লাশের পর লাশ কাঁদারও লোক নেই অনেক পরিবারে

23

পূর্বদেশ ডেস্ক

সোমবার ভোর। ঘড়ির কাঁটা স্থানীয় সময় অনুসারে যখন ৪ টের ঘরে পৌঁছেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে কেঁপে ওঠে তুরস্ক এবং সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকা। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ৭.৮।
কম্পনের উৎসস্থল দক্ষিণ তুরস্কে। গাজিয়ানতেপ প্রদেশের পূর্ব দিকে নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভ‚গর্ভের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১১ থেকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার কেঁপে ওঠে লেবানন, সিরিয়া এবং সাইপ্রাসের বিভিন্ন অংশ। ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)-র মতে, এই কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৭।
ভেঙে পড়েছে বহু বাড়িঘর। ভারতীয় সময় বিকেল ৪টে পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের তলায় এখনও বহু মানুষ আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা।
১৯৩৯ সালের পর তুরস্ক এমন ভয়াবহ ভূকম্প দেখেনি। ভূমিকম্পের ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তুরস্ক এবং সিরিয়া। উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক মৃতদেহ। কোনও কোনও পরিবারে সকল সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শোকপালন করবেন এমন আত্মীয়-পরিজন নেই অনেকের। সকলেই মারা পড়েছেন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা।
ভ‚কম্পের পরে বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার কর্মী এবং দমকল কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছন। স্থানীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা সূত্রে খবর, ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কে অন্তত ১৪০০ জনের বেশি মারা গিয়েছেন। গুরুতর আহত বহু মানুষ। সিরিয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে।
আলেপ্পো, লাটাকিয়া, হামা এবং টার্টাসের বিভিন্ন জায়গায় মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৃতের সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায়নি।
বিপর্যয়ের মুহূর্তের বেশ কিছু ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক এবং টুইটারে। এই ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করা যায়নি। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, তীব্র কম্পনের ফলে বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে। প্রাণ বাঁচানোর আশায় স্থানীয়দের ছোটাছুটি করতেও দেখা যাচ্ছে। দমকলকর্মীরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন।
গাজিয়ানতেপ প্রদেশের গভর্নর দাভুট গুল টুইটারে শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন, আমাদের শহরে তীব্র ভ‚মিকম্প অনুভ‚ত হয়েছে। আপনারা শান্ত থাকুন। বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করুন। এই পরিস্থিতিতে গাড়ি চালাবেন না। দয়া করে রাস্তায় ভিড় করবেন না।
ইস্তানবুলের গভর্নর আলি ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন, উদ্ধারকার্যের জন্য এখনও পর্যন্ত এক হাজার কর্মীকে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আপৎকালীন বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার তরফে ৮০ জন আধিকারিক, ৪টি কে ৯ প্রজাতির কুকুর এবং দু’টি ট্রাকের আয়োজন করা হয়েছে বলে টুইট করে জানিয়েছেন আলি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়িপ এর্ডোগান এই ঘটনায় টুইটারে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ভ‚মিকম্পের ফলে আমাদের দেশের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি আমার দেশবাসীদের প্রতি সহানুভ‚তি জানাই। বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার কর্মীরা সকলে সতর্ক রয়েছেন। উদ্ধারকাজে কোনও ত্রুটি নেই।
তুরস্কের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী সুলেমান সয়োলু জানিয়েছেন যে, বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে। তবুও আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এগিয়ে আসবে বলে অনুমান করা যায়। তাদের এমার্জেন্সি রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (ইআরসিসি)-এর কাছে সাহায্য চেয়েছেন সুলেমান।
কারেন ম্যাগিনিস নামের এক আবহবিদ ভ‚মিকম্পের এই ঘটনা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার মন্তব্য, যে এলাকায় ভ‚মিকম্প হয়েছে, সেখানে ধনী লোকজন বাস করলেও তার সংখ্যা সামান্য। বেশির ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছেন। এই বিপর্যয়ের দিনে তাদের অবস্থা আরও সঙ্কটজনক।
তুরস্কের আবহাওয়া নিয়েও সরব হয়েছেন কারেন। তিনি বলেন, একেই ঠান্ডা আবহাওয়া। তার উপর মাঝেমধ্যে বৃষ্টি পড়ছে। চাষবাসের ক্ষয়ক্ষতি তো হচ্ছেই। এই পরিস্থিতিতে শহরের লোকেরা কী ভাবে দিনযাপন করবেন, তা ভাবলেই চিন্তা হচ্ছে।’’
গ্রিসের মতো তুরস্কের অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকেও দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক এবং সিরিয়ার উত্তরাংশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।