লাইসেন্সসহ ৭৫ পরিষেবার ফি বাড়লো

58

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নতুন হারে ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহনের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদসহ ৭৫টি পরিষেবার ফি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। যা গত রবিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এ ৭৫টি সেবার ফি সর্বোচ্চ ২৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানায় বিআরটিএ।
গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন বিআরটিএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী। এদিকে ফি বাড়ানোর ফলে বিপাকে পড়েছেন গাড়ি মালিকরা। তাদের মতে, আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের দাম এমনিতে বেড়েছে, এ অবস্থায় যদি বিআরটিএ ফি বাড়ায় তাহলে অনেকে পরিবহন ব্যবসা ছেড়ে দেবে। ২০১৮ সালে সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন করলেও প্রায় ৪ বছর পর ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রকাশ করে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাড়তি ফি’র পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় তহবিল গঠনের জন্য পরিবহন মালিকদের একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে।
এতে ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহনের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদের মতো ৭৫টি সেবার ফি সর্বোচ্চ ২৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া বিআরটিএ মোটর ওয়ার্কশপের নিবন্ধন ও কন্ডাক্টরদের লাইসেন্সসহ নয়টি পরিষেবার ওপর নতুন করে ফি বাসানো হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, বাস, ট্রাক, লরি ও আরটিকুলেটেড লরির মালিকরা তহবিলে বছরে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে দেবেন। যা মিনিবাস, মিনিট্রাক ও পিকআপের জন্য ৭৫০ টাকা; গাড়ি, এসইউভি ও মাইক্রোবাসের জন্য ৫০০ টাকা এবং থ্রি হুইলারের জন্য ৩০০ টাকা।
১০০ সিসি পর্যন্ত ৩ চাকার পরিবহনের নিবন্ধন ফি ৬৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার টাকা হয়েছে। ১০০ সিসির চেয়ে বেশি সক্ষমতার সব ৩ চাকার পরিবহনের ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি ১ হাজার ১৫০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা হয়েছে।
এছাড়া ১০০ সিসি সক্ষমতার মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি ২ হাজার টাকা এবং ১০০ সিসির চেয়ে বেশি সক্ষমতার মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি ৩ হাজার টাকা। যা অপরিবর্তিত থাকবে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত বিশেষ পরিবহনের নিবন্ধন ফিও ২৫ টাকা থেকে বাড়ানো হয়নি।
এদিকে ড্রাইভিং স্কুলগুলোকে লাইসেন্সের জন্য ১৫ হাজারের পরিবর্তে ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে। আর প্রশিক্ষকের লাইসেন্স ফি ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার টাকা।
বিআরটিএ’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সংস্থাটি গত রবিবার থেকে তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছে এবং ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন হারে ফি সংগ্রহ করবে।
বিআরটিএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জানান, ‘সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরপরই নতুন ফি ও আইনের ধারাগুলো কার্যকর হয়েছে। নতুন হারে ফি সংগ্রহে বিআরটিএ’র সিস্টেমকে প্রস্তুত করার জন্য কয়েকদিন সময় লাগতে পারে’।
বিআরটিএ’র সদরদপ্তরের তথ্যমতে, বিগত অর্থবছরে সংস্থাটি ৫ লাখ ২৩ হাজার পরিবহনের নিবন্ধন করে এবং ৭ লাখ ৮৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৫ লাখ ৬৪ হাজার ফিটনেস সনদ ও ২ লাখ ৫ হাজার রুট পারমিট দিয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে বিআরটিএ’র ফি বাড়ানো হয়েছিল। ২০২১ এর শুরুতে মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি অর্ধেক করা হয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রæপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্বদেশকে বলেন, জ্বালানি তেল ও ডলার সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি সেতুতে টোলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে পরিবহন রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। নতুন ফি চালু হলে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যদি কর্তৃপক্ষ ফি বাড়ায়, তাহলে পরিবহন ভাড়া সমন্বয় করা উচিত। তা নাহলে বাসসহ অন্যান্য পরিবহন মালিকরা দেউলিয়া হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা পরিবহনের অনেক যন্ত্রাংশ পাচ্ছি না। কারণ আমদানিকারকরা ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এটার পাশাপাশি বিআরটিএ’র ফি বৃদ্ধি করাটা আমাদের মত মালিকদের ভোগাবে।