রোহিঙ্গা শিবির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিলো এপিবিএন

23

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
এতদিন ক্যাম্পগুলোতে কক্সবাজার জেলা পুলিশ এ দায়িত্ব পালন করলেও বুধবার (১ জুলাই) থেকে এপিবিএনের ১৪ ও ১৬ ইউনিট এই দায়িত্ব পালন করছে। তবে মামলাসহ আইনি প্রক্রিয়া আগের মতো জেলা পুলিশের অধীনে থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ক্যাম্পের আকার ও লোকসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রতি ক্যাম্পে কমপক্ষে ৩০ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। তাদের নেতৃত্বে থাকবেন একজন পরিদর্শক। তাদের তদারকির জন্য নিয়োজিত থাকবেন একজন সহকারী পুলিশ সুপার। এছাড়াও ১৪ ও ১৬ এ দুটি এপিবিএনে পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার একজন অধিনায়কের পাশাপাশি প্রতিটি এপিবিএনএ একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং চারজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদায়ন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধ দমনসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি এতদিন জেলা পুলিশ দেখভাল করতো। কিন্তু জেলা পুলিশে জনবল সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ সদস্যদের ডেপুটেশনে এখানে এনে ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হতো। এখন আর সেই সমস্যা থাকছে না।
তিনি বলেন, এখন থেকে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাশুনা করবে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। শুধুমাত্র রোহিঙ্গা শিবিরে দায়িত্ব পালনের জন্য ১৪ ও ১৬ দুটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এপিবিএন কাজ শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন সব কার্যক্রম এখন এপিবিএন দেখাশুনা করছে।
পুলিশ সুপার বলেন, আইন-শৃঙ্খলাজনিত দায়িত্ব, যৌথ টহল, গাড়ি দিয়ে টহল, চেকপোস্টসহ সবকিছু এখন থেকে এপিবিএন দেখবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে এপিবিএনকে সহায়তা করবে জেলা পুলিশ।
১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা জানান, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয় শিবির রয়েছে। সেখান থেকে উখিয়ার ক্যাম্প-১৩,১৪,১৫,১৬ এবং ১৯ নম্বর ক্যাম্প এবং টেকনাফের সবকটি ক্যাম্পসহ ১৩টি ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তা এবং আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে ১৬ এপিবিএন। বাকি ক্যাম্পগুলোতে ১৪ এপিবিএন কাজ করবে। এছাড়াও ক্যাম্পের বাইরে মেরিনড্রাইভ সড়কে রামুর হিমছড়ি,উখিয়ার সোনারপাড়া এবং টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টটিও এখন থেকে ১৬ এপিবিএন দেখভাল করবে।
এপিবিএনের এই কর্মকর্তা আরও জানান, রোহিঙ্গারা যেন বাইরে যেতে না পারে আবার বাইরের কোনো রোহিঙ্গা ভেতরে ঢুকতে না পারে এসব বিষয়গুলোসহ ক্যাম্পের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এপিবিএন বুধবার (১ জুলাই) থেকে কাজ শুরু করেছে।
‘প্রতিটি ব্যাটালিয়নে ৫৮৮ জন করে দুটি ব্যাটালিয়নে প্রায় এক হাজার ২০০ জনবল দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৬ এপিবিএনএ প্রায় ৪০০ ফোর্স যোগদান করেছে। অন্য সদস্যরাও পর্যায়ক্রমে যোগদান করছে। সেখান থেকে ২৫০জনকে ক্যাম্পে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। ফোর্স যোগদানের সংখ্যা বাড়লে ক্যাম্পেও জনবল আরও বাড়ানো হবে যোগ করেন সোহেল রানা।
কক্সবাজারের ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, মূলত ১৪ জুন থেকে ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এপিবিএন দায়িত্ব নেওয়া শুরু করেছে। বুধবার (১ জুলাই) থেকে পুরোপুরি ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্ব এপিবিএন সদস্যরা পালন করছেন।
তিনি বলেন, এতদিন জেলা পুলিশের অধীনে এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে জেলা পুলিশের সদস্যদের ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ক্যাম্প এলাকায় আগে যে পুলিশ ক্যাম্পগুলো ছিলো সেগুলোতে এখন এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি নতুন করে আরও কিছু স্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য ২০১৮ সালে এপিবিএন ১৪ এবং গত বছর ডিসেম্বর এপিবিএন ১৬ নামে দুটি নতুন ইউনিট চালু করা হয়। তবে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দুই ইউনিটে আলাদা করে জনবল পদায়ন করা হয়েছে। এসব এপিবিএন-এ অধিনায়কের দায়িত্বে থাকবেন একজন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন জানান, এক জায়গায় এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা অবস্থানের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নানা অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকট। তাছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো বেশিরভাগ পাহাড়ি এলাকায় হওয়াতে ক্যাম্পের আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ অনেকটা কষ্টসাধ্য।
তিনি বলেন , এতদিন জেলা পুলিশের অধীনে এসব দায়িত্ব থাকলেও এখন থেকে ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কাজ করবে এপিবিএন। তবে আমলযোগ্য অপরাধ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত, অনুসন্ধান কাজগুলো আগের মতো জেলা পুলিশ দেখভাল করবে।
বর্তমানে ক্যাম্পের ভেতর থেকে জেলা পুলিশের শতভাগ সদস্যকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে চেকপোস্টগুলোতে জেলা পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে।
উল্লেখ্য, উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলতে থাকায় ১৯৭৮ সাল থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করে। মাঝখানে ১৯৯১-৯২ সালেও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পরে অবশ্য এদের বেশিরভাগ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও সেদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। নতুন পুরনো মিলে বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। এমনকি রোহিঙ্গাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধসহ ক্যাম্পগুলোতে দিন দিন নানা অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃংখলা রক্ষায় হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এমনকি ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫২টি হত্যাকাÐসহ নানা অপরাধে ৬৬৮টি মামলা হয়েছে। যেখানে আসামির সংখ্যাও প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি। তবে এতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশ-পাশের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব জেলা পুলিশ পালন করলেও, এখন থেকে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা এ দায়িত্ব পালন করছে। তবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাবের যৌথ টহল অব্যাহত থাকবে। খবর বাংলানিউজের