শঙ্কা ও উদ্বেগের উপ-নির্বাচন আজ পরৈকোড়ায়

8

আনোয়ারা প্রতিনিধি

নানান শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আনোয়ারা উপজেলার ৯নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের উপ-নির্বাচন। নির্বাচনের একদিন আগে নৌকার প্রার্থী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
গত সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনায় স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের নাজিম উদ্দিন সুজন এবং আনারস প্রতীকের মোহাম্মদ আলীর দুই শতাধিক সমর্থকের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন পরৈকোড়া ইউনিয়নে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল। সব মিলিয়ে পরৈকোড়া নির্বাচনী এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না। ভোটাররা নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভোটকেন্দ্রে একজন নির্বাহী ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এক প্লাটুন বিজিবি ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। অতীতের ন্যায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
পরৈকোড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আজিজুল হক চৌধুরী বাবুল। অপর পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন পরৈকোড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনারস প্রতীকে মো. আলী চৌধুরী, মোটরসাইকেল প্রতীকে নাজিম উদ্দীন সুজন, ঘোড়া প্রতীকে হাসান জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী, টেলিফোন প্রতীকে মো. নাজিম এবং চশমা প্রতীকে মো. মানিক।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজিম উদ্দীন সুজন বলেন, মনোনয়নের পর থেকে নৌকার প্রার্থীর লোকজন আমাদের প্রচার-প্রচারণায় বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করেছেন। গত ১৩ জুন আমার এবং আমার কর্মীদের উপর হামলা করে। দেখে দেখে আমার এজেন্টদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। নির্বাচনী এলাকায় একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তারা। ফলে সাধারণ ভোটাররা খুবই শঙ্কিত। এবিষয়ে আমি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী পরৈকোড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনারস প্রতীকের মো. আলী চৌধুরী বলেন, শুরু থেকে বহিরাগতরা এলাকায় সাধারণ ভোটারদের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। আমার কর্মী-সমর্থকদের গণহারে গ্রেপ্তার করছে। এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। নির্বাচন কমিশনের নিকট আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করছি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আজিজুল হক চৌধুরী বাবুল বলেন, গত ১৩ তারিখ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার নির্বাচনী প্রচারণা থেকে ফেরার পথে আমার সমর্থকদের উপর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা করে ১৫ জনকে আহত করেছে। নির্বাচনে আতংক সৃষ্টি করতেই এগুলো করা হচ্ছে। আমি দীর্ঘ ১৩ বছর এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম এবং গত ৬ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তাই আমি নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তারা শুরু থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানানভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম দিদারুল ইসলাম সিকদার জানান, নির্বাচনের দিন প্রার্থীরা যাতে কোনো ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে না পারে এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। আমরা সবক’টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। আশাকরি আমরা বরাবরের মত এবারও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারব।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি ৫ম ধাপের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরৈকোড়া ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মামুনুর রশীদ চৌধুরী আশরাফ। এরপর গত ৫ মার্চ শারীরিক অসুস্থ অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করলে নির্বাচন কমিশন সেখানে উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।