আত্মগোপনে দুদকের মামলার আসামিরা

67

রোহিঙ্গা নাগরিকের পরিচয় জেনেও গোপনে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ভুয়া জন্মনিন্ধন সনদ প্রদান ও স্মার্ট কার্ড পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলার আসামিরা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের কেউ কেউ আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেপ্তার এড়াতে উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তী জামিন নেয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আসামিদের মধ্যে চসিকের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছেন। অবশ্য মামলার আসামি হওয়া নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে গত ১৪ ও ১৫ জুন রোহিঙ্গা নাগরিকদের পরিচয় জেনেও ভুয়া জন্মনিন্ধন সনদ প্রদান ও স্মার্ট কার্ড পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে পৃথক দু’টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় চসিকের পাথরঘাটা এবং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. ইসমাইল বালি ও সরফরাজ কাদের রাসেলকে আসামি করা হয়। তারা দু’জনেই দলীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। মামলা দায়েরের পর থেকে তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। দুই সাবেক কাউন্সিলরের অনুসারীরা অবশ্য দুদকের এই মামলার মধ্যে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ গন্ধও অনুভব করছেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, চার বছর আগে বিগত ২০১৭ সালে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান ও স্মার্ট কার্ড পাইয়ে দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সাবেক জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. ফরহাদ হোসাইন, পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ, ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. শাহ জামাল, পাঁচলাইশ থানার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অস্থায়ী সাবেক প্রæফ রিডার উৎপল বড়ুয়া ও রতœ বড়ুয়া, পাথরঘাটা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সাবেক জন্মনিবন্ধন সনদ সহকারী সুবর্ণ দত্তকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলি হওয়া কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, মামলায় চাক্তাই সোবহান সওদাগর রোডের বাসিন্দা পেশায় পাসপোর্টের দালাল মো. সিরাজুল ইসলাম, আশরাফ আলী রোডের মোহাম্মদ ইসমাইল ও তার স্ত্রী মেহের জান এবং ওই দম্পতির কথিত মেয়ে অহিদাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ ইসমাইল গত ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি পাথরঘাটা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে নিজের ও তার স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন সনদ এবং থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। একই প্রক্রিয়ায় তাদের মেয়ে পরিচয় দিয়ে অহিদা নামে একজনের জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি সংগ্রহ করা হয়। এমনকি ভুয়া পরিচয়ে তারা স্মার্ট কার্ডও হাতে পেয়ে যান। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর তারা পাসপোর্টের জন্য পাঁচলাইশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন জমা দেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাসপোর্টের আবেদনকারী তিনজনই প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গা নাগরিক। তাছাড়া মোহাম্মদ ইসমাইল ও মেহের জান পাসপোর্টের আবেদনকারী অহিদার প্রকৃত পিতা-মাতা নন। এজাহারে বর্ণিত ঠিকানায় তাদের তিনজনের কেউই বর্তমানে বসবাস করেন না। মূলত গোপনে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে প্রদত্ত জন্মনিবন্ধন সনদের সহায়তায় এসব রোহিঙ্গাকে যুক্ত করা হয়েছে ভোটার নিবন্ধন তালিকায়ও। একই সঙ্গে তাদের অনুক‚লে ইস্যু করা হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ডও।
উল্লেখ্য, অনুসন্ধানের পর গত ১৪ ও ১৫ জুন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ সদ্য বদলি হওয়া উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে সংশ্লিষ্টদের আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন। এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়, নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় সনদপত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ বানিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করা এবং পাসপোর্টের আবেদন ফরমের উপরে সত্যায়িত করার দায়ে দÐবিধি ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইন ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।