লকডাউন শিথিলে ‘স্বস্তি’ সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

আর মাত্র ৪ দিন পরই পবিত্র ঈদ-উল আযহা। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় উৎসবটিকে সামনে রেখে আটদিনের জন্য চলমান কঠোর বিধি-নিষেধ শিথিল করেছে সরকার। শিখিলের প্রথমদিনে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে এক ধরনের ‘স্বস্তি’ লক্ষ্য করা গেছে। অপরদিকে করোনা সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে নগরবাসীর একটি বড় অংশ। এ অবস্থায় সকলকে সচেতনভাবে চলাফেরার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির উপরও জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
এদিকে লকডাউন শিথিলে দীর্ঘদিন পর গণপরিবহণ চালু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী মানুষ ও পোশাক কর্মীরা। পাশাপাশি যাত্রী নিয়ে নগর ছাড়ছে দূরপাল্লার বাস। গত বুধবার সন্ধ্যার পর অনেক যাত্রী অনলাইনে টিকেট কিনেছেন। তাই পরিবহণ চালুর প্রথমদিনে টিকেট না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক আসন ফাঁকা রেখে বাস চলাচল শুরুর কথা বলা হলেও ফাঁকা ছিল না কোনো আসন। উপরন্ত দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। টিকিটের দাম ৬০ শতাংশ বাড়তি নেয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ বাহনেই তা নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুন নেয়া হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য বাসসহ ট্রেনের টিকিট কাউন্টারসহ অনলাইনে পাওয়া গেলেও যারা আগেই টিকিট বুকিং করে রেখেছেন তারা আজ যেতে পারছেন। যারা কাল বা পরশু যাবেন তারাও অগ্রিম টিকিট পাচ্ছেন। কিন্তু যারা টিকিট কিনে সাথে সাথে যাওয়ার চিন্তা করে কাউন্টারে এসেছেন তারা পড়েছেন বিপত্তিতে। তাদের মুখে দেখা গেছে হতাশা আর ক্লান্তির ছাপ।এ বিষয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাত্রী পরিবহনের (বাস) সাথে যুক্ত কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ চত্ত¡রের মোহাম্মদ আলমগীর জানান, ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যেতে সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। বুধবার রাত থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (গতকাল) সকাল থেকে কাউন্টারে এসে অনেকে অগ্রিম টিকিট বুকিং দিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাত্রা শুরু করেছে। সমিতির পক্ষ থেকে আমাদেরকে যত নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে আমরা সবটাই বাস্তবায়ন করছি। টিকিট কাটতে আসলে আমরা কাউন্টারে ভীড় জমাতে দিচ্ছি না।
তবে আশেপাশের উপজেলাগুলোতে চলাচল করা পরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীদের অনেকে অভিযোগ করে বলেন, গ্রামে যাওয়ার জন্য বাস খুঁজছি। কয়েকটা বাস পেয়েছি, কিন্তু তারা বাড়তি ভাড়া চাচ্ছে। আগে একে খান থেকে বারৈয়ারহাট ৮০ থেকে ১০০ টাকায় যেতাম। ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া যোগ করলে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা আসে। অথচ তারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দাবি করছে। প্রাইভেটকারগুলো জনপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা চাচ্ছে।
টাইগারপাস, লালখানবাজার, দেওয়ানহাট ও জিইসি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গণপরিবহনে যাত্রী ওঠানামা করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, একটি আসন ফাঁকা রাখা, বাসের চালক, হেলপার, যাত্রীদের মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবস্থাসহ সাত ধরণের নির্দেশনা জারি করলেও বেশিরভাগ গণপরিবহনে তা মানতে দেখা যায়নি। তবে গণপরিবহণ চালুতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।
গণপরিবহন চালুতে স্বস্তি প্রকাশ করে ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তা মোহাম্মদ এরশাদ জানান, চলতি মাসের শুরু থেকেই কঠোর লকডাউন থাকলেও ব্যাংক খোলা থাকায় অফিসে যেতে হতো। তখন গণপরিবহন না থাকায় আমরা সাধারণ মানুষ খুব বিপত্তিতে পড়েছিলাম। এ সমস্যার আপাতত সমাধান হয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় আছি।
আগ্রাবাদ এলাকায় বাস থেকে নামেন পঞ্চাশোর্ধ আবদুল ওয়াহাব। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, জিইসি থেকে আগ্রাবাদ ভাড়া আগে ৭ টাকা ছিল। করোনা আর লকডাউনের সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে সে ভাড়া ১০ টাকা করে নিচ্ছে। আজ ২০ টাকা ভাড়া নিয়ে নিল। গণপরিবহগুলো কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, নিয়ম না মেনে বাড়তি ভাড়াও আদায় করছে।
এদিকে আশা ছিল লকডাউন শিথিলে ছন্দ ফিরবে নাগরিক জীবনে। কিন্তু পুরো ছন্দে ফিরেনি নগরী। এর মধ্যে ঈদ উপলক্ষে গ্রামে ছুটতে শুরু করেছেন মানুষ। লকডাউন শিথিলের পর প্রথমদিনেই ব্যবসায়ীরা অস্বস্তিতে পড়েছেন দোকান খুলে। সড়কে গাড়ি নামিয়ে খরচও তুলতে পারেনি গণপরিবহনের চালকরা। একইভাবে জমে উঠেনি চট্টগ্রাম নগরের রেস্তোরাঁ, ফার্ণিচার দোকান, বিপনি-বিতানসহ অন্যান্য ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে গাড়িতে যাত্রী কম থাকলেও রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের যানবাহনের সংখ্যা ছিল বেশি। এতে অনেক স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঈদের ঠিক আগ মূহুর্তে লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্তকে ব্যবসায়ীরা সাধুবাদ জানালেও শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, কোরবানের আগ মুহুর্তে লকডাউন শিথিল হয়েছে। তাই মানুষের ব্যস্ততা এখন কোরবানি ঘিরে। অন্যন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেচা বিক্রি নেই। পাশাপাশি করোনার প্রভাবে ফুটো হয়ে গেছে মানুষের পকেট। তাই বিপাকে পড়েছেন মোবাইল এক্সেসরিস, ইলেকট্রনিক আইটেম, রেস্তোরাঁ, ফার্ণিচারসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রয়েছে করোনা সংক্রমণের শঙ্কায়।
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় সাতদিনের কঠোর বিধি-নিষেধ। এই বিধি-নিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়িয়ে অর্থাৎ ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়। যা এখন শিথিল হলো। এদিকে ২১ জুলাই দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল আযহা উদযাপিত হবে। তবে ঈদের পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করার প্রজ্ঞাপন জারি করে রেখেছে সরকার।