লকডাউন : করোনা সচেতনতা ও নানা কথা

20

মো. কামরুল ইসলাম

করোনায় কাঁপছে পৃথিবী। বর্তমানে করোনা ঘন ঘন তার রূপ পরিবর্তন করছে। এক ঢেউ যেতে না যেতে আরেক ঢেউের কবলে পড়ে লন্ডভন্ড মানুষের জীবন। টিকা,স্বাস্থ্যবিধি পালন, লকডাউন, বিভিন্ন পদক্ষেপ যেন কিছুতে কিছু হচ্ছে না। এইভাবে চলতে থাকলে মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে এবং মানুষের টিকে থাকা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তাই প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি, কোরআনের শিক্ষায়, প্রত্যেক ধর্মের ধর্মীয় ভাবধারায় জীবন পরিচালনা করতে হবে ও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মহান আল্লাহ সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। মহান আল্লার সাহায্য ব্যতীত এই মহামারি থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। সকলের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, পৃথিবীর সব পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলি কি পারে না তাদের পারমানবিক বোমা, হাইড্রোজন বোমা, নৌবহর পাঠিয়ে সামান্য ভাইরাস বা অনুজীব যা চোখ দেখা যায় না তা প্রতিহত করতে, অবশ্য তা তারা পারবে না এইটি মহান রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা। তাই আজ থেকে ১৪৫০ বছর আগে মহামানব নবী করিম (স.) বলেন, যখন প্রতিটি দেশে কোন নারী, পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হবে, অন্যায় অত্যাচার বেড়ে যাবে আর ঐ ঘটনা তারা তাদের ঘনিষ্ট জনের নিকট অনেকটা ভাবাবেগে প্রকাশ করে তৃপ্তি লাভ করবে তখন সারা পৃথিবীতে মহামারি সংঘটিত হবে যা কোন না কোন ভাবে তারা নিজেরাই দায়ী থাকবে।
মহান আল্লাহপাক্ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরানে সূরা- আল-রুম [৩০] নং আয়াতে বলেন- ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে’। এইছাড়াও আল্লাহপাক্ রাব্বুল আলামিন সূরা নিসার ৭৮ নং আয়াতে বলেন, তোমরা যেখানেই থাক্ না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান কর,তবুও। বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণসাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।
আজ পুরো পৃথিবীজুড়ে ব্যভিচার চলছে। দুর্নীতি বাড়ছে অসহায়রা অপমানিত হচ্ছে, প্রতিটি দেশে লুটেরা ভরে গেছে যেখানে বিশ্বব্যাপী অন্যায়ের রাজত্ব চলছে। সেই সমাজ ব্যবস্থায় মহামারি দেখা দিবে অনেকের মতে যা স্বাভাবিক। যে সমাজের মানুষ সচেতন নয়, ধর্মীয় ভাবাবেগে জীবন পরিচালনা করে না, অন্যায়, জবরদখলে ব্যস্ত সত্য কথা বলার স্বাধীনতা নেই, সেই সমাজে এমনটা হতেই পারে। ১৪৫০ বছর আগে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যখন মহামারি দেখা দিবে তখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে কেউ যাতায়াত করবে না। যে যেখানে থাকবে সে সেখানে অবস্থান করবে বর্তমানে আমরা যাকে বলছি ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’।
বর্তমানে সরকার কর্তৃক লকডাউন করে মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এই দুঃসময়ে আমাদের উচিত বেশি বেশি সচেতন হওয়া ও মহান রবের নিকট দোয়া করা। প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা তারা নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে পারেন। তাহাছাড়া প্রতিটি মুসলমান প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে যার যার অবস্হান থেকে দোয়া করতে পারেন এই বলে যে, ‘হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে উম্মাদ কুষ্ঠ, ধবল সহ বিভিন্ন রোগ ও মহামারি থেকে রক্ষা করো। তুমি একমাত্র আশ্রয় দাতা’।
২০১৯ সালে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস যার আনুষ্ঠানিক নাম ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) অনুযায়ী সিওভিআইডি-১৯। সেই ভাইরাসটি আমাদের দেশে ২০২০ সালে যখনই সনাক্ত হয় তখনই সরকার কয়েক ধাপে কয়েকবার লক ডাউন দিয়ে ও কার্যকর তেমন কিছুই করতে পারেনি। এর জন্য দায়ী মানুষের অসচেতনতা। বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ও তেমন সফলতান অর্জন সম্ভব হয়নি। এখন আবার লক ডাউন চলছে, হয়ত পরিস্থিতি বেগতিক হলেই সরকার বাধ্য হয়ে অন্য কোন উপায় না দেখে আবার লকডাউন দেবে যা স্বাভাবিক তবে লক ডাউনে পরিস্থিতি কি নিয়ন্ত্রণে আসবে।অনেকের মতে, না কারন যেখানে মানুষের আরো বেশি সতর্ক হওয়ার কথা ছিল সেখানে বর্তমানে সতর্কতা শুন্যের ঘরে। বেঁচে থাকার তাগিদে শ্রমজীবি মানুষের নিকট লকডাউন এখন বিষফোঁড়া মাত্র।
তাদের মতে, না খেয়ে মরে যাওয়ার চাইতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল। লকডাউনে মানুষকে সচেতন করা সম্ভব না হলে দ্রুত সেনাবাহিনী দিয়ে মানুষকে এই বেপরোয়া গতি ও অসচেতনতার বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে পরিস্থিতি সরকারের পক্ষে সামাল দেয়া অসম্ভব হবে। অন্যদিকে আগামীতে লকডাউনের সময় সীমা বারবার বাড়ানো হলে, তার বিপরীতে সরকার কর্তৃক যদি জনমানুষের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে নীরব দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, অরাজকতা বাড়বে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হবে, দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে তা সরকারকে আগে ভাগে ভাবতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবীও একদিনে সৃষ্টি হয়নি। যুগে যুগে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আজকের অবস্থান। যে সব প্রাণী পরিবর্তেনে নিজকে খাপ খাওয়াতে সক্ষম তারা আজও টিকে আছে লড়াই করে বাকিরা বিলুপ্ত বা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। ‘ডাইনোসর’ নেই কিন্তু টিকটিকি আজও টিকে আছে। যদিও লকডানের মূলউদ্দেশ্য হচ্ছে এই করোনাভাইরাস টি দ্রুত মানুষের শরীরে ছড়ানো থেকে খানিকটা যাতে কম ছড়ায় তার খানিকটা চেষ্টা করা মাত্র। এই চেষ্টা দীর্ঘ স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নয় তবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটির উপরে মানুষ বাস করে। আজ মানুষ লাগামহীন। মানুষ ভুলে যায়, মানুষ যখন তার সীমা অতিক্রম করে তখন প্রকৃতি তার চরম প্রতিশোধ নেয়। তাই মানুষকে প্রকৃতি প্রেমিক হতে হবে, প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে নতুবা প্রকৃতিতে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
অতি সম্প্রতি তাইওয়ানের এক গবেষণায় দেখা গেছে কারও যদি জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা হয় যা ৩/৪ দিন দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব না হলে নিঃশ্বাস বন্ধ করে যদি ১০ সেকেন্ড পর বুকে ব্যথা সহ অন্য কোন সমস্য হচ্ছে না বলে মনে হয় তাহলে যে কেউ ধরে নিতে পারে সে আপাতত করোনা আক্রান্ত নয়। এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাস তার রূপ পরিবর্তন করায় বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ঘনঘন পানি পান করে গলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। পানি পান করলে করোনা ভাইরাস পানির সাথে পাকস্থলী গিয়ে পাকস্থলীর এনজাইম দ্বারা তা অকার্যকর হয় বা ভাইরাসটি মরে যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে কোন টিকার কোন বিকল্প নেই, টিকা দিলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকলে ও মৃত্যুর ঝুঁকি থাকবে না বা কম থাকবে।
দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসের তীব্রতা খুব বেশি হওয়া মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকান এই ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসটি বাংলাদেশে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে আংশিক কার্যকর হতে পারে আবার নাও হতে পারে সেটি আশংকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি দেশের স্বাস্থ্যখাতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। এমনকি যারা একবার করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে সেটি ও এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে কোন ভ‚মিকা রাখবে না। সেই ক্ষেত্রে ব্রিটিশ এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার পর রোগীর যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে এই ভ্যারিয়েন্টের নিকট তা হার মানবে। তাই সরকার কর্তৃক নির্দেশনা সমূহ মেনে চলা,সচেতন হওয়া, ধর্মীয় ভাব ধারায় জীবন যাপন করা আমাদের উচিত না হয় মৃত্যু অবধারিত, এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, গণ-মাধ্যমকর্মী