লুণ্ঠিত মোবাইলে জানা গেল খুনে জড়িত ৫ জন

39

নগরীর খুলশী থানাধীন আমবাগান এলাকায় নিজ বাসভবনে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার মেয়ে ও তার বৃদ্ধা মাকে হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া নিহতদের স্বজন মুশফিকুর রহমান (৩২) টাকার লোভে একাই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে দাবি করে আদালতে জবানবন্দি দিলেও বাসা থেকে লুণ্ঠিত মোবাইলের সূত্র ধরে জানা গেল ভিন্ন তথ্য। এখন পুলিশ বলছে মুশফিক একা নন, হত্যাকান্ডে জড়িত মোট পাঁচজন। এর মধ্যে একজন আবার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য। গত মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত আরও তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, খুনিরা আসলে ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ধরা পড়লেও কেউ কারও নাম প্রকাশ করবে না বলে কোরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ করেছিলেন। তাই হত্যাকান্ডের এক সপ্তাহ পর পুলিশ অন্যতম সন্দেহভাজন নিহতদের নিকটাত্মীয় মুশফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করলে পরদিন তিনি মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, টাকা না পেয়ে নিজেই তার দাদী ও ফুপুকে হত্যা করে লাশ পানির ট্যাংকে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন আলামত তার দাবিকে সন্দেহাতীত হতে দেয়নি। এজন্য তদন্ত কর্মকর্তা কিছুটা সময় নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রাখেন। আর তাতেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসে।
থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তরের পর মামলাটি তদন্ত করছিলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইলিয়াছ খান। তিনি বাসা থেকে লুণ্ঠিত নিহত মেহেরুন্নেসার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সন্ধানে প্রযুক্তির সহায়তা নেন। ঘটনার সাত মাস পর তাতে সাফল্য আসে। মেহেরুন্নেসার ব্যবহৃত ও লুণ্ঠিত দু’টি মোবাইল ফোনের মধ্যে অবস্থান শনাক্তের পর গত মঙ্গলবার একটি উদ্ধারের পাশাপাশি মো. মুসলিম (২৫) নামে এক রাজমিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর তার দেয়া তথ্যে একে একে ধরা পড়েন নিহতদের প্রতিবেশি মো. মাসুদ রানা (৩৯) ও মো. শাহাবউদ্দিন ওরফে সাবু ওরফে মুছা (৩৭)। মাসুদ রানার বাসা মেহের মঞ্জিলের পাশে। আর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত শাহাবউদ্দিন থাকেন ওই এলাকায় রেলওয়ে কোয়ার্টারে। মেহের মঞ্জিলের পাশে তিনি মাসুদ রানার কাছ থেকে জায়গা কিনে ঘর তৈরি করছিলেন। মুসলিম ছিলেন সেই ঘর তৈরির কাজের রাজমিস্ত্রি। গ্রেপ্তারের পরদিন গত বুধবার মুসলিম হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। যাতে মোট পাঁচজনের সম্পৃক্ততার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। আর শাহাবউদ্দিন ও মাসুদ রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করার পর আদালত শুনানি শেষে দু’দিনের হেফাজতে নেয়ার আদেশ দিয়েছে। এছাড়া, হত্যাকান্ডে মুন্না নামে আরও একজনের নাম জবানবন্দিতে এসেছে। যিনি সম্পর্কে মুশফিকের স্ত্রীর বড় ভাই। তাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ জুলাই খুলশী থানার আমবাগান এলাকার মেহের মঞ্জিল নামে একটি ভবনের পানির ট্যাংক থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা ও তার ৯৪ বছর বয়সী মা মনোয়ারা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মনোয়ারার সেজো ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনকে আসামি করে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে ঘটনার এক সপ্তাহ পর একই বছরের ২৩ জুলাই মেহেরুন্নেসার ভাইপো ও মনোয়ারার নাতি মুশফিফুর রহমানকে (৩২) গ্রেপ্তার করে। মুশফিক মনোয়ারার মেজো ছেলে মতিউর রহমানের সন্তান। বিগত ২০০৪ সালে মতিউর মারা যাওয়ার পর মুশফিকের মাকে বিয়ে করেন তার সেজো চাচা মোস্তাফিজুর রহমান। যিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মেহেরুন্নেসা ও মনোয়ারার কাছে বড় হওয়া মুশফিক তাদের অমতে বিয়ে করায় তাকে মেহের মঞ্জিল ছাড়তে হয়েছিল। এ নিয়ে দাদি-ফুপুর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে এমনটাই বলেছিলেন মুশফিক।