রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আর নয়

7

বেশ কয়েকদিন ধরে রাখাইন রাজ্য জুড়ে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির প্রচন্ড সংঘাত চলছে। এ সংঘাত এখন বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফের একেবারে কাছেই চলে এসেছে। দৈনিক পূর্বদেশে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলা সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির প্রচন্ড শব্দ থেমে থেমে শোনা গেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, বুধবার ভোর ৩টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গুলির বিকট শব্দ পাওয়া যায়। গত রবিবার ও সোমবারের এ জাতীয় সংঘাত এবং সীমান্তের ওপারে মার্টার শেল নিক্ষেপের ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গও দেখা যায়। টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, ওপারের গুলি ও মর্টার এপারের অনেকে ঘরের দেয়ালেও এসে লেগেছে। বিশেষ করে, গত মঙ্গলবার রাতে প্রচন্ড গোলাগুলির মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে ৩টি মর্টার শেল এসে পড়েছে।
জানা গেছে, রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। গত শনিবার সংঘর্ষের খবরের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উলুবনিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের বাড়িতে একটি গুলি এসে পড়লে আতঙ্ক তৈরি হয়। পূর্বদেশের প্রতিবেদনে হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রামের স্থানীয় অধিবাসীদের সূত্রে উল্লেখ করেছে, মিয়ানমারের ভেতরে মর্টার শেল নিক্ষেপ হলে সীমান্তের এপারের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। মর্টার শেল, গুলি এদিকে এসে পড়ে কি-না স্থানীয়রা সবসময় সেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘাত নতুন নয়। দীর্ঘ পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে এ জাতীয় সংঘাত চলে আসছে। তবে দেশটির গণমাধ্যম বলেছে, এ সংঘাত এখন রাখাইনে সীমাবদ্ধ নেই, চীন ও থাইওয়ানের সীমান্ত এলাকায়ও চলছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় দেশটির সেনাবাহিনী তুচ্ছ ঘটনার অজুহাতে ব্যাপক অভিযান ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় রাখাইন রাজ্যে। এ সময় রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনের অভিযোগ আসে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে সেই অভিযোগ প্রমানিত হয়। তবে মিয়ানমারের এ সংঘাতের বড় প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। রাখাইনের লাখো রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে নিজেদের নিরাপত্তার আশ্রয় নিতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
সরকার প্রথমদিকে বাধা দিলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহবান ও প্রধানমন্ত্রীর মানবিক বিবেচনায় সাড়ে চার লাখের অধিক রোহিঙ্গা সেই সময় টেকনাফ ও রামু এলাকার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনা তখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার জড় বয়েছিল। একদিকে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রশংসা করতে থাকেন অপরদিকে মিয়ানমারের সুচি সরকারের ব্যাপক সমালোচনা ও ধিক্কার দিতে থাকেন। বাংলাদেশ শুরু থেকে বলে আসছিল রোহিঙ্গাদের কিছু সময়ের জন্য মাত্র আশ্রয় দেয়া হচ্ছে, তবে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। এ জন্য তিনি গত ছয় বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়ে আসছিলেন, সবাই কথা দেন, কিন্তু কার্যত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এখনও দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি দেশটিতে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। সুচি সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে আবারও অভিযান শুরু করলে আরাকান আর্মিসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর সাথে সামরিক বাহিনীর ব্যাপক সংঘাত শুরু হয়। এ ঘটনা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আবারও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের। ইতোমধ্যে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে। রোহিঙ্গা সংকট দেশের জন্য এখন পাহাড়সম সমস্যা। তাদের কারণে কক্সবাজার এলাকাজুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। পরিবেশ ও অর্থনৈতিক সংকটে রোহিঙ্গাদের দায় রয়েছে। সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ মানব পাচারে রেহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, যার দায়ভার নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের মানুষ এখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া থেকে মুক্তি চায়। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ থাকবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে প্রত্যাশা।