লংগদুতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে যান চলাচলে নিষিদ্ধ ঘোষণা

33

রাঙামাটির লংগদুতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটিতে যান চলাচলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের গাউচপুর ফরেস্ট অফিস এলাকায় নদীর উপর নির্মিত সেতুটি। পাহাড়ী ঢলের প্রবল স্রোতে সেতুটির মাঝখানের একটি পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে নড়বড়ে হয়ে গেছে এবং আরেকটি পিলার ও রেলিং ভেঙে গেছে অনেক আগে। যার ফলে সেতুটি বর্তমানে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। উপজেলার পূর্ব পাড়ের বগাচতর, গুলশাখালী ও ভাসাইন্যাদম এ তিনটি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক জনসাধারণ মোটরসাইকেল ও পায়ে হেটে যাতায়ত করেন গাউচপুর ফরেস্ট অফিস এলাকার সেতুটি দিয়ে। সেতুটি নড়বড়ে এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্খা করছেন এলাকাবাসী। এবিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, অনলাইন ও ফেইসবুকে অনেক লেখালেখি হলে উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। গত মঙ্গলবার লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা মাইনুল আবেদীন সরেজমিনে সেতুটি পরিদর্শণ করেন। পরিদর্শনকালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. যোবায়ের হোসেন, উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী চিদ্দিকুর রহমান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। শেষে সকলের সম্মতিক্রমে চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এ সেতুর উপর দিয়ে শুধুমাত্র পায়ে হেটে পারাপার হওয়া যাবে, তবে কোনো মোটরসাইকেল চালিয়ে পার হওয়া যাবে না। অতিদ্রæত (২-১ দিনের মধ্যে) আপদকালীন সময়ের জন্য মোটরসাইকেল পারাপারের উদ্দেশ্যে কয়েকটি নৌকার সাহায্যে অস্থায়ী ফেরীর ব্যবস্থা করা হবে। অত্যন্ত দ্রæততার সাথে বিকল্প (বাঁশ ও কাঠের) সেতু তৈরির ব্যবস্থা করা হবে। তখন আর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে হেঁটে পার হওয়া যাবে না। সেতুটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন ব্রিজ নির্মাণ সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুততম সময়ে নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সকলকে এই সেতু দিয়ে যেন সাবধানের সাথে হেটে পারাপার হয় তার জন্য তিনি এলাকাবাসীর প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। জানা যায়, তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চলাচলের সুবিধার্থে ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে এডিবির অর্থায়নে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। জানা যায়, এ তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের বসবাস। এলাকাগুলোতে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বিজিবির একটি জোনও রয়েছে। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে গিয়ে হতাহতের মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বেশ কয়েকবছর ধরে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সরকারি গাড়ি, পাবলিক যানবাহন এবং স্থানীয়রা চলাচল করছেন এ সেতু দিয়ে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে গাউসপুর সেতুটি সংস্কার করার জন্য আন্দোলন করে আসছি। সরকারি প্রতিষ্ঠান এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদও দিয়েছি। কারণ তাদের দিয়ে সরকার সেতুটি নির্মাণ করেছিল। কিন্তু তাদের কোনো ইয়াত্তা নেই। গুলশাখালী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রহমত জানান, সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন এ ব্রিজটি ভেঙে পড়বে। কিছু মানুষ হয়তো হতাহতও হবে। যতো দ্রæত সম্ভব ব্রিজটা পুনঃর্র্নিমাণ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। বগাচত্তর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ জানান, আমরা আর কতো বলবো প্রশাসনকে, আমাদের দাবিতো পূরণ হচ্ছে না। আমরা এলজিইডির উপজেলা কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দিয়েছি সেতুটির ব্যাপারে কিছু করার। কিন্তু তারা নামে মাত্র কয়েকবার পরিদর্শন করে চলে গেছেন। বাস্তবে কিছুই হয়নি। লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার জানান, সেতুটি নিয়ে আমি নিজেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সেতুটি সংস্কার করার জন্য এলজিইডি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং রাঙামাটি জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। আমাদের এখন একটাই দাবি, সেতুটি সংস্কার নয়, নতুন সেতু নির্মাণ চাই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল লংগদু উপজেলার নির্বাহী প্রকৌশলী রণি সাহা জানান, ব্রিজটি এলজিইডি নির্মাণ করেছিল সে ব্যাপারে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। তিনি আরো জানান, সিএইচটি-আরডিপি-২ এবং ইউএইচবিপি নামে আরও দু’টি প্রজেক্ট রানিং আছে। চেষ্টা চলছে তার কোনো একটাতে গাউসপুর ব্রিজটি অন্তর্ভূক্ত করে দেওয়ার।