লামায় দুই বছরেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন হয়নি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন

36

সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বান্দরবানের লামা উপজেলার ৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৮টি বিদ্যালয়ে ¯িøপ বরাদ্দের টাকা থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনার দুই বছর পার হলেও ১০টি বিদ্যালয় ব্যাতিত অন্য ৬৮টি বিদ্যালয়ে এখনো স্থাপন করা হয়নি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। জানা যায়, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় না করে, সেই টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্টরা। এ অনিয়মের সাথে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা জড়িত। শুধু তাই নয়, বাজার মূল্যেরচেয়ে অনেক বেশি দামে এসব হাজিরা মেশিন ক্রয় ও সরবরাহ দেখানোর অভিযোগও রয়েছে। এদিকে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে বলা হয়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে যাচাই করে সাশ্রয়ী মূল্যে নিজেদের পছন্দ মতো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করে বিদ্যালয়ে স্থাপন করবেন। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা এখনো তা করেননি। এদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দেখানো নির্দিষ্ট দোকান বা ব্যক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। দুইবছর অতিবাহিত হলেও ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন না করার বিষয়ে এখনো কারো বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, উপজেলার ৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মধ্যে নুনারবিল মডেল, লামামুখ, ছাগলখাইয়া, অংহ্লারী পাড়া, চাম্বী, ডলুছড়ি, রূপসীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিএফএস বরাদ্দ থাকায় ও স্লিপ বরাদ্দ না থাকায় তারা ডিজিটাল হাজিরা ক্রয় করা হয়নি। বাকী ৭৮টি বিদ্যালয় স্লিপ বরাদ্দ থেকে ২০ হাজার টাকায় ডিজিটাল হাজিরা ক্রয় করার কথা। এদিকে ডিজিটাল হাজিরা স্থাপন করা হয়েছে বলে ২০১৯ সালে ৩০ জুন স্লিপ বরাদ্দে ডিজিটাল হাজিরার বিল-ভাউচার সমন্বয় করা হয়। সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উপজেলার আদর্শ, মধুঝিরি, লাইনঝিরি, চাম্পাতলী, মেওলারচর, কলারঝিরি মংপ্রূ পাড়া, বনপুর, রওজা পাড়া, এম হোসেন পাড়া ও টিটিএন্ডডিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন লাগানো হয়েছে। যার মডেল টাইম গার্ড। যার মূল্য মূল্য দেখানো হয়েছে প্রতিটি ২০ হাজার টাকা। অথচ এ মেশিনটির বাজার মূল্য আনুষাঙ্গিক খরচসহ সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা বলে কোম্পানির দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন। এ সময় ডিজিটাল হাজিরা কেন লাগানো হয়নি, এ বিষয়ে কথা হয় ইয়াংছা পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, সাবেক বিলছড়ি, রাজবাড়ি, লাচ্ছাই পাড়া ও বড় ফারাংগা খৃজ্জানুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে।
তারা জানান, দ্রুত ক্রয় করে স্থাপন করা হবে। আবার অনেকে বলেন, আমরা অনেকে ক্রয় করেছি, কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কারণে বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়নি। অনেকে মেশিনটি কোথায় আছে বললে দেখাতে পারেন নি। অভিযোগ রয়েছে, অনেকে ইতোমধ্যে এ টাকা হজম করেছেন। ইয়াংছামুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি সভাপতি আব্দুল জলিল জানান, আমাদের স্কুলে এখনো হাজিরা মেশিন স্থাপন হয়নি। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা আক্তার জানান, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন এখনো স্কুলে লাগানো হয়নি। তবে আমরা ক্রয় করেছি। লামা পৌরসভার রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া বেগম বলেন, আমরা হাজিরা মেশিনটি অতি দ্রæত লাগিয়ে ফেলবো। নাম প্রকাশ না করা সত্বে জনৈক শিক্ষক জানান, নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষকের মাধ্যমে এ হাজিরা মেশিন গুলো ক্রয় করতে শিক্ষা অফিস থেকে বলা হয়েছে। এদিকে যেসব বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন লাগানো হয়েছে কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার করছেন না। কয়েকটি লাগানো পর থেকে অব্যবহৃত থাকতে থাকতে অচল হয়ে গেছে। এতে করে ৭৮টি বিদ্যালয়ে ২০ হাজার করে মোট ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা অযথা অপচয় হয়েছে বলে সচেতন মহলের অভিমত। এ বিষযে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার চৌধুরী জানান, যেসব বিদ্যালয়ে এখনো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়নি এসব বিদ্যালয়ে দ্রুত স্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। আবার কোন বিদ্যালয় লাগিয়েছে, কারা স্থাপন করেনি, তা উল্লেখ করে ডিজি অফিসে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বার বার তাগিদ দেয়ার পরেও যেসব বিদ্যালয়গুলো এখনো হাজিরা মেশিন স্থাপন করেননি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লামা উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল জানান, যেসব বিদ্যালয়ে এখনো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়নি, সেসব বিদ্যালয়ে দ্রুত স্থাপনের জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে।