রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভয়াবহ আগুনখেলা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ দরকার

20

 

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অমানবিক অত্যাচারে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা নর-নারী দেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকারের জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বিশাল একটা বোঝা। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে টেকনাফ উপজেলা ইয়াবা চোরাচালানের রুট। মিয়ানমার হতে চোরাপথে ইয়াবার মতো ভয়াবহ অবৈধ মাদক প্রবেশ করে দেশে। ইয়াবা কারবারিরা রোহিঙ্গাদের মাদক চোরা চালানে ব্যবহার করছে। তাছাড়া প্রত্যাবসানের অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেশি। উখিয়া-টেকনাফ কক্সবাজারে এক শ্রেণির দুষ্ট প্রকৃতির লোক রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধকান্ডে ব্যবহার করে সাময়িক ফায়দা লুটতেও দেখা যায়।
সরকার ভাসানচরসহ দেশের অন্য স্থানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুর্নবাসনের চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। সরকার, বহিরবিশ্ব এবং জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে রোহিঙ্গাদের নানা রকম মানবিক সাহায্য প্রদান করা অব্যাহত আছে। তারপরও ভিটে-বাড়িসহ সর্বস্ব হারা রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপন করছে। মানবিক সহায়তা রোহিঙ্গারা যা পায় তাতে জীবনমান উন্নয়ন তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ক্যাম্পসমূহ গায়ে গায়ে ঠাসা বস্তির চেয়েও ঘনবসতিপূর্ণ। তাদের ক্যাম্পগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে পানির ব্যবস্থা কিংবা পুকুর জলাশয় নেই। পাহাড়ি টিলার মধ্যে শুকনো মৌসুমে এমনিতে পানির সমস্যা সৃষ্টি হয়। তার উপর টিন-বাঁশ-গাছ ও পলিথিন দ্বারা তৈরি নিম্নমানের শরণার্থী আবাসসমূহ আগুন লাগার বিষয়ে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটু অসতর্কতার কারণে শুকনো মৌসুমে এধরনের আবাসনে আগুন লাগলে তা নেভানোর পূর্বেই জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি উখিয়া, টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বার বার আগুন লেগে তাদের ব্যাপক যান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় বিগত ৮ মার্চ উখিয়ার কুতুবপালং ৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সর্বশেষ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্যাম্পের ৪০০ ঘর পুড়ে যায়। এতে প্রায় আড়াই হাজার নর-নারী সহায় হারা হয়। আগুনে পুড়ে ১ শিশুর মৃত্যুও হয়। ইতোপূর্বে ২ জানুয়ারি উখিয়ার বালুখালী ২০ নম্বর ক্যাম্পের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত করোনা হাসপাতালের জেনারেটর থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সে আগুনে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় নি। কিন্তু গত ৯ জানুয়ারি উখিয়ার শফিউল্লাহ কাটা নামের একটি ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। তাতে ৬০০ টি ঘর পুড়ে যায় তিন হাজারের বেশি শরণার্থী আশ্রয় হারায়। গত বছর ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগে ১০ হাজারের মতো ঘর পুড়ে যায় এবং পুড়ে মারা যায় ১৫ রোহিঙ্গা। বার বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগার বিষয়টি ক্যাম্পবাসী এবং প্রশাসনের অবহেলা জনিত কারণে ঘটছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে বাড়ি-ঘর বসতি এলাকা, দোকানপাট, মার্কেট এবং কলকারখানায় অসতর্কতা জনিত কারণে রেশিরভাগ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিকান্ড বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা না ঘটার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সতর্কতা মূলক প্রচারণার ব্যবস্থা করা জরুরি। প্রশাসন কঠোর ভাবে রোহিঙ্গাদের এ বিষয়ে নজরদারী করলে অগ্নিকান্ডের ক্ষয়-ক্ষতি হতে রোহিঙ্গারা রক্ষা পাবে এমন ধরণা সচেতন নাগরিকদের।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগার ঘটনা কোন মানবিক মানুষের জন্য সুখকর নয়। রোহিঙ্গারা এমনিতে খুবই নিঃষ ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। তার ওপর তাদের আশ্রয় স্থল পুড়ে তাদের আশ্রয় হীন হয়ে পড়া খুবই দুঃখজনক। এব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশাসনিক কঠোর পদক্ষেপ অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচাতে পারে।