লকডাউনে অ্যাম্বুলেন্স ট্রাকে যাত্রী পরিবহন

75

করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সারাদেশে চলছে লকডাউন। এতে জরুরি সেবায় অন্তর্ভুক্ত ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তার সাথে বাদ পড়েনি গণপরিবহনও। আর গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যাত্রী পরিবহন করছেন অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক চালকরা। এভাবে সরকারি নিয়ম না মানার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে প্রবল। একই সাথে মূল ভাড়ার ৫ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।
গতকাল মঙ্গলবার শাহ আমানত সেতু এলাকায় দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। অথচ ট্রাফিকের চেকপোস্ট থাকলেও যাত্রী পরিবহন করা এসব যানবাহনকে বাঁধা দিতে দেখা যায়নি। শুধু শহর অভিমুখে আসা যানবাহনকে যাচাই-বাছাই করতে দেখা গেছে। কিন্তু শহর থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়ির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। জেলা প্রশাসন বলছে, অ্যাম্বুলেন্সে করে শুধু রোগী পরিবহন করা যাবে। তার বাইরে অন্য কোনো যাত্রী পরিবহন করা দন্ডনীয়।
জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল থেকে আজ ২১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার কথা থাকলেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এতে সারাদেশের মতো বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে গাড়ি পাচ্ছেন না তারা। লকডাউন ঘোষণার পর থেকে বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ শহরে আসতে পারছেন না, আবার শহরের মানুষ গ্রামে যেতে পারছেন না। আর যাদের শহরে নিতান্তই আসতে হচ্ছে, তারা মুভমেন্ট পাস নিয়ে শহরে প্রবেশ ও বের হচ্ছেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহরে আসা রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এবং কাঁচা সবজি ও পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকে করে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে কিছু অসাধু চালক।
এ মহামারিতে একে টাকা আয় করার মোক্ষম সুযোগ বলে মনে করছেন এসব চালক। শুধু তাই নয়, মূল ভাড়ার ৫ গুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর তিনটার দিকে নগরীর শাহ আমানত সেতুর বশরুজ্জামান চত্বরে গিয়ে দুইটি এ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। যার মধ্যে একটা যাচ্ছে বাঁশখালী, অন্যটি লোহাগাড়া। বাঁশখালীর অ্যাম্বুলেন্সটি আনোয়ারা ও বাঁশখালীর যাত্রী তুলছেন, অন্যটি পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, কেরানীহাট এবং আমিরাবাদের যাত্রী তুলছেন। একই সাথে হালকা পণ্য নিয়ে চকরিয়ার দিকে যাওয়া একটি ট্রাকে যাত্রী ডাকতে দেখা গেছে। ট্রাক চালক বলছেন, পেছনে বসার সু ব্যবস্থা আছে।
ট্রাকে উঠা যাত্রী নেজাম উদ্দিন জানান, জরুরি প্রয়োজনে চকরিয়া যেতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকে উঠে পড়লাম। ভাড়া ৫০০ টাকা দাবি করছে। চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পথে পুলিশে ধরবে, বিভিন্ন জায়গায় ম্যানেজ করে যেতে হয়। তাই ভাড়া একটু বেশি আদায় করছি।
অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী রকিবুল হাসান বলেন, নতুন ব্রিজ থেকে কেরানী হাট যাব। একদাম ৪০০ টাকা বলছেন চালক। আবার গাড়ি না পেলে বাড়ি যাওয়াও সম্ভব না। ভেবে-চিন্তে উঠে পড়লাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, রোগী নিয়ে মেডিকেল এসেছিলাম। এখন খালি চলে যেতে হচ্ছে। তাই ভাবলাম কয়েকজন যাত্রী নিয়ে যাই। তাই এখানে (শাহ আমানত সেতু মোড়ে)অবস্থান করছি।যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে আরেক ট্রাক চালক বলেন, রাস্তায় গাড়ি নেই, তাই কিছু যাত্রী নিচ্ছি। আমরা তো কাউকে জোর করে গাড়িতে তুলছি না। যাত্রীরা খুশি হয়ে গাড়িতে উঠছেন আর টাকা দিচ্ছেন।
একেতো নিষেধাজ্ঞা তার উপর অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন কেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সবকিছু বন্ধ, যে ভাড়া নিয়ে এসেছি, তা তো আর যাওয়ার সময় পাচ্ছি না। ভাড়া যাতে ভারসাম্য করতে পারি, তাই কিছুটা বাড়িয়ে নিচ্ছি। যাত্রীরাও দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক পূর্বদেশকে বলেন, লকডাউন মানে সবকিছু বন্ধ। জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়ে আসছি। তার বাইরে আইন অমান্যকারীদের আমরা শাস্তি প্রদান করছি।
এ্যাম্বুলেন্সে করে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, শাহ আমানত সেতু এলাকায় আমরা অবস্থানকালে দেখেছি কিছু গাড়ি যাত্রী পরিবহন করছে। সেগুলোকে আমরা জরিমানা প্রদান করছি। তাছাড়া সকল যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধের নির্দেশনাও রয়েছে। কেউ মিনি ট্রাক বা এ্যাম্বুলেন্সে যাত্রী পরিবহন করলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ্যাম্বুলেন্সে করে শুধু রোগী পরিবহন করা যাবে। তার বাইরে অন্যকোন যাত্রী পরিবহন করা দÐনীয়।