রোহিঙ্গা সংকট নিরসন না হলে অর্জন হবে শূন্য

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলার এখন সময় এসেছে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার এটাই সময়। আমাদের অংশীদারিত্বকে দেখার ক্ষেত্রে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা ও মর্যদা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা পালনেরও আহব্বান জানান। তিনি আরো বলেন, এ সমস্যা সমাধানে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বুধবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে স্পিকার্স হাউস স্টেট রুমে ‘বাংলাদেশ অ্যাট ৫০: দি রিজিলেন্ট ডেল্টা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
পার্লামেন্ট সদস্য রুশানারা আলী, হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড জিতেশ গাধিয়া ওয়েস্টমিনস্টারে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিকার অর্থেই দু’দেশের সম্পর্ক বর্তমানে কৌশলগত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন, সামুদ্রিক ও বিমান পরিবহন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের সহযোগিতার ওপর দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব ব্রিটিশ-বাংলাদেশি অভিবাসী দু’দেশের অংশীদারিত্বের কেন্দ্রে অবশ্যই বজায় থাকবে। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিবাসীদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। ওয়েস্টমিনস্টারে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রতিনিধিত্ব দেখে আমি আনন্দিত। আবার তাদের সকলেই নারী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বৈচিত্রপূর্ণ এই মহান পার্লামেন্টে তাদের আরো অনেকে নির্বাচিত হবেন।
রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, সংকট নিরসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু কক্সবাজারের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ আরো তীব্র হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো শিগগিরই এ অঞ্চলে এবং এর বাইরেও বিস্তার লাভ করতে পারে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে অবিলম্বে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। এই সংকট জিইয়ে রেখে সংশ্লিষ্ট সকলের অর্জন হবে কেবল শূন্যই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ২০০৮ সালের ২৪৩ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং নাম মাত্র জিডিপি’র ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বে ৪১তম। তিনি বলেন, সরকার গত এক দশকে দারিদ্রতার হার ৩১ দশমিক ৫ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে কমিয়ে এনেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। তিনি আরো বলেন, মাথাপিছু আয় ২০০৮ সাল থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এ বছরে হয়েছে ২২২৭ মার্কিন ডলার। অপর দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাত গুণ বেড়ে ২০২১ সালে হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, সরকার একটি সমৃদ্ধ আর্থিক এবং সামাজিক সুরক্ষা প্যাকেজ তৈরি করেছে এবং এটি বিগত ২০২০ সালে দেশকে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করেছে, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।
কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহামারি করোনা মোকাবেলা আবারও আমাদের সহনশীলতা পরীক্ষা করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম কভিড-১৯ মৃত্যুর হার ছিল আমাদের দেশে। আমরা গ্লোবাল ভ্যাকসিন আমাদের ইক্যুইটি নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি রয়েছি, তিনি যোগ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পগুলো নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যার অনেকগুলো নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু হবে বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুগুলোর একটি।
এ ছাড়া তিনি বলেন, আমরা এক দিকে সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে কাজ করছি, অপর দিকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশে পা রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদ লাভ করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে রয়েছে, তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের অবশ্যই ভালো, শক্তিশালী এবং সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ অন্যতম জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আমরা এখন জলবায়ু সহনশীলতা নিয়ে কাজ করছি। সম্প্রতি আমরা ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ দীর্ঘমেয়াদে একটি সহনশীল ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার একটি নীলনকশা।
শেখ হাসিনা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে শিক্ষা ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। আমি এমন একটি সমাজের কল্পনা করি যেখানে মেয়ে ও নারীদের প্রতি কোনো বৈষম্য থাকবে না, বলেন তিনি। বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি বজায় রেখেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের সাথে মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি অবিচল অঙ্গীকার যৌথভাবে ভাগভাগি করে। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশ ভিন্ন দিকে পরিচালিত হয়েছিল। সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি পুনরুদ্ধার করতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক সংগ্রাম করতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়পরায়ণ, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতি গঠনে তিনি তার জীবন ও রাজনীতি উৎসর্গ করেছেন। ৫০ বছর বয়সে বাংলাদেশ এখনও একটি উন্মোচিত গল্প। আগামী অধ্যায়গুলো হবে আরও রোমাঞ্চকর। আমি আপনাদের সঙ্গে থাকার এবং এই উদ্যোগে আমাদের সঙ্গে যোগদান করার জন্য আপনাদের অনুরোধ করছি, তিনি যোগ করেন।