লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ ৬০ হাজার গ্রাহক

18

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিউমার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, খাতুনগঞ্জ হয়ে চকবাজার পর্যন্ত ১০টি ফিডার রয়েছে পাথরঘাটা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের। আবার এর মধ্যে রয়েছে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, মেমন মাতৃসদন হাসপাতালসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকট থাকায় এসব এলাকায়ও লোডশেডিং করতে হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এছাড়া টেরিবাজার ও হকার্স মার্কেটের প্রবেশপথ সরু বা সংকীর্ণ হওয়ায় লাইনে কোন ফল্ট হলে দ্রুত সারিয়ে তোলা যায় না। এমনকি বিদ্যুৎ প্রকৌশলীদের গাড়ি ঢুকতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়। এতে সময়মত কাজ সারিয়ে তোলা যায় না। এতে মার্কেট বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয় অথবা নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে কাজ চালাতে হয়। গতকাল বুধবার পাথরঘাটা এলাকা ও বিতরণ বিভাগে গেলে চাহিদা, সরবরাহ ও সমস্যার নানা বিষয় উঠে আসে।
জহুর হকার্স মার্কেটের দোকানি মো. সাইফুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। দোকান অন্ধকার থাকায় কোন ব্যবসা বাণিজ্য হচ্ছে না। সন্ধ্যা হওয়ার আগে কোন জেনারেটর চলে না। এমন অবস্থায় আমাদের আয় না হওয়ায় খুবই চিন্তিত।’
পুরো জোনের চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ থাকায় ৩/৪ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, পাথরঘাটা জোনটিতে ১০ ফিডার মিলে বিদ্যুতের ধারণক্ষমতা রয়েছে ৪৮ মেগাওয়াট। গ্রাহক রয়েছেন ৬০ হাজারের মত।
পাথরঘাটা বিদ্যুৎ বিতরণ অফিসের তথ্যমতে, দেশে যা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তা ওই সময়ে সারাদেশে বিতরণ করে ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টার (এনএলডিসি)। তারা কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অনেক সময় পাথরঘাটা সাবস্টেশন থেকে লোডশেডিং করে দেয়ার পর পুনরায় চালু করে দেয়া হয়। দেখা যায় জোনে লোড বরাদ্দ হয়েছে ২৯ মেগাওয়াট, কিন্তু জোনে লোড বেড়ে ৩১ মেগাওয়াট চাহিদা হয়ে গেছে। তখন সরাসরি এনএলডিসি থেকে সিস্টেমের মাধ্যমে সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। পরে লোড কমে আসলে পুনরায় সংযোগ দিয়ে সচল রাখা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ওভারহেড লাইনে কাজ করাসহ নানা কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে বলা হয়। তাদের কথার উপর ভিত্তি করে নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়।
কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথমদিকে পাথরঘাটা স্টেশনের আওতাধীন ১৫ হাজার গ্রাহকের জন্য ১৫২ জনবলের অর্গানোগ্রাম করে রেখেছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এত গ্রাহকের জন্য বর্তমানে জনবল রয়েছে মাত্র ৯৪ জন। অর্গানোগ্রামে ৪৫ জনের হেলপার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৭ জন। রয়েছে ছয়টি জরাজীর্ণ গাড়ি। যেগুলো দিয়ে তিন শিফটে ডিউটি করতে হয়।
এসব বিষয়ে পাথরঘাটা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, আমরা চাই সবসময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রদান করতে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আমরা পরিপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারি না। এছাড়াও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আপগ্রেডেশনের কাজ চলমান। যে এলাকায় কাজ চলে সে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রাখতে হয়। আবার আবাসিক গ্রাহকের এলটি (লো টেনশন) লাইনে যে সকল ট্রান্সফরমার রয়েছে তা যদি কোন ফল্ট হয় তাহলে পুরো ফিডার সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়। তিনি আরও বলেন, নির্দেশনামত কয়েকদিনে ৩ থেকে ৪ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ লোডশেডিং করা হয়েছে। আর এটা সাময়িক ক্রাইসিস। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। পাশাপাশি আমাদের জনবল ও পরিবহনের সংকট রয়েছে। তা নিরসন হলে গ্রাহকদের আরও ভাল সেবা দেয়া সম্ভব হত।