লিভার সিরোসিস চিকিৎসায় স্টেমসেল

145

ভূমিকা : মানব দেহে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে লিভার অন্যতম। সুস্থ থাকার জন্য একটি সুস্থ লিভার অপরিহার্য। মানব শরীরে লিভার যে সব কাজ করে থাকে সেইগুলো বন্ধ হয়ে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। প্রতিবছর লিভারের কারণে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। লিভারের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে এমন একটা রোগ হলো লিভার সিরোসিস।
লিভার সিরোসিস কি : সহজ ভাষায় বলতে গেলে লিভার সিরোসিস হল লিভারের চলমান প্রদাহের কারণে লিভার প্যারেনাইমা বা লিভারের আর্কিটেকস আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ ধংস হয়ে যাওয়া এবং লিভারের কর্মক্ষমতা এমনভাবে হ্রাস পাওয়া যাতে শরীরে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং মানুষ আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে চলে যায়।
লিভার সিরোসিস এর কারণ : সারা বিশ্বে লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ সমূহ হল-১. হেপাটাইসিস বি ও সি ভাইরাসের সংক্রমণ। ২. এলকোহল
৩. ফ্যাটিলিভার ও অটোইসিজন লিভার ডিজিস। এছাড়াও নানা কারণে লিভার সিরোসিস হতে পারে। বাংলাদেশে হেপাটাইসিস বি ও সি সংক্রমণের কারণে লিভার সিরোসিস বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বারো জনেরে মধ্যে একজন এই ধরণের সংক্রমণে আক্রান্ত। এছাড়া ও বর্তমানে লিভারের চর্বি জমে যাওয়া বা ফ্যাটি লিভার ও লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে।
হেপাটাইসিস বি ও সি ভাইরাস : এই দুটি ভাইরাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল এদের সংক্রমণ সারাজীবন ধরে চলতে পারে এবং ক্রনিক প্রদাহের মাধ্যমে লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সার ও করতে পারে। হেপাটাইসিস বি ভাইরাসের টিকা আছে কিন্তু সি ভাইরাসের নেই। এই দুটি ভাইরাস রক্ত ও রক্তজাত পদার্থ ও যোনি সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই সবার উচিৎ টিকা নেয়া এবং ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ক্ষেত্রে পূর্ব পরীক্ষা করে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন করা ও অবশ্য যোনি সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা।
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ সমূহ : অনেক সময় দেখা যায় রোগী লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত কিন্তু কোন রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং এই রোগের শেষ অবস্থায় গিয়ে রোগটি ধরা পড়ে এবং কিছুই করার থাকে না। অকারণ দুর্বলতা বা হজমের সমস্যা নিয়ে রোগ্রীা অনেক সময় চিকিৎসকের কাছে আসে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রোগটি ধরা পড়ে। অনেকে আবার মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও আসতে পারে। যেমন রক্ত বমি, পেট ও পা ফুঁলে যাওয়া এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
চিকিৎসা : লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হলে মৃত্যু অনিবার্য। এইরোগের একমাত্র চিকিৎসা হল লিভার প্রতিস্থাপন। কিন্তু এটি সহজ কোন ব্যাপার নয়। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, এবং একজন ডোনার প্রয়োজন হয় এবং রোগীকে সারাজীবন ডোনারের লিভারকে নিজের শরীরের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ইমিউনো সাপ্রোসিভ ড্রাগ খেতে হয় এতে ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায় এবং রোগী মৃত্যুবরণ করতে পারে।
স্টেমসেল : লিভার প্রতিস্থাপনের মত ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফসল হিসেবে এসেছে স্টেমসেল থেরাপি। এটি সহজ, কম ব্যয়বহুল এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত। স্টেমসেল হল মানবদেহের আদি কোষ যা থেকে শরীরের সব ধরণের কোষ তৈরী করা সম্ভব। মানবদেহের অস্থিমজ্জা, রক্ত ও চর্বিকোষে স্টেমসেল পাওয়া যায়। নিজের শরীরে প্রাপ্ত স্টেমসেল রোগীকে দেয়ায় এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি খুব বেশি জটিল নয় এবং কোন ধরণের অপারেশন বা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়না। উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিজের শরীরের স্টেমসেল শিরা পথে ব্যাবহার করা হলে এগুলো লিভারে গিয়ে নতুন লিভার কোষ তৈরি করে এবং লিভারের চলমান প্রদাহ থামিয়ে দেয়। যার ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় এবং রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠে।

লেখক : ডা. মো. আবদুর রব
এমবিবিএস, এফসিপিএস, মেডিসিন ও লিভার বিশেষজ্ঞ, কনসালট্যান্ট, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও শিওরসেল মেডিকেল চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৭১০-৬৬৪৪৪০, ইমেইল : রসফৎৎড়ন@মসধরষ.পড়স