শওকত ওসমান জীবনকে সংগ্রাম হিসেবে দেখেছেন

136

কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মদিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. অনুপম সেন বলেন, শওকত ওসমান ছিলেন ব্রিটিশ-পাক-বাংলা তিন আমলের কালের সাক্ষী। ছাত্রজীবনে অর্থনীতির ছাত্র হলেও সমগ্র শিক্ষকতা জীবনে তিনি ছিলেন বাংলার শিক্ষক। এ দৃষ্টান্ত খুব কম মানুষের জীবনে ঘটে। শওকত ওসমান উপন্যাস, নাটক, সমালোচনাধর্মী রম্য রচনা, শিশু সাহিত্যে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তার লেখনীতে ছিল শাসকদের বোকা বানানোর মুন্সিয়ানা। তিনি সমাজকে খুব গভীরভাবে, জীবনকে সংগ্রাম হিসেবে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি প্রতিবাদমুখর ছিলেন এবং স্বেচ্ছায় দেশান্তরী হন।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে গবেষক ড. মাহবুবুল হক বলেন, অনন্য বিশিষ্টতা নিয়ে শওকত ওসমান বাংলা সাহিত্যে সমাদৃত। পাকিস্তানী সামরিক শাসনের আমলে তিনি ক্রীতদাসের হাসি লিখলেন। ক্রীতদাসের হাসিতে তিনি বাগদাদ-ইরান-বাদশা হারুনুর রশিদের আবহ আনলেন। তিনি তুলে ধরলেন ক্রীতদাসের মুখে যতই কপট হাসি থাকুক শাসকের কাছে শোষক সবসময় ক্রীতদাসই। তার এই রচনায় বিভ্রান্ত হয়ে শাসক শ্রেণি তাকে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার দেন। শাসক শ্রেণি যখন বুঝতে পারে ক্রীতদাসের হাসি পাকজান্তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, তখন আর কিছুই করার ছিল না। কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সদস্য সচিব ফরিদ মাহমুদ। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে জনপ্রশাসনমন্ত্রী জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রয়াণে শোক প্রকাশ ও গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে ড. আহমেদ মাওলা রচিত গদ্যপদ্য জীবনী গ্রন্থ শওকত ওসমান এবং শওকত ওসমানের উপন্যাস বিষয় ও শিল্পরূপ গ্রন্থ দু’টির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সূচনা বক্তব্যে ড. আহমেদ মাওলা বলেন, এ যুগে লেখকের সামাজিক দায়বদ্ধতা খুবই অভাব। শওকত ওসমানের লেখার প্রতিটি বিষয়ে ছিল সামাজিক দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্রের প্রতি মমত্ববোধ। ষাটের দশকে বাঙালির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে যে রেঁনেসা যুগ, সে যুগের কারিগর ছিলেন শওকত ওসমান। মুক্তিযুদ্ধে যে পাশবিক নির্যাতন হয়েছিল ঐ সময়টাকে তিনি জাহান্নামের সাথে তুলনা করেছেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি নাজিমুউদ্দিন শ্যামল। উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, দেওয়ান মাকসুদ, পিনাকি দাশ, কাউন্সিলার ফারহানা জাবেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবৃত্তিকার মো. সাহাবুদ্দিন। খবর বিজ্ঞপ্তির