লাখো মুসল্লির কণ্ঠে আমিন আমিন ধ্বনি

24

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালে মুক্তির প্রত্যাশায় দাওয়াতিকাজ করার প্রত্যয় ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব, সুখ-সমৃদ্ধি ও বিশ্বশান্তি এবং কল্যাণ কামনায় আখেরি মোনাজাতে শেষ হল হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামে ৩ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা।
গতকাল রবিবার সকাল ৯টার মধ্যে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দুপুরে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। এতে অংশ নিতে লাখো মুসল্লির ঢল নামে। শীত উপেক্ষা করে তারা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হন। তারা ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের রাস্তা ও অলিগলিতে অবস্থান নেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, অনেক মুসল্লি মহাসড়ক ও সড়কে অবস্থান নেন। তারা পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাসাবাড়ি, দোকান ও যানবাহনের ছাদে অবস্থান নেন অনেক মুসল্লি।
সকাল সাড়ে ১০টায় মোনাজাত শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর শুরু হয়। বিন¤্র সুরে আল্লাহর কাছে আকুতি জানিয়ে বাংলা ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন­­ মারকাজ কাকরাইল মসজিদের খতিব আল্লামা হাফেজ জুবাইর আহমদ। তার সঙ্গে লাখো মুসল্লি দুই হাত তুলে ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনি তোলেন। এ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে হাটহাজারীর চারিয়া গ্রামসহ আশপাশের এলাকা।
এ সময় দুই হাত তুলে কেঁদে কেঁদে নিজেদের পাপমোচনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মুসল্লিরা। তারা পাপ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আকুতি-মিনতি করেছেন।
মোনাজাতে অংশ নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি, মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আলম মাসুম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আলম চৌধুরী, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামীম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেম-ওলামাবৃন্দ।
ইজতেমার শেষ দিন গতকাল বাদ ফজর আমবয়ান করেন পাকিস্তানের মুরব্বি ডাক্তার নওশাদ। এ সময় কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা নুরুর রহামন উক্ত বয়ান বাংলায় তরজমা করেন।
এবার ইজতেমা থেকে ১ চিল্লা, ৩ চিল্লা ও ১ বছরের জন্য ৩শ জামাত বের হয়েছে বলে জানান ইজতেমা কমিটির সদস্য ও জিম্মদার মেখল মাদ্রাসার সিনিয়ির শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী।
হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুদ আলম জানান, কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভাবগম্ভীর পরিবেশে জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর দেড় সহ¯্রাধিক সদস্য ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি সাদা পোশাকে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছিল। এছাড়া মুসুল্লিদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত সুবিধায় বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল।