শক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় মাঠে আ.লীগ-বিএনপি

8

ঢাকা প্রতিনিধি

জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠে বড় দলগুলোর শক্তি প্রদর্শনের মহড়া এদেশে নতুন কিছু নয়। দলীয় শক্তি প্রদর্শনে অনেক আগেই মাঠে নেমেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার থেকে মাঠে নামল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। রাজধানীতে গতকাল অনুষ্ঠিত হলো দলটির ঢাকা জেলা সম্মেলন। এই সম্মেলনে ২ লাখেরও বেশি নেতাকর্মী জমায়েত করে বিএনপিকে দেখিয়ে দেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়ে রাখে আওয়ামী লীগ। সম্মেলনে মিছিল নিয়ে যোগ দেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরের বাণিজ্য মেলার পুরানো মাঠে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। সকাল থেকেই রাজধানীর চারপাশ থেকে হাজারো নেতাকর্মী সম্মেলন স্থলে আসার জন্য জড়ো হন। ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে যায় সম্মেলনস্থল রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরের বাণিজ্য মেলার পুরানো মাঠ।
অন্যদিকে গতকাল রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পরেও সমাবেশে নেতাকর্মীর ঢল নামে। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার, পুলিশের গুলিতে ৫ নেতা-কর্মী নিহতের প্রতিবাদে রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল রংপুর।
জানা যায়, শনিবার সকাল থেকেই রংপুর শহর পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।শহরের রাস্তাজুড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। মিছিল আর স্লোগানে মুখর পুরো শহর। মিছিলগুলোতে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানও দেওয়া হচ্ছে।
রংপুরে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জমায়েতের ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বিএনপি। বড় দুই দলের এই শক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
জানা যায়, এর আগে কয়েকটি বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতি নিয়ে উচ্ছ¡সিত বিএনপিকে ব্যাপক জনসমাগম দেখিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দীর্ঘ আট বছর পর গতকাল ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে বেছে নেয় দলটি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সাবেক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে বিএনপিকে সরকারের জনপ্রিয়তার বিশেষ বার্তাটি দেয় আওয়ামী লীগ। এর আগে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছিলেন, জনসমাগম কাকে বলে তা আজ (গতকাল) বিএনপিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার এ আলোচনা সভায় বলেছিলেন, সবকিছু বন্ধ করেও আমাদের সমাবেশে জনস্রোত ঠেকানো যাবে না।
এদিকে রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের এক দিন আগে হঠাৎ করে জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটের কারণে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিএনপির নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার পর রংপুরেও সরকারের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেই ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের অনেকেই এক দিন আগেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন। সমাবেশের জন্য জেলা স্কুল মাঠ চেয়ে বিএনপি আবেদন করলেও মহানগর পুলিশ মৌখিক অনুমতি দিয়েছে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। দলীয় নেতাকর্মীরা হেঁটে রংপুরের গণসমাবেশে অংশ নিতে আগে থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে রওনা দেন। কেউ কেউ চিড়া-মুড়ি-গুড়সহ সঙ্গে এনেছেন কাঁথা-কম্বল। বৃহস্পতিবার অনেক নেতাকর্মীই আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাস, স্বজন-পরিজন ছাড়াও নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান নেন।

বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ গিলে খাবে
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গতকাল প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় রিজার্ভই ছিল না। তারা রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছিল। বিএনপি এ দেশের অর্থনীতি গিলে ফেলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ গিলে ফেলেছে। এবার যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে দেশ গিলে খাবে। তাই বিএনপি থেকে সাবধান। বড় লোকের বাসার সামনে লেখা থাকে, কুকুর হইতে সাবধান। আমরা বলছি, বিএনপি হইতে সাবধান।
রংপুরে বিএনপির সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা জানেন রংপুরে একটি সমাবেশ হচ্ছে। সেখানে তিন দিন আগে থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে স্টেজে শুয়ে আছেন, মাঠে শুয়ে আছেন, রাস্তুায় শুয়ে আছেন। আর টাকার বস্তুার ওপর শুয়ে আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনের নামে টাকা আসছে, আর তারা টাকার ওপর শুয়ে আছেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, বিএনপির সম্মেলনে ক’জন লোক হয়েছে তা আমরা দেখেছি। আজকে (গতকাল) শুধু ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে কত লোকজন হয়েছে তা আপনারা দেখে যান। এখানে আমাদের নেত্রী নেই। তারপরও কত লোক হয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার চেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। গত ৪৭ বছরে দেশের সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সাহসী নেতার নামও শেখ হাসিনা।
বিএনপির নির্বাচনে আসা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। যাবেন, যাবেন। গাধা পানি ঘোলা করে খায়। সময় আসলেই দেখা যাবে বিএনপি নির্বাচনে যায় কি না।
সম্মেলনে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে বেনজীর আহমেদকে সভাপতি এবং পনিরুজ্জামান তরুণকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এর আগে দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হয়।

দুর্ভিক্ষ হলে সব দায় শেখ হাসিনার
দেশে দুর্ভিক্ষ হলে সব দায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রংপুরের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, এখন কঠিন দুঃসময়। দেশে দুর্ভিক্ষ হলে মানুষ কোথায় যাবে? দেশে দুর্ভিক্ষ হলে সব দায় শেখ হাসিনার। ১৯৭৪ সালেও শেখ হাসিনার বাবার আমলে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ না খেয়ে মারা গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার সব খেয়ে ফেলেছে, কিছু বাকি রাখেনি। ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমাদের যত অর্জন ছিল, যত স্বপ্ন ছিল, সব ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেদিকে তাকাই শুধু চুরি আর চুরি। রাস্তুাঘাট, ব্রিজ করতেও চুরি হয়। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা এমনকি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিতেও টাকা দিতে হয়। এই সরকার সব খেয়ে ফেলেছে কিছু বাকি রাখেনি। এই সরকার সর্বভুক সরকারে পরিণত হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার মিথ্যা মামলায় আটকে রেখেছে দাবি করে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, দলীয় ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আলেম-ওলামাদেরও হয়রানি করতে ছাড়েনি।
এই সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াতে চেয়েছিল এই সরকার। এখন চালের কেজি ৬০ টাকা। ডাল, ডিম, চিনিসহ শাক-সবজির দামও আকাশচুম্বী। সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, কিন্তু আমরা দেখছি আপনারা চিতল মাছ খান। বিদেশে যান। এসি রুমে থাকেন। শুধু মুখে বড় বড় কথা বলেন আপনারা। এ সময় জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করতে প্রস্তুত জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে সংসদ থেকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আমাদের এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না এবং নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও যশোরে পাঁচ নেতাকর্মী নিহত এবং সারা দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে প্রতিটি বিভাগে সমাবেশ করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় গণসমাবেশ করে দলটি।