লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মামলা

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে যাত্রীবোঝাই লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শনিবার সকালে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন এ মামলা দায়ের করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ঢাকা থেকে বরগুনার বেতাগী রওনা হওয়া লঞ্চটিতে শুক্রবার ভোরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় আগুন লাগে। এতে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইঞ্জিন রুম থেকে লঞ্চে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
এদিকে গতকাল সকাল ১১টার দিকে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে রাখা লঞ্চটি পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শাজাহান খান। এ সময় ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জোহর আলীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় গঠন করা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটির সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
লঞ্চঘাট এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাজাহান খান বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদগুলো আমরা দেখেছি, সেগুলো আমলে নিয়ে পর্যালোচনা করে এবং লঞ্চটি পরিদর্শন করে কাজ করছে তদন্ত কমিটি। তার ধারণা, আগুন ক্যান্টিন থেকে নয়, ইঞ্জিনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে লেগেছিল।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির আহব্বায়ক ও যুগ্ম সচিব তোফায়েল হাসান বলেন, যা কিছু দেখছি, সবই প্রাথমিক তদন্তের পর্যায়ে আছে। চূড়ান্তভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, লঞ্চের ছয়টি সিলিন্ডারের মধ্যে একটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এর ফলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
আগুন লাগা লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দাবি, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল। তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকে বলছেন, অভিযান-১০ লঞ্চে যাত্রী ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার।
এদিকে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান শুরু করেছে। তারা গতকাল সারা দিন সুগন্ধা নদীর সম্ভাব্য সব স্থানে লাশের সন্ধানে অভিযান চালায়। বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, সুগন্ধা নদীতে স্রোতের মাত্রা বেশি। এ কারণে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এরপরও চৌকস ডুবুরি দল নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে।
আগুনে ৪১ জনের মৃত্যু : ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডে এখন পর্যন্ত ৪১ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, এ অগ্নিকান্ডে আহত ৮১ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৪৬ জনের চিকিৎসা চলছে। ১৬ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রোগীদের সার্বিক পরিস্থিতি দেখার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার নির্দেশনা দিয়েছেন। আহতদের সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসার খরচ বহন করা হচ্ছে। নিহতদের মরদেহ বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থাও হাসপাতালের পক্ষ থেকে করা হবে।
গণকবরে ২৯ জনের দাফন : লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শনাক্ত না হওয়া ২৯ জনকে বরগুনার পোটকাখালীতে গণকবর দেওয়া হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে বেলা ১১টা নাগাদ বরগুনা সার্কিট হাউস সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে তাদের জানাজা হয়। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ হাজারো মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।
ভয়াবহ ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একই জেলার আরও সাতজনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় সেগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় গণকবরে যাদের দাফন করা হচ্ছে তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের পরিবারের কেউ মরদেহ নিতে চাইলে ডিএনএ নমুনার পর কবর থেকে মরদেহ নিয়ে যেতে পারবেন। না চাইলে সেখানেও রাখতে পারবেন।

ইঞ্জিন রুমে ত্রুটি পেয়েছে তদন্ত কমিটি : সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ইঞ্জিন রুমে কিছু ত্রুটি দেখতে পেয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। তবে এর ওপর ভিত্তি করে অগ্নিকান্ডের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলতে চাননি তদন্ত কমিটির আহব্বায়ক ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. তোফায়েল ইসলাম।
গতকাল দুপুরে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সবাই সরেজমিনে পুড়ে যাওয়া জাহাজ ও দুটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমাদের এখানে যে অভিজ্ঞতা হলো তা কাজে লাগিয়ে বলতে পারবো কি কারণে এ ঘটনা ঘটলো।
এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া দুটি অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ড্রাইভার ছিল কি, ছিল না―এগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। কাগজ-কলমে মিলিয়ে বাস্তবেও যাচাই করে দেখবো।
এছাড়া প্রথম যেই স্থানে জাহাজটি থামানোর জন্য গিয়েছিল সেখানে থেকে অন্য স্থানে আসার কারণ বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো বিষয়গুলো আমরা যাচাই করছি। প্রথম যে স্থানে জাহাজটি গিয়েছিল সেখানকার স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং ঘাটে লাগার পর যারা উদ্ধার কাজে এগিয়ে এসেছিল তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।
ইঞ্জিন রুমের ত্রুটির বিষয়ে তিনি বলেন, লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে কিছু ত্রুটি আমরা পেয়েছি। সেটা কি এবং কেন হয়েছে তার লিংকআপ করতে হবে। কারণ প্রাথমিকভাবে যা পেয়েছি সেটাকে লিংকআপ না করে মূল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবো না। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল কি-না, সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি। কমিটির প্রতিবেদনে সবকিছু উল্লেখ করা হবে।