লামায় রাবার প্লটে হামলা-অগ্নিসংযোগে উপজাতীয়রাই

5

লামা প্রতিনিধি

দূর্গম পাহাড়ি এলাকার কিছু দুষ্টু প্রকৃতির ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নস্থ লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামের একটি কোম্পানীর লীজপ্রাপ্ত প্লটের জায়গা জবর দখলের উদ্দেশ্যে রাতের আঁধারে জোর করে ঘর নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, একদিন পর আবার সেই ঘরে পরিকল্পিতভাবে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে কোম্পানীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের ডেপুটি ম্যানেজার মো. আব্দুল মালেক স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কোম্পানীর ডেপুটি ম্যানেজার বাদি হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উল্লেখিত অভিযুক্তরা হলেন ইউনিয়নের ঢেকিছড়া পাড়ার বাসিন্দা কাইচং ম্রো’র ছেলে লাংকম ম্রো (৩৫), রিপিত ম্রো’র ছেলে রিংরং ম্রো (৪৫), লাইপু ম্রো’র ছেলে রেংয়েন ম্রো (৫৫), মৃত চিত্ত রঞ্জন ম্রো’র ছেলে রেংইয়ং ম্রো (৩৫), রিংরং ম্রো’র ছেলে যোহন ম্রো, সিংচং ম্রো, দয়ারাম ত্রিপুরার ছেলে মতি ত্রিপুরা (২৫) ও মৃত পদ্মমনি ত্রিপুরার ছেলে রুংধজন ত্রিপুরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানান স্থানীয়রা।
অভিযোগে জানা যায়, লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের লীজপ্রাপ্ত প্লট নং ১০৫৫/১৫, ২০০৭/৮ মূলে সরই ইউনিয়নে ১৫ একর পাহাড়ি জায়গা আছে। দীর্ঘদিন ধরে লোভের পড়ে এ জায়গা জোর করে দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে কিছু ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন। এ ধারাবাহিকতায় গত ৩১ ডিসেম্বর সকাল আনুমানিক ৮ টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঢেকিছড়া পাড়ার লাংকম মুরুং নেতৃত্বে ৩৩ জন সংঘবদ্ধ হয়ে কোম্পানীর ২০১৩ সালে সৃজিত রাবার নার্সারী, আম বাগান এবং ২০২১ সালে সৃজিত রাবার বাগানে প্রবেশ করে জোর পূর্বক ৩টি বসতঘর নির্মাণ করে এখন জায়গা দখলের পাঁয়তারা করেন। ঘর নির্মাণে বাধা দিলে কোম্পানীর লোকজনকে প্রাণে হত্যা করবে, এমনকি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করবে বলেও হুমকি দেন অভিযুক্তরা। পরবর্তীতে আবার (১ জানুয়ারি) রাতের আঁধারে ঘরগুলো অভিযুক্তরা নিজেরাই ভেঙ্গে নিয়ে যায় এবং কিছু অংশ আগুন লাগিয়ে কোম্পানীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লাংকম ম্রোরা বলেন, পাড়ার বেশির ভাগ মানুষ জুমচাষ, বাগান ও দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পাড়ার লোকদের চাষকৃত জমিগুলো দখলের জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ। কোম্পানী আমাদের জায়গাগুলো দখলে নিতে তিনটি ঘরে লুটপাটসহ আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
লামা রাবার ইন্ড্রাাস্ট্রিজের ম্যানেজার আরিফুর রহমান বলেন, কিছুদিন থেকে ম্রো ও ত্রিপুরারা কোম্পানীর সৃজিত বাগানের নানা প্রজাতির বৃক্ষ নিধন করে বসতি নির্মাণ করছিলেন। এ বিষয়ে আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ তাদেরকে বাগানের গাছ কেটে বসতি নির্মাণ করতে নিষেধ করে। একারণে হয়তো অভিযুক্ত ম্রো ও ত্রিপুরারা নিজেরাই জোর করে নির্মিত ঘরগুলোতে অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুর করে কোম্পানিকে ফাঁসাতে চেষ্টা করছেন। অতীতেও অভিযুক্ত ম্রো ও ত্রিপুরারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রশাসনের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কোম্পানীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও জানান আরিফুর রহমান।
এ বিষয়ে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।