লাশঘরে যৌনাচার! দায় এড়াতে পারেনা চমেক কর্তৃপক্ষ

49

 

 

মানুষ কতটুকু পাষন্ড হলে, বিকারগ্রস্থ নরপিশাচ হলে, লাশঘরে (মর্গে) হেফাজতে থাকা মহিলার লাশের উপর যৌনাচারে লিপ্ত হয়! তা উল্লেখ করার মত ভাষা খুঁজে পাওয়া দায়। একটি সভ্য দেশে একটি প্রধান সরকারি হাসপাতালের মর্গে কথিত পাহারাদারের এমন বিকৃত যৌনাচারের খবর দেশব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। ধিক্কার আর নিন্দা জানানোর পাশাপাশি মানুষরূপী নরপিশাচের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে। আমরাও এ জঘন্য ঘটনার তীব্র নিন্দাসহ অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির সাথে সহমত পোষণ করছি। দেশে এমন ঘটনা রাজধানী ঢাকার আরো একটি হাসপাতাল মর্গে ঘটেছিল কয়েক বছর আগে। চট্টগ্রামে এ প্রথম! নাকি আগেও ঘটেছিল? তা তদন্তের বিষয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এটি দেখাশুনার জন্য সরকার নিযুক্ত কোনো স্টাফ নেই। নেই মর্গ সহকারী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হলেও, লাশঘরের দায়িত্বে কেউ নেই। এই লাশঘরে ফারুক, সেলিম ও হারিস নামে তিনজন ব্যক্তি অবস্থান করেন। এরাই লাশঘরের সর্বেসর্বা। সরকারি কোনো নিয়োগ না থাকলেও কিভাবে তারা লাশঘরে প্রবেশ করার সুযোগ পান- এর সদুত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লাশঘরে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মরদেহও আসে। এসব মরদেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট কখনো কখনো হত্যা মামলাতেও রূপ নেয়। তাই লাশঘর দেখভালে দায়িত্ববান কেউ না থাকায় লাশের শরীরের থাকা মামলার গুরুত্বপৃর্ণ আলামত চুরি কিংবা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। স¤প্রতি লাশঘরে দুই নারীর সাথে বিকৃত যৌনাচার করে সিআইডির হাতে ধরা পড়েন পাহারাদার সেলিম। তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ডে তার অপরাধের বৃত্তান্ত কিংবা আরো যারা জড়িত তাদের মুখোশ বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এ পাষন্ডের শাস্তি কি রকম হবে, তা দেখার বিষয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সেলিম নামক এ পিশাচটার পরিচয় কি? জানা যায়, সেলিম এবং তার সাথে থাকা বাকি দুইজনের কেউ মেডিকেলের নিয়োগপ্রাপ্ত কোন কর্মচারী বা পাহারাদার নয়। কিন্তু তারাই ছিল মর্গের কর্তা। তাদের দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ পাহারার ব্যবস্থা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাদের কর্মকান্ড নিয়ে বিস্তর অভিযোগ হাসপাতার কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়ে, কিন্তু অদৃশ্য কারণে কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততা- সেলিমদের করেছে আরো বেপরোয়া। যার চূড়ান্ত পরিনতি এ ঘটনা। সুতরাং হাসপাতাল কর্তৃৃপক্ষ এ ধরণের জঘন্য ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে মর্গে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দায় এড়াতে পারে না। সেলিমের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক পূর্বদেশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে মর্গ সহকারী পরিচয়ে এক নরপশু মৃতদেহের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার করছিল । দেশে সেবারই প্রথম লাশকাটা ঘর (মর্গ) ঘিরে হয়েছিল নতুন এক অপরাধের মঞ্চায়ন। সেই ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় পর গত সোমবার লাশের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গের পাহারাদার মো. সেলিমকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। লাশের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার বা আকর্ষণবোধ করা এক ধরনের বিকারগ্রস্ত মানসিক রোগ, দুনিয়াজুড়ে এটা স্বীকৃত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘নেক্রোফিলিয়া’। বহু বছর আগে যুক্তরাজ্যে এমন একজনকে পাওয়া গিয়েছিল, যে একশ তরুণী-কিশোরীর লাশ ধর্ষণ করে। ১৮৬০ সালে পেনাল কোডে একসময় এই অপরাধের সাজা ছিল কোনো নির্জন দ্বীপে অপরাধীকে নির্বাসনে পাঠানো। বর্তমানে এই অপরাধের সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আমাদের দেশে এ জাতীয় ঘটনার আইনি ভিত্তি কতটুকু কঠিন সেটা আমাদের জানা না থাকলেও বিবেক ও মানবিক চেতনায় বলা যায়, ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির বিকল্প থাকা উচিৎ নয়। মনে রাখা চাই, জাহেলিয়া যুগে এমনটি যৌনাচারের কথা জনশ্রুতি থাকলেও সভ্য কোন দেশে তা কল্পনা করাও দুরুহ। কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দেশে এমন ঘটনা দেশবাসীকে মর্মাহত করে। সরকারের উচিৎ এসব ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা। তারা দেশ ও দেশের মানুষকে অপমানিত করছে।