রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাসে নিরাপত্তা ও সুবিধা বেশি

19

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃটিশ শাসকদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া রেল ক্রসিংগুলো দীর্ঘদিন ধরে অনিরাপদ ও দুর্ঘটনার পাশাপাশি যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় তিনি সব জেলা শহরের রেল ক্রসিংগুলোতে পর্যায়ক্রমে ওভারপাস নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনাকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে তাতে নিরাপত্তা ও বহুমুখী সুবিধা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন। তবে ইতিমধ্যে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সুখকর না হওয়ায় অনেকের মধ্যে এক ধরনের হতাশাও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ঘটনা রোধ ও যানজটের দুর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে সরকার জামালপুর শহরের প্রধান সড়কের রেলগেট পাড় এলাকায় ওভারপাস নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। ৫৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেখানে সাতশ’ ৮০ মিটার ওভারপাসসহ দুই পাশে পাকা সড়ক নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বছরের ১৯ ফেব্রæয়ারি তমা কনস্ট্রাকশন, মেসার্স জামিল ইকবাল ও মেসার্স মইন উদ্দিন বাঁশি যৌথভাবে কাজটি শুরু করে। ২০২০ সালের জুনে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায় নি। ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পের কাজে ধীরগতি অব্যাহত থাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২৮ জুন অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ওভারপাস নির্মাণ সংক্রান্ত সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ওই একনেক সভাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব শহরে রেল ক্রসিংয়ের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ তদারক করছে। সড়ক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলে মনে করেন। তিনি বলেন, রেল ক্রসিংকেন্দ্রিক দুর্ঘটনা ও যানজটের দুর্ভোগ নিরসনে ওভারপাস কার্যকরী হতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট সমীক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রয়োজন ও সুফল বিবেচনায় নিয়ে এসব ওভারপাস নির্মাণ করতে হবে। আমাদের রেল ক্রসিংয়ের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। প্রায়ই আমরা রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও যানজটের সচিত্র সংবাদ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখি। ওভারপাস হলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি যেমন রোধ করা যাবে, তেমনি যানজটের সমস্যাও দূরীভ‚ত হবে। অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)- এর পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহমান ভূঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ নিয়ে আলোচনা নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আলাপ-আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের খবর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনে আসছি। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলোর আশানুরূপ বাস্তবায়ন এখনও মানুষের চোখে পড়ে নি। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে রেল ক্রসিংয়ের জায়গায় ওভারপাস নির্মিত হলে তুলনামূলকভাবে তা থেকে নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে। এগুলো অন্য ব্যবস্থার জন্য অনেক বেশি জননিরাপত্তামূলক ও জনবান্ধব হবে। তবে ইতিপূর্বে এ ধরনের যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এটা হতাশাজনক।
রেলওয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ছোটখাটগুলো বাদে দশটিরও বেশি ব্যস্ততম রেল ক্রসিং রয়েছে। নগরীর কদমতলী, মাদারবাড়ি, সল্টগোলা, ওয়ার্লেস, পাহাড়তলী, খুলশী, বিমানবন্দর, ষোলশহর, মুরাদপুর ও কালুরঘাট এলাকায় এসব ক্রসিংয়ের অবস্থান। দেওয়ানহাটে রেল লাইনের ওপর দিয়ে নির্মিত একমাত্র ওভারব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে ব্যবহৃত হয়ে আসলেও কোথাও রেল ক্রসিংয়ে এখনও পর্যন্ত ওভারপাস নির্মাণ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, দেশে সবমিলিয়ে আড়াই হাজারের মত রেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার চারশ’টি রেলওয়ের অধীনে। বাকিগুলো স্থানীয় সরকার এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকে ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এক হাজার চারশ’ রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগকেও অবশিষ্ট ক্রসিংগুলোতে ওভারপাস নির্মাণের জন্য সুপারিশ করা হয়। এরপর কোনও পক্ষ থেকেই ওভারপাস নির্মাণের কার্যক্রম আর বেশিদূর এগোয় নি।