লালদিঘিকে না চিনলে চট্টগ্রাম চেনা যাবে না

35

সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, লালদিঘিকে না চিনলে, না জানলে চট্টগ্রামকে চেনা ও জানা যাবে না। লালদিঘিকে ঘিরেই চট্টগ্রামের ইতিহাস, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানা বর্ণিল অধ্যায় সূচিত হয় এবং অনেক বীরত্ব গাঁথার স্মৃতির হীরকখন্ড এখনো ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসে চোখের মণিতে জ্বলজ্বল করে। তাই লালদিঘি শুধু এক টুকরো নৈসর্গিক ভূমি নয়, স্মৃতি ও অস্তিত্বের শিকড়। তিনি শুক্রবার সকালে লালদিঘির চারপাশ ঘিরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে গড়ে তোলা বাহারি ফুল ও বৃক্ষরাজির সজীব সবুজে শোভিত পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে এভাবেই এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন।
তিনি লালদিঘি ও তৎসংলগ্ন মাঠের ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপস্থাপন করে বলেন, ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে অংশ নেয়া তরুণ ও যুবকদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি কল্পে আজ থেকে শতবর্ষ আগে আবদুল জব্বার বলি খেলার সূচনা করেন। একে ঘিরেই প্রতি বাংলাবর্ষের ১২ বৈশাখ লালদিঘির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেশের সর্ববৃহৎ বৈশাখি লোকমেলা হয়ে আসছে। এই লালদিঘির পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে ব্রিটিশ রাজশক্তি অগ্নিযুগের বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি ঢাকায় রমনা ভাষা শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হবার পর দিন লালদিঘি ময়দানে একুশের প্রথম কবিতা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী’ নিয়ে এসেছি পাঠ করেছিলেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই লালদিঘির মাঠে সর্বপ্রথম জনসভায় ৬ দফা ঘোষণা করেন। একাত্তরের অসহযোগের অগ্নিঝরা দিনে অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদের ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নাটক এই লালদিঘি মাঠে অভিনীত হয় এবং মৌলভী ছৈয়দ আহমদ ও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে জয়বাংলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মার্চপাস্ট অনুষ্ঠিত হয়। এটাই ছিলো সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক মহড়া। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালদিঘি মাঠে জনসভা করতে আসার পথে তাকে হত্যার প্রচেষ্টায় সামরিক স্বৈরশাসকের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনীর নির্বিচারে গুলিবর্ষণে লালদিঘির অনতিদূরে শহীদ হন ২৬ জন বাঙালি। এ ধরনের অনেক বীরত্বগাঁথার ইতিহাস আছে লালদিঘিকে ঘিরে। তাই চট্টগ্রামের ইতিহাস, রাজনীতি-ধর্ম-সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিনোদনের ক্ষেত্রে লালদিঘির সম্পৃক্ততা চিরকালীন ও সর্বজনীন। চট্টগ্রামকে চেনা ও জানার নাভিমূল এই লালদিঘি।
তিনি আরও বলেন, লালদিঘির পাড়ে চারপাশ দিয়ে প্রাতকালীন ও বৈকালিক ভ্রমণকারীদের স্বচ্ছন্দে হাঁটাহাঁটির জন্য ওয়াকওয়ে করে দেয়া হয়েছে। নানা উপাদানে পার্কটি নান্দনিক করা হয়েছে। এখন সকাল ৬ টা থেকে ৮ টা এবং বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। লালদিঘির চারপাশে মিউজিক্যাল লাইটিংয়ের মাধ্যমে আলো ও সুরের সমন্বয় করা হবে। খাবার সামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে এখানে প্রবেশ নিষেধ এবং নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যত্রতত্র কোন বর্জ্য ফেলা যাবে না।