রোজার আগেই বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেশি

31

ফারুক আবদুল্লাহ

রমজান আসতে আরো দেড় মাসের মতো সময় বাকি। এরই মধ্যে বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া রমজান মাসে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এর কারণ- ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং আগাম প্রস্তুতি নিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত এলসি স্বাভাবিক না হলে রমজানে পণ্যের দাম আরও বাড়বে।
এদিকে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার রোজায় আমদানি করা পণ্যের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। একইভাবে সরকারের আরেকটি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, রোজার দেড় মাস আগেই গত বছরের তুলনায় আমদানি করা পণ্যের দাম গড়ে ৫৯ শতাংশ বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য মতে, গত ২০ থেকে ২৫ দিনে মানভেদে ছোলা মনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে ডাল বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা। এবং একই সময়ে মনপ্রতি চিনি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে।
এছাড়া সবধরনের মসলার দাম বেড়েছে। এর মধ্যে এলাসি কেজি প্রতি ২০০ টাকা এবং কেজি প্রতি জিরা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। তাছাড়া মরিচের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা কমলেও ধনিয়া ও হলুদের দাম স্থিতিশীল।
আর আদা-রসুনের দাম বাড়লেও খাতুনগঞ্জে বিদেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২২ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এবং দেশি পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকার মধ্যে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, রমজানে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি থাকবে। এর কারণ হলো- আগে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ৮৫-৮৬ টাকা হলেও বর্তমানে তা ১০৭ টাকা হয়েছে। আর ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে ৩০-৩৫ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা রমজান উপলক্ষ্যে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারেননি। এরইমধ্যে ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে ভারত ও মিয়ানমার থেকে রমজানের পণ্যর আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই সহজে এসব দেশ থেকে পণ্য আনতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। এর পরিমাণ গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় অনেক বেশি। তারপরও বিভিন্ন মাধ্যমে এলসি খোলার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। তিনি জানান, রমজান মাসে পাঁচটি পণ্যের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আর বাজার স্বাভাবিক রাখতে এসব পণ্য আমদানিতে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এক বছর আগে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন বেশি চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। একইভাবে ভোজ্যতেল আমদানির জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ মেট্রিক টনের ঋণপত্র খোলা হয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। এ বছর ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন ছোলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারিতে ছোলার এলসি কিছুটা কমেছে। ৪২ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুললেও গত বছরের একই সময় ছিল ৩৬ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন। এ বছর ২৯ হাজার ৪৮২ মেট্রিক টন খেজুরের ঋণপত্র খোলা হয়েছে, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪৯৮ মেট্রিক টন।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বেচাকেনা একদম নেই, তবে পণ্যের সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু গত বছরের দামে পণ্য পাওয়া যাবে না। যদি সামনে সরবরাহ বাড়ে আশা করি দাম আরও কমবে।
এলসির বিষয়ে তিনি বলেন, বড় ব্যবসায়ী থেকে পণ্য নিয়ে মাঝারি-ছোট ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন। কারণ ডলার সংকটের কারণে এবার তারা ছোটখাট এলসি খোলে পণ্য আমদানি করতে পারেননি। তবে রমজানে পণ্যের সংকট হবে না।