লিবিয়ায় শ্রম বাজারের দুয়ার খুলছে

87

আসহাব আরমান

একসময় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার ছিল লিবিয়া। জাল ভিসায় লোক পাঠানো, ইউরোপে মানবপাচার ও লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে যায় লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানো। আবারো লিবিয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশী শ্রমিক। তবে তারা যাচ্ছে অবৈধভাবে। দালালের সাথে চুক্তি করে অবৈধভাবে লিবিয়ায় যাচ্ছে এসব বাংলাদেশী শ্রমিক। অবৈধভাবে গেলেও লিবিয়ায় কোনো সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ৩৫ হাজার বাংলাদেশি লিবিয়ায় গেছেন। কিন্তু সম্ভাবনাময় লিবিয়ার বাজারে সেই সময়ে জাল ভিসায় লোক পাঠানো শুরু করে দালালচক্র। তাদের অনেকেই বিমানবন্দরে আটক হন। এসব কারণেই ২০১০ সালে লিবিয়া বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে ২০১১ সালে দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা শুরুর পর ৩৬ হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসেন। ওই বছর মাত্র ৮৯ জন বাংলাদেশি লিবিয়ায় যান। তবে গাদ্দাফি সরকারের পতনের পর দেশটির পুনর্গঠনের কাজ শুরু হলে আবারও লোক নেওয়া শুরু করে লিবিয়া। ২০১২ সালে ১৪ হাজার ৯৭৫ জন, ২০১৩ সালে ৭ হাজার ১৭৫ জন, ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৪৬১ জন কর্মী যান দেশটিতে। আর এ বছর এখন পর্যন্ত ৯৩ জন কর্মী গেছেন। আর বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কমর্রত আছেন। এর মধ্যে একটা বড় অংশই আছেন রাজধানী ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে।
সম্প্রতি দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান বাঁশখালীর বাসিন্দা আশেক সিকদার। তিনি পূর্বদেশকে জানান, লিবিয়ায় শ্রমিক যাওয়া বন্ধ থাকলেও আমি চুক্তির মাধ্যমে এসেছি। আমার এক আত্মীয় আছে এখানে। ওনিই সব ঠিক করছেন। বাংলাদেশ থেকে দুবাই ও মিশর হয়ে আমি লিবিয়ায় এসে পৌঁছায়।
লিবিয়ায় যুদ্ধাবস্থাসহ নানা সংকটের কারণে বৈধভাবে সেখানে খুব বেশি লোক যাচ্ছিল না। কিন্তু অবৈধভাবে লোক পাঠানো অব্যাহত আছে। আবার সেখান থেকে ইউরোপ যাওয়া খুব সহজ। কাজেই অনেকে সেই চেষ্টাও করেন। লিবিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক বাংলাদেশীও।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে লিবিয়ার শ্রমবাজার চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনও বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেও কোনো সুফল মিলেনি।
এ বিষয়ে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের পরিচালক জহিরুল হক মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, লিবিয়ার জনশক্তি রপ্তানি আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে লিবিয়ায় অবস্থানরত বৈধ-অবৈধ সকল বাংলাদেশী কোনো সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের সাহায্য করবে। কারণ তারা সবাই তো বাংলাদেশের নাগরিক। পাশাপাশি লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানো বিষয়টিও বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে। শিঘ্রই বাংলাদেশীদের জন্য লিবিয়া শ্রমবাজার খুলছে বলেও জানান তিনি।