র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে?

23

ঢাকা প্রতিনিধি

মানবাধিকারের ক্ষেত্রে র‌্যাবের অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব শক্তিশালী করতে ঢাকায় এসেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তারা।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক কিভাবে অর্থবহ করতে পারি- সে বিষয়ে মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। সরকার ভালো পরামর্শ গ্রহণ করবে।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড বন্ধে র‌্যাবে বিশাল অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।
ডোনাল্ড লু বলেন, র‌্যাব নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আপনারা যদি এই সপ্তাহের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি দেখে থাকেন, তারা মনে করছে, আমরা মনে করছি যে, র‌্যাবের দ্বারা বিচার বর্হিভূত হত্যা বন্ধে অসামান্য উন্নতি হয়েছে। এটা খুবই ভালো কাজ হয়েছে। এটা প্রমাণ করছে, মানবাধিকার রক্ষা করেই সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো র‌্যাব করতে সক্ষম।
এর আগেই বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ডোনাল্ড লু’র সফরে আলোচনায় এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, র‌্যাবের কাজকর্মে তারা খুব খুশী। আমরা তাদের বলেছি, র‌্যাব এদেশে সন্ত্রাস বন্ধ করেছে। একসময় এই দেশে জিহাদি সন্ত্রাসের ভয়ে- আমাদের একজন জাজ মারা গেল, বিদেশি একজন হাইকমিশনার গেল, তার ওপর বোমা হামলা হলো, তিনি মারা যাননি, অন্য আরেকজন মারা গেল। …শেখ হাসিনার সমাবেশে বোমাবাজি হয়, গ্রেনেড হামলা হয়, ২৪ জন লোক মারা যায়, ৩৭০ জন গভীরভাবে আহত হয়। এখন সেই দিন নাই। এই র‌্যাব থাকায়, ইদানিং দে হ্যাভ ম্যানেজড..ইউ নো- আর ২০১৭ সালের পর দেশে কোন বড় ধরনের সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়নি। র‌্যাব ডান অ্যান এক্সিলেন্ট জব।
ডোনাল্ড লু বাংলায় বলেন, আমি এখানে এসেছি, আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে।
কোন পরামর্শ আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা আমেরিকান, সবসময়েই আমাদের অনেক পরামর্শ থাকে। এর একটি বিষয়ে আলোচনা করে আমরা খুশী, সেটা হলো শ্রম অধিকারের মতো ইস্যু। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি জনগণ এবং আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। শ্রম অধিকার ইস্যুতে আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারবো এবং আমি নিশ্চিত, এই বছর আমরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবো।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমূক্ত সুবিধা পেতে জেনারালাইজ সিস্টেম অব প্রেফারেন্স বা জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশ আবার পাবে কিনা জানতে চাওয়া হলে ডোনাল্ড লু বলেন, কোন কোন দেশকে বাণিজ্য অগ্রাধিকার দেয়া হবে, সেটা মার্কিন কংগ্রেস ঠিক করে থাকে। আমরা সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। কংগ্রেস যদি এই সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তালিকার প্রথম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ সেই সুবিধা পাবে।
র‌্যাবের ওপর থেকে কবে নাগাদ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হতে পারে, জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, এটা একটা প্রসেস, দে আর হ্যাপি, সো ফার দ্যা পারফর্মেন্স অব র‌্যাব (এটার একটা প্রক্রিয়া আছে, কিন্তু র‌্যাবের কর্মকাÐে তারা খুশী হয়েছে)।
এদিকে গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সফররত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি আরও বলেন, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার জটিল প্রক্রিয়া হলেও ভবিষ্যতে ক্লিয়ার হবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, র‌্যাব ইস্যুতে বাংলাদেশ সঠিক প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে। এতেই মীমাংসা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড লু সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করবে।
লু’র সফর শুরু হবার কয়েকদিন আগেই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে এই সফরের সময় লু জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম এবং মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন ডোনাল্ড লু। এর পরপরই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে যান। সেখানে তিনি ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নৈশভোজে অংশ নেন।