লায়লাতুল বরাত মহামারী থেকে মুক্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকার প্রার্থনা হোক সবার

26

আজ পবিত্র লায়লাতুল বরাত। মুসলিম জাতির পাঁচ পুণ্যময় রজনীর একটি এ লায়লাতুল বরাত। আরবি সন গণনায় মাসগুলোর মধ্যে বরকতমন্ডিত রাত মধ্যশাবানে উদ্যাপিত হয় পুণ্যময় এ লায়লাতুল বরাত। ফারসি ভাষায় এটিকে শবে বরাত বলা হয়, যা অনেকটা বাংলা পরিবাষায় রূপ পেয়েছে। বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পালন করবে আজকের তাৎপর্যমÐিত এ রাতটি। বাংলাদেশেও যথাযথভাবে নফল ইবাদাত বন্দেগী, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া-দরুদ, প্রয়াত স্বীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করে থাকে। ওইদিন মসজিদে মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়। এশার নামাজের পর অতিরিক্ত নফল নামাজ এবং তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ্সহ বিভিন্ন নপর নামাজ আদায় করে থাকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। মসজিদের সম্মানিত খতিব ও ইমাম সাহেবানরা বিশেষ ওয়াজ নসিহতও করে থাকেন। কিন্তু গত বছর থেকে এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে লায়লাতুল বরাত উদ্যাপন করছেন বিশ্ব মুসলিম সমাজ। কারণ গত ডিসেম্বরর থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস নামক এক মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে, যা এতো বেশি অদৃশ্য ও ছোঁয়াছে মানুষের সাথে সংক্রমিত মানুষের সাক্ষাত হলেই, বা পাশাপাশি থাকলেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রানঘাতি এ ভাইরাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ১০ কোটির অধিক মানুষ আর মৃত্যুবরণ করেছেন সাড়ে ২১ লাখের অদিক। এ পর্যন্ত পৃথিবীর আশি হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ হাজার ৯শ প্রায়। সংক্রমিত হয়েছে প্রায় ৬লাখ। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের এদেশের মানুষ চরম আতঙ্ক ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। গতবছর ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী চলছিল সাধারণ ছুটি। পরবর্তী সব বিভাগ ও দপ্তরের ছুটি বাতিল হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও কোলা সম্ভব হয়নি। মহামারী এ করোনাভাইরাস অধিক সংক্রমণের কারণে ধর্মমন্ত্রণালয় গত বছরের ন্যায় দেশের ওলামা-মাশায়েখদের সাথে কথা বলে ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুসারে এ পর্যায়ে মসজিদে ব্যাপক জমায়েত এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জুমার নামাজ আদায় করার উপর জোর দিচ্ছেন। তবে অন্যান্য সাধারণের মত সকল মুসল্লিদের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একইসাথে শবে বরাতের নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগি বাসায় বা ঘরে বসে পড়ার প্রতি উৎসাহিত করা জরুরি। আমরা আশা করি, যেকোন মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দূর্ভিক্ষাকালীন ইসলামের যে হুকুম সেই অনুসারে ধর্মপ্রাণ মুসলমান জমায়েত এড়িয়ে ঘরে বসে লায়লাতুল বরাতের এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের করুণা কামনায় অশ্রæসজল নয়নে প্রার্থনায় ব্রত হবেন। কেউ ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে গেলেই তার জন্য মাস্ক এবং জায়নামাজ সাথে রাখা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করছি। সম্প্রতি গত ৯মাসের মধ্যে গত কয়েকদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দুটোই বেড়েছে বাংলাদেশে। এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রেখে প্রয়োজনে কবর যেয়ারত ও বাসায় ফাতেহাখানি তেলাওয়াতের মাধ্যমে করা যাবে।
এই কল্যাণময় রজনীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের ডাকে সাড়া দেন এবং দোয়া কবুল করেন। আমাদের দেশে ধর্মীয় বিশেষ দিন-রাতসমূহকে কেন্দ্র করে যে লৌকিক আচার-উৎসব হয়ে থাকে, বলতে দ্বিধা নেই অবশ্যই তা বাহুল্য। এতে কোন ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কল্যাণ নেই। এবার আমাদের সেই অভ্যাস গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। আসুন, আমরা আজকের পবিত্র রাতে ঘরে বসে নামাজ আদায়, কুরআন শরিফ তেলাওয়াত, জিকির আজকার, দরুদ শরিফ পাঠ করে নিজ নিজ মা-বাবা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনসহ সকল অসহায় মানুষের কল্যাণ কামনায় ও মহামারী করোনা থেকে রক্ষায় রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের প্রার্থনা করি।
দেশ থেকে মহামারী করোনা ভাইরাসসহ সকল প্রকার অমানবিকতা, হিংসা- বিদ্বেষ, হত্যা-রাহাজানি, অপরাধ প্রবণতা দূরীভূত হোক এ কামনায় আমরা সবাই মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোনরকম অধর্মের কাজ থেকে দেশবাসী মুক্ত থাকুক এ প্রতিজ্ঞা আমাদের সঠিক ধর্মীয় অনুভ‚তিকে শানিত করবে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে আজকের শবে বরাত জাতীয় জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক এ কামনাই হোক দেশের সর্বস্তরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্য।