শক্ত খুঁটির মজবুত ভিত্তি নেতাদের!

34

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। একেকটি কমিটি গঠিত হয়েছে ৫ থেকে ২৬ বছর আগে। নগরের ওয়ার্ড ও থানা কমিটির অবস্থাও একই। সংগঠনের সম্মেলনের তোড়জোড় শুরু হলেই অজ্ঞাত কারণে থমকে যায়। আবার মাঝেমধ্যে কয়েকটি সম্মেলন করেই কেন্দ্রকে খুশি রাখেন চট্টগ্রামের নেতারা। শুধু চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নয়, সহযোগী সংগঠনের অবস্থাও একই।
সম্প্রতি মহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও স্থগিত করা হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দীর্ঘদিন ধরে পদে থাকা এবং নিয়মিত সম্মেলন না করা নিয়ে বিভিন্ন সভায় কেন্দ্রীয় নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সভায় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে একটি বাসনা জন্ম নিয়েছে। সেটি হচ্ছে জীবনে একবার পদ পেলে সেই পদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর ছাড়বো না। আমার চেয়ে ভালো সংগঠক, ভালো আওয়ামী লীগ আর নেই। একমাত্র আমিই ভালো, আমাকে যারা ভাই ভাই বলেন, কুর্নিশ করেন তারাই সহি আওয়ামী লীগার। আর যারা মিছিল করেন, নিজের খেয়ে নেতার জন্য কাজ করেন সেই সমস্ত কাউকে আওয়ামী লীগ করতে দিব না। এমন অহমিকা আমাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। এদের ত্যাগ করতে হবে।’
নেতাকর্মীরা বলছেন, নেতারা একবার পদে বসতে পারলে আর ছাড়তে চায় না। নগর আওয়ামী লীগে সম্মেলন নিয়ে গত দুটি বছর নানা অজুহাতে মেতেছিলেনে নেতারা। একপক্ষ সম্মেলনের আয়োজন করলে, আরেকপক্ষ স্থগিত করেন। গ্রুপিংয়ের ফাঁদে বন্দি নগর আওয়ামী লীগ। নেতারা যেভাবে বছরের পর বছর দলের দায়িত্বে টিকে রয়েছেন, তাতে বুঝা যায় তাদের ভিত্তি গভীরে। অপরপক্ষটি আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে সরাতে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অবস্থার প্রেক্ষিতে বুঝে যায়, নেতাদের শক্ত খুঁটির মজবুত ভিত্তি থাকায় দুটি পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনঢ় আছেন। কেউ চাইলেও যখন তখন কমিটি ভাঙাগড়া করতে পারছেন না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে নগর সম্মেলন হচ্ছে না। এরমধ্যে আমরা ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করবো। এরপরেই কেন্দ্রের নির্দেশনা মতে নগর সম্মেলন হবে। কেন্দ্র যেভাবে নির্দেশনা দিবে সেভাবে সবকিছু হবে।’
সর্বশেষ ২০১৩ সালে মহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হয়েছিল। কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত দেয়া হলেও জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতারা নানা ছলছাতুরিতে সম্মেলন পিছিয়ে দেন। এ পর্যন্ত নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন পিছিয়েছে তিনবার। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন তারিখ চারবার পিছিয়ে পঞ্চবারের আনুষ্ঠানিকতা চলছে। দক্ষিণ জেলার আওতাধীন চারটি উপজেলায় সম্মেলনের আয়োজন চলছে। ২৬ বছর পর বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন হলেও কাউন্সিল অধিবেশন হয়নি। দ্বিতীয় অধিবেশন হবে ১০ ডিসেম্বর সকালে। বোয়ালখালীতে আজকে সম্মেলন হবে। পরবর্তীতে টানা দুইদিন আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের এমন তোড়জোড়েও দক্ষিণ জেলার সম্মেলন নিয়ে শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১০টি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন আছে। মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ। চট্টগ্রামের তিন ইউনিটেই এসব সংগঠনের কোনটির নিয়মিত কমিটি নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব সংগঠনের সম্মেলন হচ্ছে না। সম্প্রতি যুবলীগের সম্মেলন হলেও দক্ষিণ জেলা ছাড়া মহানগর ও উত্তর জেলার কমিটি সাত মাসেও গঠিত হয়নি। কেন্দ্রের সম্মেলন হলেও জেলা ও উপজেলায় এসব সংগঠনের নিয়মিত কমিটি হয় না।
মহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামের শক্তিশালী ইউনিট। কিন্তু এই ইউনিটে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সব সংগঠনে একপ্রকার স্থবিরতা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নেতারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। সংগঠনে সম্মেলনের আয়োজন হলেও তা প্রতিবার স্থগিত হয়। দক্ষিণ জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তোড়জোড় চলছে। কিন্তু যতক্ষণ সম্মেলন হয়নি ততক্ষণ সম্মেলন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। জেলা সম্মেলনের আগে চারটি উপজেলার সম্মেলন শেষ হবে। প্রত্যেক সংগঠনের নিয়মিত কমিটি হলেই নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হয় না বলে তিনি মনে করেন।’