ে আসছে। উপস্থিতি ৭৫/৮০ শতাংশের কাছাকাছি। বিদ্যালয়গুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টা নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। স্বাস্থবিধি মানার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমরা এখনও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন হাতে পেলে অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে জানতে পারবো।