রোগীকে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয় না, কেন?

84

‘রোগীদের ভাড়া দেওয়া হয় না’- এমন নোটিস ঝুলছে ঢাকার শ্যামলীর একটি বাড়িতে; সমালোচনার মুখে ওই ভবনের বাড়িওয়ালারা বলছেন, হাসপাতালকেন্দ্রিক দালালদের এড়াতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। শ্যামলীর বাস স্টপেজ থেকে হাঁটা দূরত্বে তিন নম্বর সড়কের ৩০ নম্বর বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, লেমিনেটিং করা একটা সাদা কাগজে লেখা রয়েছে ‘এই বিল্ডিংয়ে রোগী ভাড়া দেওয়া হয় না’।
ওই ভবনের মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ জসীম উদ্দিন গাজী বলেন, দালালদের খপ্পর থেকে রোগীদের ‘রক্ষা’ করতেই এই নোটিস টানানো হয়েছে। কোনো পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলেও ভাড়া পেতে অসুবিধা নেই।
ওই সড়কের মুখে রয়েছে সিকেডি ইউরোলজি হসপিটাল। ওই হাসপাতালের রোগীদের জন্য দালালরা ওই এলাকায় বাসা ভাড়া করায় বলে দাবি করেছেন জসীম। এছাড়া বাড়িটির এক কিলোমিটারের মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ প্রতিরোধ কেন্দ্র, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন নম্বর সড়কের এক মুদি দোকানি বলেন, ‘গরিব রোগীরা কি করবে বলেন? তাদের তো কোথাও থাকতে হবে? ৩০ নম্বর বাড়ির মতো কেউ নোটিস টাঙ্গায় না, কিন্তু বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা রোগী ভাড়া দিতে চায় না’। ওই সড়কের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, অন্য বাড়িগুলোতে এমন নোটিস না ঝোলালেও ভাড়া দেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া হয় যে, অসুস্থ রোগীর জন্য বাসা ভাড়া নেওয়া হবে কি না। অসুস্থ ব্যক্তি থাকলে সাধারণত বাড়িওয়ালারা ভাড়া দিতে চান না। খবর বিডিনিউজের
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, ‘এটা একটা জঘন্য কাজ। বাড়িওয়ালা সবসময় অত্যাচারী। সময়ে সময়ে তারা অত্যাচারের নতুন রূপ প্রকাশ করে। অসুস্থ রোগীদের বাসা ভাড়া না দেওয়া সেরকমই একটা ব্যাপার’।
রোগীদের ভাড়া না দেওয়ার কারণ বলতে গিয়ে ৩০ নম্বর বাড়ির তত্ত¡াবধায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রোগীদের ভাড়া দিলে অনেক সময় গভীর রাতে লিফট চালু রাখতে হয়, গেট খুলতে হয়। রোগী থাকলে বিল্ডিংও নোংরা হয়’।
ভবনের মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ জসীম বলেন, ‘অসহায় রোগীদের দালালদের খপ্পর থেকে বাঁচাতেই ফ্ল্যাট মালিকরা এই নোটিস দিয়েছেন। আমাদের আশেপাশে তো অনেক বড় বড় হাসপাতাল আছে। এখানে অনেক রোগী আসে যাদের; লংটার্ম হাসপাতালে থাকতে হয়। তারাই কম খরচের আশায় দালালদের খপ্পরে পড়ে বাসা ভাড়া নেয়’। নিজেদের নোটিসের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে জসীম উদ্দিন আরও বলেন, ‘একজনকে দেখিয়ে দালালরা বাসা ভাড়া নেয় ৩০ হাজার টাকায়। পরে সেখানে আরও পাঁচজন রোগী তোলে। তাহলে, প্রতি রোগীর ভাড়া মাসে পাঁচ হাজার টাকা হয়ে যায়। আর, হাসপাতালে তো রোগীরা ডাক্তারদের অবজারভেশনে থাকে। এখানে তো কোনো নজরদারিই নেই’। কোনো পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলেও ভবনটিতে বাসা ভাড়া পেতে পারেন জানিয়ে জসীম বলেন, ‘ফ্যামিলি মেম্বাররা তো অসুস্থ হতেই পারে। তাদের তো বাসা ভাড়া দিতে সমস্যা নাই’।