লকডাউন সর্বাত্মক হওয়া বাঞ্ছনীয়

22

মার্চ ২০২০ হতে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে সরকার দেশে সাধারণ ছুুটি ও লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিল। সে সময়ে শিল্পকারখানা চালু ছিল। বিষয়টা নিয়ে পত্র-পত্রিকা এবং দেশের বুদ্ধিজীবীরা ব্যাপক সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন। অতীতের সরকারি সিদ্ধান্তসমূহ ছিল আন্তরিক। সমালোচনা যাই হোক এক পর্যায়ে দেশে করোনা সংক্রমণ কমে এসেছিল। প্রথমে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যে সকল কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল তা ধীরে ধীরে শিথিল করা হয়। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবও, অর্থ-নৈতিক অবস্থা ঠিক রাখার স্বার্থে। অপেক্ষাকৃত কমবয়সী এবং শিশু-কিশোর যুবকদের রক্ষার স্বার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত মার্চ হতে বর্তমান পর্যন্ত খোলা হয়নি। করোনা মহামারীর কারণে দেশের সব সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার। অনেকে ভেবেছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং করোনা সংক্রমণ কমে আসা ইত্যাদি বিবেচনায় সরকারি সকল সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে শীতকালে করোনা সংক্রমণ বাড়ে। বিগত শীতেও দেখা যায় করোনা ভাইরাস অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত ছিল। শীত অতিবাহিত হবার পর এবং করোনা ভ্যাকসিন দেশে আসার পর দ্বিতীয় দফা করোনা সক্রমণ বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। এতে একটা সত্য প্রমাণিত যে, স্কুল কলেজ বন্ধ করে শিক্ষাকে ধ্বংস করা হলেও করোনা নিয়ন্ত্রিত হবে না। করোনা ভাইরাসজনিত কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা অযৌক্তিক।
দ্বিতীয় দফা দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সরকার পুনরায় লকডাউন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দ্বিতীয়দফা লকাডাউনের প্রথম এক সপ্তাহ প্রায় শেষ। প্রথম দফা লকডাউন সর্বাত্মক হয়নি। শিল্পকারখানাগুলো চালু ছিল। যে কারণে করোনা পরিস্থিতি বেসামাল হলে সরকার দ্বিতীয় দফায় শিল্পকারখানা, সরকারি অফিস, যানবাহনসহ সবকিছু বন্ধ রেখে ১৪ এপ্রিল ২০২১ হতে সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানিয়েছিল। একটি সর্বাত্মক লকডাউন পালন করা সম্ভব হলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণ হওয়ার সম্ভাবনা আশা করেছিল স্বাস্থ্যবিভাগসহ সকলেই। এর মধ্যে ১৪ এপ্রিল হতে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবার আগেই পোশাক খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট চার সংগঠন লকডাউনে কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে সরকারকে। আবার এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ শিল্পকারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে শিল্প মালিকদের আশ্বস্ত করেছে এমন একটি প্রতিবেদন পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়। তৈরি পোশাক খাতে ৫৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ইএবি। ৫৪ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি পুঁজি খাটিয়ে ৫৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির কথা বলে তারা সরকারকে প্রভাবিত করছে। অথচ দেশের হাজার হাজার স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ি নিঃস্ব হয়ে গেলেও তাদের উল্লেখ্য চারটি ব্যবসায়ী সংগঠনের মতো প্রভাব না থাকায় তারা সর্বস্ব হারাতে বসছে লকডাউনের কারণে।
প্রথম দফায় দোকানপাট, স্বল্প পুঁজির ব্যবসাবাণিজ্য, দিনমজুররা সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখিন হলেও জাতীয় স্বার্থে প্রতিবাদী হয়নি, কিন্তু দ্বিতীয় দফা লকডাউন ঘোষণার শুরুতেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। দিনমজুর ও স্বল্পআয়ের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। বিগত এক সপ্তাহসহ ১৫ দিনের লকডাউনে বসে খাওয়ার মতো অবস্থা বর্তমানে দেশের অধিকাংশ মানুষের নেই। সুতরাং সরকার সর্বাত্মক লকডাউনের পরিবেশ সৃষ্টি না করে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু করলে তা কতটুকু সফল হয় এ নিয়ে সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক সন্দিহান। আগামী ১৪ এপ্রিল হতে একটি সর্বাত্মক লকডাউন আশা করে করোনা ভাইরাস সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তা বাস্তবায়নে সারাদেশের নাগরিকদের জন্য একই নিয়ম চালু রাখা সরকারের কর্তব্য মনে করে সর্বস্তরের জনগণ।